সরকারি অব্যবস্থাপনায় লকডাউন বা নিষেধাজ্ঞা কোনটাই মাঠ পর্যায়ে কার্যকর হচ্ছে না বলে মনে করে বিএনপি। দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, সরকারের পরস্পরবিরোধী পদক্ষেপে মানুষ করোনা ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। সর্বত্রই লেজেগোবরে অবস্থা। নানা দুর্ভোগে জনগণ। সরকারের যারা এধরণের সিদ্ধান্ত দিচ্ছে, তাদেরকে বেতন-ভাতা কিংবা সুযোগ সুবিধা নিয়ে চিন্তা করতে হয় না, কিন্তু তাদের সিদ্ধান্তে জনগণকে পড়তে হয় বিপাকে। আয়-রোজগার, সংসার চালানো কিংবা ভবিষ্যতের চিন্তায় জনগণ আজ দিশেহারা। প্রস্তুতিহীন লকডাউন বা নিষেধাজ্ঞা কোনটাই যে কার্যকর হচ্ছে না, তার প্রমাণ-সড়ক মহাসড়কে দীর্ঘ যানযট। শহরের বিভিন্ন স্থানে পরিবহনের জন্য মানুষের দীর্ঘ অপেক্ষা। মূলতঃ সবকিছুই চলছে আগের মতোই। গতকাল বুধবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
এমরান সালেহ বলেন, করোনার ২য় ঢেউ মোকাবেলায় গত বছরের মতোই সরকারের পদক্ষেপ সমন্বয়হীন, অপরিকল্পিত, অদূরদর্শী ও কান্ডজ্ঞানহীন। এবার সরকার অনেক সময় হাতে পেলেও পূর্ব প্রস্তুতি না থাকায় গতবারের মতোই হ-য-ব-র-ল অবস্থা। হাসপাতালগুলোতে অবস্থা বেগতিক। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা শহরে সরকারী-বেসরকারী হাসপাতাল করোনা রোগী দ্বারা পরিপূর্ণ। কোন সিট খালি নেই। নেই পর্যাপ্ত আইসিইউ, ভেন্টিলেটর ও অক্সিজেন। করোনা আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসার জন্য এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটতে ছুটতে পথিমধ্যে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন। এর দায়-দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে। সরকার শুধু বাগাড়ম্বরেই ব্যস্ত। জনগণ গত বছর করোনা মোকাবেলায় সরকারের দুর্নীতি, লুটপাট ও অব্যবস্থাপনার কথা ভুলে যায়নি।
লকডাউন নাকি নিষেধাজ্ঞা সরকারের মধ্যেই দ্বিধাগ্রস্ত মন্তব্য করে তিনি বলেন, করোনা মোকাবেলায় সরকার হঠাৎ করে গত ৫ এপ্রিল থেকে ৭ দিনের জন্য বাংলাদেশে লকডাউন ঘোষনা দেয়। এমনিতে সরকারের ভ্রান্তনীতির ফলে জনগণের আয়-রোজগার সংকুচিত হয়ে গেছে। সরকারি দলের লোকজনদের সিন্ডিকেটের ফলে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রবমূল্য আকাশচুম্বী। এসব কারণে জনগণ দিশেহারা। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের এই আকস্মিক ঘোষনায় নি¤œ আয়ের মানুষসহ সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ বিপাকে পড়ে। সরকারের মন্ত্রীরা লকডাউন বললেও উচ্চ পদস্থ সরকারী কর্মকর্তারা বলছেন-এটি লকডাউন নয়, কিছু বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। লকডাউন নিয়ে সরকারের মধ্যে দুই রকম বক্তব্যে চরম সমন্বয়হীনতারই প্রমাণ মেলে। কোন কোন ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও দ্বিধাগ্রস্ত, যার ফলে মাঠ পর্যায়ে লকডাউন বা নিষেধাজ্ঞা যেটিই বলা হোক না কেন তা কার্যকর হচ্ছে না। দেশব্যাপী বিক্ষোভ করছে ব্যবসায়ী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, হকার, দোকান কর্মচারীসহ সাধারণ মানুষ। এ বিক্ষোভ প্রশমিত করতে সরকার আলাপ-আলোচনার পরিবর্তে দমন-নিপীড়ণের পথ বেছে নিয়েছে।
প্রিন্স বলেন, একদিকে সরকার বলছে-লকডাউন/নিষেধাজ্ঞায় মিল-কলকারখানা, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরী খোলা থাকবে এবং গণপরিবহন, মার্কেট, শপিং মল বন্ধ থাকবে। আবার এর দু’দিন পর সরকার বলছে-শুধু সিটি কর্পোরেশনের ভেতরে গণপরিবহন চলবে, কিন্তু দুরপাল্লা ও উপজেলা থেকে জেলা শহরে গণপরিবহন চলবে না। তাহলে প্রশ্ন-সরকারের ঘোষনানুযায়ী চালু থাকা মিল-কারখানায় শ্রমিক-কর্মচারীরা কিভাবে যাবেন? তাছাড়া সেখানে কি সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা ও স্বাস্থবিধি মেনে কাজ করা সম্ভব? শ্রমিক-কর্মচারীদের কি করোনা ঝুঁকিতে পড়ার সম্ভাবনা নেই? অফিস-আদালতে ৫০ শতাংশ লোকবল দিয়ে কাজ করার নির্দেশনা কি আদৌ বাস্তবায়িত হচ্ছে?
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন