শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গারা তাদের নিজস্ব ভাষায় শুনবে পবিত্র কোরআনের অডিও-ভিডিও!

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৯ এপ্রিল, ২০২১, ৫:৪১ পিএম

এই প্রথম বারের মতো নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠী পবিত্র কোরআনের অডিও-ভিডিও অনুবাদ তাদের নিজস্ব ভাষায় শুনতে পারবে অনলাইনে। কিছুদিনের মধ্যে অর্থাৎ মধ্য এপ্রিলে বা আসন্ন রমজান মাসের শুরুতে পবিত্র কোরআনের কিছু অংশের অনুবাদ প্রকাশ করা হতে পারে। সউদী আরবের কিং ফাহাদ কোরআন কমপ্লেক্সের ইংরেজি ভার্সনকে ভিত্তি করে তৈরি করা এবং নুর মিডিয়া কোম্পানির সার্বিক সহায়তায় পরিচালিত অনুবাদ প্রকল্পের তত্ত্বাবধান করছে মালয়েশিয়ান ভিত্তিক রোহিঙ্গা সংগঠন দাকওয়াহ কর্নার বুকস্টোর (ডিসিবি)। টিআরটি ওয়ার্ল্ডের প্রতিবেদনটি ইনকিলাব পাঠকদের জন্য তুলে ধরেছেন মোহাম্মদ আবদুল অদুদ।
জানা যায়, মসজিদে নববীর সাবেক ইমাম শায়খ মুহাম্মাদ আইউবের পবিত্র কোরআনের আরবি তেলাওয়াত অডিও ভার্সনে যুক্ত করা হয়। ১৯৫০ সালে মক্কা নগরীর একটি রোহিঙ্গা পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তিনি পবিত্র মসজিদে নববির ইমাম হিসেবে দীর্ঘ ২৬ বছর যাবত দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালে ১৬ এপ্রিল তিনি মারা যান। রোহিঙ্গা ভাষায় অনুবাদের কাজটি সুসম্পন্ন করেন কুতুব শাহ। তিনি মিয়ানমারে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। কিন্তু সামরিক সরকার তাঁর পড়াশোনা বন্ধ করে দেয়। বর্তমানে তিনি মালয়েশিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে কম্পারেটিভ রিলিজিয়ন বিষয়ে পিএইচডি গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন।

উল্লেখ্য, বিশ্বের অনেক ভাষায় পবিত্র কোরআনের অনুবাদ সম্পন্ন হয়েছে। তদুপরি কোরআনের অনুবাদ বিশেষত বিভিন্ন ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও প্রয়োজনীয় টিকার উল্লেখ খুব সহজ বিষয় নয়। তাই সঠিক ও নির্ভুল অনুবাদের জন্য ইংরেজি, আরবি ও উর্দু অনুবাদের সহায়তা নেওয়া হয়। বর্তমান বিশ্বের প্রায় ১.৯ মিলিয়ন মানুষ রোহিঙ্গা ভাষা বুঝেন ও কথা বলেন। তবে কালের পরিক্রমায় লেখ্য রূপে ভাষাটির অক্ষর, শব্দ ও অর্থগত দিক থেকে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তাই অনেকে মনে করেন, সব কথা বুঝিয়ে মানসম্মত অনুবাদ করা বেশ দুঃসাধ্য কাজ। ১৯৮০ সালে বাংলাদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গা আলেম মাওলানা মুহাম্মদ হানিফ রোহিঙ্গা ভাষাকে একটি উন্নত ভাষায় রূপ দেন। ‘রোহিঙ্গা হানিফি’ নামে পরিচিত ভাষাটি সবার জন্য সহজবোধ্য করে তৈরি করেন তিনি।

জাতিসংঘের দেয়া তথ্য মতে, রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠী আধুনিক বিশ্বে সবচেয়ে নির্যাতিত-অধিকার বঞ্চিত সংখ্যালঘু জাতি হিসেবে পরিচিত। বিশাল সংখ্যক নারী ও শিশুসহ ৮ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গারা মানবেতর জীবন যাপন করছে। মিয়ানমারে রাখাইন অঙ্গরাজ্যে দীর্ঘদিন যাবত ধর্ষণ, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, বাড়ি-ঘর পোড়ানোসহ নির্যাতন বিষয়ে মানবাধিকার কর্মীরা অনেক প্রতিবেদন করেছেন। কয়েক দশক যাবত দেশটির বৌদ্ধ সরকার নিপীড়নের মাধ্যমে রোহিঙ্গা ভাষায় পাঠদান ও ধর্মীয় শিক্ষা নিষিদ্ধ করে। রোহিঙ্গা অধিকার কর্মী ও অনুবাদ প্রকল্পের সদস্য মুহাম্মাদ নুর বলেন, ‌একসময় রোহিঙ্গা ভাষায় আমরা লেখা ও পড়ার অনুমতি পেতাম না। এর জন্য আমাদেরকে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হতো বা জেল ভোগ করতে হতো। মায়ানমারের সামরিক জান্তা সরকারের কঠিন নির্যাতন ও নিপীড়নের কারণে বিভিন্ন সময় তারা নিজ মাতৃভূমি ত্যাগে বাধ্য হয়। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে আসা নিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ১১ লাখ ৩ হাজার ২৭২ জন।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা এ নির্যাতিত জনগোষ্ঠী আছেন উর্দু ও আরবি ভাষাসহ বিভিন্ন ভাষার মিশ্রণে বর্তমানে কথা বলেন। তবে নিজেদের ভাষায় পড়ার সুযোগ অনেকের হয়নি। কোরআনের অডিও-ভিডিও অনুবাদের মাধ্যমে রোহিঙ্গারা এ শূণ্যতা দূর করতে পারবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। মাতৃভাষা আধুনিকায়নে ইতিমধ্যে ‘রোহিঙ্গা হানিফি’-এর লিখ্য রূপকে ইউনিকোডে রূপান্তরে সহায়তা করছেন মুহাম্মাদ নুর। এর মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গারা খুব সহজেই নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে পারবে ডিজিটাল প্লাটফর্মে । গ্লোবাল সাদাকাহ ডটকম ও প্রকল্পের সদস্য জাহিদ মাতিন বলেন, ‘এটি অনেকটা প্রাথমিক কাজের মতো হলেও এটিই প্রথম পরিপূর্ণ ও সার্থক অনুবাদ। রোহিঙ্গা ভাষায় অনুবাদ অনেক কঠিন। কারণ, কালের পরিক্রমায় তা যথাযথ মানসম্মত হয়নি। তাছাড়া উর্দু ও ইংরেজিতে অনেক জ্ঞানী ব্যক্তি আছেন যারা অনেক কাজ করেছেন। কিন্তু রোহিঙ্গা ভাষায় তা করা হয়নি কখনো।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন