শীতলক্ষ্যায় কার্গো জাহাজের ধাক্কায় যাত্রীবাহী লঞ্চ ডুবিতে ৩৪ জনের মৃত্যুর ঘটনায় বিআইডব্লিউটিএ’র নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দর কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) দিবাগত রাতে নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়। বিআউডব্লিউটি’র নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দর কর্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক বাবু লাল বৈদ্য বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। তবে ঘটনার চতুর্থ দিনেও আটক হয়নি ঘাতক কার্গো জাহাজটি।
এদিকে জানা গেছে, পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে যাত্রীবাহী লঞ্চটি ডুবিয়ে দেওয়া ‘এসকে লজিস্টিকস’ কার্গো জাহাজটির মালিক বাগেরহাট-২ আসনের আওয়ামী লীগের সাংসদ শেখ সারহান নাসের তন্ময়।
লঞ্চডুবিতে ৩৪ জনের প্রাণহানির ঘটনায় বিআইডব্লিউটিএ’র মামলায় হত্যার উদ্দেশে বেপরোয়া গতিতে পণ্যবাহী জাহাজ চালিয়ে লঞ্চটি ডুবিয়ে ৩৪ জনের প্রাণহানি ঘটানো হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে আসামির তালিকায় কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা। তিনি বলেন, বিআইডবিøউটিএ’র কর্মকর্তা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। হত্যার উদ্দেশে বেপরোয়া গতিতে জাহাজ চালিয়ে হত্যা সংঘটিত করা হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ রয়েছে। দোষীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান তিনি।
মামলার বাদী বাবু লাল বৈদ্য জানান, পেনাল কোড ২৮০, ৩০৪, ৩৩৭, ৩৩৮, ৪২৭, ৪৩৭ ধারাসহ ইনল্যান্ড শিপিং অর্ডিন্যান্স ১৯৭৬ এর ৭০ ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। হত্যার উদ্দেশে ও বেপরোয়া গতিতে নৌযান চালিয়ে ৩৪ জনকে হত্যা সংঘটিত করার অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে আসামি হিসেবে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি।
রোববার সন্ধ্যা পাঁচটা ছাপ্পান্ন মিনিটে মুন্সিগঞ্জের উদ্দেশে নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনাল ছেড়ে যায় এম এল সাবিত আল হাসান নামে যাত্রীবাহী লঞ্চটি। তখনও কালবৈশাখীর ঝড় শুরু হয়নি। লঞ্চটির ধারণক্ষমতা ৬৮ জন হলেও সেদিন তারও কম যাত্রী নিয়ে রওয়ানা হয়েছিল বলে সংবাদকে জানান লঞ্চ মালিক সমিতির সহ-সভাপতি মনিরুজ্জামান রাজা। অনুমানিক সোয়া ছয়টার দিকে মদনগঞ্জ-সৈয়দপুর এলাকায় শীতলক্ষ্যায় নির্মাণাধীন সেতুর অদূরে এসকেএল-৩ (রেজিস্ট্রেশন নং: ০১-২৬৪৩) নামে একটি কার্গো জাহাজ পেছন থেকে ধাক্কা দেয় যাত্রীবাহী লঞ্চটিকে। সে সময় প্রত্যক্ষদর্শীদের ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, লঞ্চটিকে ঠেলে অন্তত ২০০ মিটার দূরে নিয়ে গিয়ে ডুবিয়ে দেয় কার্গোজাহাজটি। এর মধ্যেই নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন কয়েকজন। প্রত্যক্ষদর্শী ও জেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্যমতে, রাতেই অন্তত ৩০ যাত্রী সাঁতরে জীবিত অবস্থায় নদী পার হতে সক্ষম হন। পাওয়া যায় পাঁচ নারীর লাশ। নিখোঁজ ছিলেন আরও অনেকে। এরপর দুইদিন উদ্ধার অভিযান চালিয়ে আরও ২৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহতদের মধ্যে ৭ শিশু, ১৩ পুরুষ ও ১৪ নারী।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন