পেপটিক আলসার আমাদের দেশে আজকাল ঘরে ঘরে পাওয়া যায় অতি পরিচিত এক রোগ। পাকস্থলী থেকে নিঃসৃত হয় হাইড্রোক্লোরিক এসিড এবং পেপসিন। এদের ক্রিয়ার বিভিন্ন অস্বাভাবিকতার ফলে পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত বা ঘা সৃষ্টি হয়। একেই পেপটিক আলসার বলে।
পেপটিক আলসার সাধারণত খাদ্যনালীর নিচের অংশ, পাকস্থলি, ডিউডেনাম, ক্ষুদ্রান্ত্র এবং বৃহদান্ত্রের বিভিন্ন জায়গায় হতে পারে। তবে সবচেয়ে বেশি হয় পাকস্থলী ও ডিউডেনামে। আলসার পাকস্থলীতে হলে তাকে গ্যাস্ট্রিক আলসার এবং ডিউডেনামে হলে তাকে ডিউডেনাল আলসার বলে। ডিউডেনাল আলসারই আমাদের দেশে বেশি হয়ে থাকে।
হেলিকোবেকটার পাইলোরি ব্যাকটেরিয়া দিয়েও পেপটিক আলসার হয়। খাবার বা পানির মাধ্যমে এই ব্যাকটেরিয়া আমাদের পেটে প্রবেশ করে। তারপর বিভিন্নভাবে আলসার তৈরি করে। নিয়মিত ব্যথার ওষুধ খেলে আলসারের সম্ভাবনা বাড়ে। অন্যান্য কিছু ওষুধের কারণেও আলসার দেখা দেয়। মদপান করলেও বাড়ে আলসারের সম্ভাবনা। বিভিন্ন অসুখের কারণেও হতে পারে পেপটিক আলসার।
গ্যাস্ট্রিক আলসার হলে খাবার পর ব্যথা হয় এবং বুক জ্বালাপোড়া ও টক ঢেঁকুর ওঠতে থাকে। বমিভাব, বমি থাকতে পারে। খাবারে অরুচি হয় এবং ভাজা পোড়া খেলে আরও অস্বস্থি লাগা বেড়ে যায়। জটিলতা হিসেবে রক্ত পায়খানা হতে পারে এবং ওজন কমে যায়।
ডিউডেনাল আলসারে পেট খালি থাকলে ব্যথা বেশি হয়। খাবার খেলে এই ব্যথা কমে যায়। তাই এই আলসারে খাওয়া ভাল হয় ওজন কমেনা। তবে আলসার থেকে রক্ত পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
ধূমপান করলে আলসার হতে পারে। এই আলসারের ঘা সহজে শুকায় না। রোগী যদি ধূমপান ত্যাগ না করে তবে আলসার ভাল হবার পর আবার হতে পারে। দেখা দিতে পারে নানা রকম সমস্যা। ধূমপানের ফলে গ্যাস্ট্রিক আলসার বেশি হয়। তবে ডিউডেনামেও হতে পারে। ধূমপান থেকে যে আলসার হয় সেখান থেকে হতে পারে ক্যান্সারসহ নানা জটিলতা। তাই ধূমপান বন্ধ করতেই হবে।
ধূমপান মৃত্যু ঘটায়। বিষয়টি জেনেও মানুষ ধূমপান করছে। নিজ হাতে নিজেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে । জাতিসংঘের মাদকবিষয়ক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধূমপানের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ মারা যায়। ধূমপান করলে জটিল ক্যান্সার এবং হৃদরোগ সহ দেখা দিতে পারে নানা রকম রোগ। হতে পারে পেপটিক আলসার এবং সেখান থেকে হতে পারে নানা জটিলতা । তাই ধূমপান বন্ধ করতে নিজেকেই উদ্যোগি হতে হবে।
ডাঃ মোঃ ফজলুল কবির পাভেল
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন