শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

মানসিক চাপ থেকে কিভাবে মুক্ত হবেন

আশ্ফা খানম হেলেন | প্রকাশের সময় : ৮ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০৪ এএম

(মঙ্গবলবার প্রকাশিতের পর)
প্রতিদিন স্কুলের অফিসে প্রবেশ করে ধুলামাখা চেয়ার, আসবাবপত্র দেখে মেজাজ খারাপ হয়। ফলে স্কুলের আয়ার সাথে রাগারাগি হয়। কারণ, সে তার দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করে না। কিন্তু প্রতিদিন সকালে এই মানসিকচাপ থেকে নিজেকে মুক্ত করার জন্য যদি নিজেই একটি ন্যাকরা এনে নিজেই নিজের জিনিস মুছি তাহলে এ মানসিকচাপ থেকে অনায়াসে মুক্তি পাওয়া যাবে, একে বলে পূর্ব প্রস্তুতি। তাহলে এখানে আমরা দেখতে পাই, আমাদের কিছু বাড়তি শ্রমের বিনিময়ে মানসিকচাপ থেকে আমরা নিজেদের পরিত্রাণ দিতে পারি।

তিনি আরো বলেন, ‘প্রত্যেক মানুষের সমস্যাগুলো ভিন্ন ভিন্ন। কেউ তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, কেউ পারে না। এ কারণে ব্যক্তির নিজেকে জানতে হবে, know thyself. কারণ, একজন ব্যক্তি নিজের স্বভাবগত বৈশিষ্ট্যগুলো নিজে জানলে তা’ কীভাবে বিপদের সময় নিয়ন্ত্রণ করতে হবে তা সে নিজেই বের করতে পারবে। আসলে নিজের সমস্যার সমাধানের পথ নিজেকেই বের করতে হবে। নিজেকে নিজেরই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’ যেমন: আমাদের কোনো বিষয় বা কারণে বেশি রাগ হলে আমরা যদি সাথে সাথে ঘটনাস্থল পরিত্যাগ করি তাহলে তদমুহূর্তে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। বালখীর উপরোক্ত বিভিন্ন গবেষণালব্ধ তত্ত¡গুলো পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই, তিনি কুরআন-হাদীসের আলোকে সমস্যাগুলোর উত্তরণের পথ দেখিয়েছেন।

আমরা যদি পবিত্র কুরআনের দিকে ফিরে তাকাই, তাহলে দেখতে পাবো, আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা বিপদে ধৈর্য ধারণ করা বা সবর করার কথা বলেছেন। শুধু তাই নয় তিনি স্বয়ং রাসূল (সা.) এর জীবদ্দশায় তাঁর হতাশা ও চরম বিপদের সময় তাঁকে সান্ত¡নার ও আশার বাণী দিয়ে ওহী নাযিল করেছেন, যা বিপদের সময় আমাদের সবার চলার পথের পাথেয়। যখন মুহাম্মদ (সা.) তাঁর পুত্র ইবরাহিমের শোকে কাতর তখন নির্দয় কাফিররা তাঁর প্রতি সমবেদনা জানানো তো দূরে থাক তাঁকে লেজকাটা, উত্তরাধিকার শূন্য বলে উপহাস করছিল। এমনই সময় আল্লাহ সুবহানুহু তায়ালা সূরা কাউছার নাযিল করে তাঁকে জান্নাতে কাউছারের মালিকানার ঘোষণা দিয়ে সম্মানিত করেন।

আবার যখন মক্কাজীবনের শুরুতে সূরা আলাকের প্রথম কয়েকটি আয়াত নাযিল হবার পর ওহী আসা দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকে, তখন তিনি হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে পড়েন। আর তখনই আল্লাহতায়ালা সূরা দে¦াহা, সূরা আলাম নাশরাহর মতো সূরাগুলোর আয়াত নাযিল করেন। সূরা দে¦াহায় আল্লাহ তায়ালা দিনের পরে রাতের অন্ধকারের কথা বলেন এবং তিনি যে নবীর প্রতি অসন্তুষ্ট নন, তা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেন। আল্লাহতায়ালা মুহাম্মদ (সা.)কে পরবর্তীতে সন্তুষ্ট হয়ে অনেক ভালো কিছু দেবার প্রতিশ্রুতিও দেন। এমন হতাশার সময় আল্লাহ নবীর শৈশবের এতিম অবস্থা থেকে কীভাবে তাঁকে আশ্রয় দেন , দিশাহীন অবস্থা থেকে সঠিকপথ দেখান, নিঃস্ব অবস্থা থেকে অভাবমুক্ত করেন, তা স্মরণ করিয়ে দেন। এভাবে মুহাম্মদ (সা.) এর হতাশা ও দুঃসময়ে আল্লাহতায়ালা তাঁর সুসময়েও আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে তাঁকে সান্ত¦না দেন। সেই সাথে মানবজাতিকে হতাশার সময় জীবনের সুসময় বা আল্লাহপ্রদত্ত নিয়ামতের কথা স্মরণ করে হতাশা দূর করার কৌশল শিক্ষা দিয়েছেন। বালখী তাঁর গবেষণায় এ কৌশলই শিক্ষা দেন।

এছাড়াও কুরআনের বিভিন্ন সূরার আয়াতে আমরা দেখতে পাই, আল্লাহতায়ালা বলে দিয়েছেন, তিনি আমাদেরকে ভয়, ক্ষুধার কষ্ট, সম্পদের ক্ষতি, সন্তান, সম্পদ প্রভৃতি দিয়ে পরীক্ষা করবেন। আমরা ঈমান এনেছি, এটা শুধু মুখে বললেই আমাদের ছেড়ে দেয়া হবে না। প্রত্যেককে জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন প্রকার পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে। এ পরীক্ষাগুলোতে আমরা ধৈর্য ও সবরের মাধ্যমে কীভাবে উত্তীর্ণ হবো সে পন্থাগুলোও আল্লাহ পৃথিবীতে নবী রাসূলের জীবনের ঘটনা দিয়ে শিখিয়ে দিয়েছেন। যেমন: আদম (আ.)কে নিষিদ্ধ জিনিস দিয়ে পরীক্ষা করেছেন। নূহ (আ.)কে তাঁর স্ত্রী সন্তান দিয়ে পরীক্ষা করেছেন। ইবরাহীম (আ.)কে ঈমানের পরীক্ষা ও সন্তান কুরবানি দেবার মতো পরীক্ষা দিতে হয়। হযরত আইয়ূব (আ.)কে রোগ দিয়ে, নিঃসন্তান ও সহায় সম্বলহীন করে পরীক্ষা করেন। হযরত ইউসূফ (আ.)কে মাতৃ-পিতৃ ও ভ্রাতৃহীন করে নারী প্রেমের ফাঁদ দিয়ে পরীক্ষা করেন। কুরআন পর্যালোচনা করে আমরা যদি নবীদের জীবনের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিই, তাহলে দেখতে পাবো আমাদের জীবনেরও বিভিন্নপর্যায়ে আমরা এরূপ বিভিন্ন পরীক্ষার সম্মুখীন হচ্ছি, যা মোকাবেলা করার জন্য আমাদের কুরআন-হাদীসের শিক্ষা অনুসরণ করা উচিত।

রাসূল (সা.) বলেন, রাগের সময় দাঁড়িয়ে থাকলে বসতে, বসা অবস্থায় থাকলে শুয়ে পড়তে কিংবা অযু করতে, যাতে শরীর ও মন উভয় স্থিত অবস্থায় আসে। আর স্থিতিশীল অবস্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। মনে রাখতে হবে, এ জীবনকে আমরা যতই স্ট্রেসমুক্ত করতে চাই না কেন আল্লাহ স্বয়ং কুরআনে ঘোষণা দিয়েছেন, এ দুনিয়া পরীক্ষাক্ষেত্র। প্রতিটি স্ট্রেসই এক এক ধরনের পরীক্ষা এবং এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার কৌশলগুলোও আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা পবিত্র কুরআনে শিক্ষা দিয়েছেন ও নবী রাসূলরা তাদের জীবনে তা বাস্তবায়ন করে দেখিয়ে গেছেন। এই পরীক্ষা ক্ষেত্রে উত্তীর্ণ হতে পারলে পরিশেষে পরকাল ও আখেরাতে সম্পূর্ণ স্ট্রেসমুক্ত সুখী নিশ্চিন্ত অনন্তকালের জীবন পুরস্কার হিসেবে দেবার ঘোষণা দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহতায়ালা। (সমাপ্ত)
লেখক: নারী উন্নয়ন কর্মী, কলামিস্ট, শিক্ষাবিদ ও প্রিন্সিপাল, চিটাগাং ভিক্টোরী ন্যাশনাল স্কুল (সিভিএনএস)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন