৮. সন্তানের বন্ধুবান্ধবের প্রতি নজর রাখা। অর্থাৎ কেমন বন্ধু গ্রহণ করছে সে! ভালো না মন্দ! সে কাদের সঙ্গে ওঠাবসা করছে! তাদের কারণে নিজ সন্তানের আমল-আখলাক, চরিত্র নষ্ট হচ্ছে কিনা! তাদের কারণে সন্তানের আকিদা, আখেরাত ও ভবিষ্যত নষ্ট হচ্ছে কিনা! সন্তান ফোনে কাদের সঙ্গে কথা বলে! কোন ধরনের পার্টিতে অংশগ্রহণ করে! এ বিষয়ে কড়া খবর রাখতে হবে। কারণ সন্তান সঙ্গ দোষেই বেশি খারাপ হয়। চাই বন্ধুবান্ধবের সঙ্গ হোক, মোবাইল, বাজে বই বা যেকোনো প্রকার সঙ্গই হোক। বছরের পর বছর মেহনতের ফল অসৎসঙ্গের কারণে মুহূর্তেই ধুলিস্যাৎ হয়ে যায়। এজন্য সতর্কতার বিকল্প নেই।
৯. অনেক সময় নানান কারণে মা-বাবার মাঝে মনোমালিন্য বা কথা কাটাকাটি কিংবা ঝগড়াঝাটি হয়। মানুষ হিসেবে এটা স্বাভাবিকও বটে। কিন্তু তখন সন্তান মায়ের কাছে থাকলে তিনি বাবার বিরুদ্ধে তার জেহেন খারাপ করার চেষ্টা করেন। আবার কখনও সন্তান বাবার কাছে থাকলে তিনি মায়ের বিরুদ্ধে তার জেহেন খারাপ করার চেষ্টা করেন। অর্থাৎ প্রত্যেকেই তখন সন্তানকে নিজের পক্ষে রাখার চেষ্টা করেন। একজনের অনুপস্থিতিতে অন্যজন সন্তানের কাছে অপরের দোষচর্চা করেন। একে অন্যের দুর্বলতা সন্তানকে বলে তাকে তার বিরুদ্ধে উস্কানোর চেষ্টা করেন। এ সময় সন্তান মা ও বাবা উভয়ের শত্রু হয়ে যায়। অথচ তারা মনে করেন, হয়তো সন্তান আমার পক্ষে এবং আমার প্রতি সেকেন্ডের দরদি। কিন্তু নাহ। সন্তানের তরবিয়তের স্বার্থে উভয়কে ধৈর্যধারণ করা উচিত। দুজনই দুজনকে ছাড় দেওয়া উচিত। পরস্পর মনের কষ্টগুলো বুকে চেপে রাখা উচিত। প্রয়োজনে অন্য সময় পরামর্শক্রমে নিজেদের সমাধান করা উচিত। প্রত্যেকে এ আশায় বিলম্ব করা অনুচিত, সে আগে ভুল স্বীকার করবে, অপরাধ তো আমার না। তবুও সন্তানের সামনে এগুলো প্রকাশ না করা। অন্যথায় সন্তানের দুনিয়া ও আখেরাত নষ্ট হবে। কারণ ছোটো বাচ্চার ওপর যেকোনো জিনিসের প্রভাব দ্রুত পড়ে। বিশেষত খারাপির আসর।
১০. সন্তানের সঙ্গে পিতামাতার সম্পর্ক। একজন সন্তানের জন্য পৃথিবীর বুকে পিতামাতার চেয়ে বড়ো বন্ধু ও আপন আর কেউ হতে পারে না। অন্যদিকে তার সবচেয়ে বড়ো অভিভাবক এবং তার মুরব্বি ও শেষ ভরসা একমাত্র পিতামাতা। তাই সন্তানের সঙ্গে পিতামাতার সম্পর্ক এতোটা কঠোর ও দূরত্বের হবে না, যার কারণে সে তার বিপদের সময় তার কথাগুলো পিতামাতার কাছে মন খুলে বলতে দ্বিধা করে। অন্যদিকে সন্তানের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক এতোটা অবাধ ও ফ্রি হবে না, যার কারণে পরবর্তীতে সন্তান পিতামাতাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে মানতে সংকোচ করে। সুতরাং পিতামাতাকে সন্তানের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের এই উভয় দিক লক্ষ্য রেখে ব্যবহার এবং আচরণ বজায় রাখতে হবে।
এ ক্ষেত্রে অনেকেই আছেন, যারা সন্তানের প্রতি অতি ভালোবাসা ও আবেগে সন্তানকে মাত্রাতিরিক্ত ভালোবাসা দেন। তাদের অন্যায় আবদার পর্যন্ত রক্ষা করেন। ফলে একপর্যায়ে সন্তান আহ্লাদী হয়ে যায়। তাকে কথা মানানো এবং মানুষ করাই কঠিন হয়ে পড়ে। আবার অনেককে দেখা যায়, সন্তানকে এতো বেশি কঠোর শাসন ও প্রেসারে রাখেন, বাবা-মাকে সে পর ভাবতে শুরু করে। বাবা-মায়ের প্রতি তার ভরসা অন্তর থেকে সরে যায়। তাই সে আর কখনও তাদেরকে মানতে পারে না। বরং তাদেরকে বিরোধী ভাবতে শুরু করে। এজন্য অতি আদরও নয়, অতি শাসনও নয়; বরং আদর ও শাসন উভয়টি তার মনের পরিস্থিতি বুঝে চালিয়ে যাওয়া উচিত। যেনো তার মানসিকতায় পিতামাতার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ এবং তাদেরকে আপন ভাবা কাজ করে। আবার কিছু অতি ভালো মানুষি বাবা-মা অন্যের সামনে নিজের সন্তানকে ছোট করেন। বোঝাতে চান, সন্তানের ব্যাপারে তিনি নমনীয় নন, বরং কঠোর। অন্যায়ের ক্ষেত্রে সন্তানদের ছাড় দেন না। বাবা-মা হিসেবে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও নিজের ভারত্ব রক্ষার্থে বিষয়টি যদিও সত্য ও সঠিক, কিন্তু সন্তান মানুষ হিসেবে তার মানসিকতার মাঝে যে বিষয়টি কাজ করে, সেটিও সত্য- সন্তান যে পরিবেশে বসবাস করে, সেই পরিবেশ এবং সমাজে তারও নিজস্ব একটা ভারত্ব রয়েছে। যখনই বাবা-মায়ের মাধ্যমে সন্তানের সেই ভারত্ব নষ্ট হয়, তখন তার মন থেকে বাবা-মা পড়ে যান এবং বাবা-মায়ের প্রতি তার ভরসা নষ্ট হয়ে যায়। এজন্য সন্তানকে যদি শাসন করতেই হয়, তাহলে অন্যের সামনে সন্তানের বিরোধী হয়ে ও মানুষের সামনে তাকে ছোটো করে শাসন করার কোনো মানে নেই। কারণ এ ধরনের শাসনে সন্তান পরিবর্তনের বিপরীতে খারাপ হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। এর বিপরীতে সন্তানকে সান্ত¦না দেওয়া এবং তার প্রয়োজনে তাকে শাসন করা ও পরে তাকে একান্তে ডেকে বিষয়টি পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দেওয়া। যেনো তার মনে বাবা-মায়ের প্রতি কোনো সন্দেহ না থেকে যায়। এতে মনের বোঝাপড়া পরিষ্কার হয়ে যায়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন