দেশে খাদ্য মজুদের পরিমাণ নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থার জন্য যথেষ্ট নয়। বর্তমানে দেশে যে পরিমাণ মজুদ আছে তা নিরাপদ খাদ্য মজুদের অর্ধেকেরও কম। এ অবস্থায় খাদ্য মজুদ নিরাপদ করতে সরকার দ্রæততম সময়ের খাদ্য আমদানির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আর এর আলোকে গত ২৫ মার্চ সরকার জি-টু-জি পদ্ধতিতে ভারত থেকে এক লাখ মেট্রিক টন নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল কেনার নতুন এক চুক্তি সাক্ষর করেছে। এ চালের আনুমানিক মূল্য ৩৬৮ কোটি টাকা।
জনসংখ্যা অনুপাতে বাংলাদেশের মতো দেশে নিরাপদ খাদ্যশস্য মজুদের পরিমাণ থাকার কথা চাল-গম মিলিয়ে ১১ লাখ টন। খাদ্য অধিদফতরের সর্বশেষ গত ৩১ মার্চ দৈনিক খাদ্যশস্য পরিস্থিতি প্রতিবেদন অনুসারে মজুদের পরিমাণ চাল ৪.১৪ লাখ মেট্রিক টন এবং গম ০.৭২ লাখ মেট্রিক টন। এই হিসাবে এখন খাদ্যশস্যের সর্বমোট মজুদ ৪.৮৬ লাখ মেট্রিক টন, যা কিনা নিরাপদ খাদ্য মজুদের অর্ধেকেরও কম। এ অবস্থায় রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে জি-টু-জি পদ্ধতিতে ভারতের সরকারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ফেডারেশন অব ফার্মার্স প্রকিউরমেন্ট প্রসেসিং অ্যান্ড রিটেইলিং কো-অপারেটিভ ইন্ডিয়া লিমিটেড (এনএসিওএফ) থেকে এক লাখ মেট্রিক টন নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল ৩৬৮ কোটি টাকায় কেনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন, ২০০৬-এর ৩৩ ধারার ৬৮ (১) ধারায় রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে বা বিপর্যয়কর কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য জনস্বার্থে সরকারগঠিত অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সুপারিশক্রমে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি অনুসরণ করে ক্রয় কার্য সম্পন্ন করার বিষয় উল্লেখ আছে। বর্তমান পর্যায়ে সরকারি সংরক্ষণাগারে খাদ্য মজুদ বৃদ্ধি করে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ সরকারি খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি অব্যাহত রেখে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর খাদ্যনিরাপত্তা বলয় সুসংহতকরণ এবং খাদ্যশস্যের বাজারমূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি অনুসরণ করে সরকার থেকে সরকার পর্যায়ে জরুরি ভিত্তিতে খাদ্যশস্য আমদানির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
সূত্র মতে, দ্রুততম সময়ে খাদ্যশস্য আমদানি এবং খাদ্যশস্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তা বাড়ানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন উৎস থেকে খাদ্যশস্য আমদানি করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ভারতের এনএসিওএফ-এর প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে দিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশনারের মাধ্যমে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধিদলকে ভার্চুয়াল সভায় অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়। আমন্ত্রণের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধিদের সাথে গত ২৫ মার্চ বাংলাদেশের জি-টু-জি পদ্ধতিতে ক্রয়বিষয়ক নেগোসিয়েশন ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় চালের চুক্তিনামার শর্তাদি এবং দাম নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। আলোচনা শেষে ভারত থেকে এক লাখ মেট্রিক টন নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানির লক্ষ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
এ চাল কেনার জন্য আনুমানিক ৩৬৭ কোটি ৯৬ লাখ ৮৪ হাজার টাকা লাগবে। এটি পিপিআর ২০০৮-এর বিধি ৭৬ (২)-এ উল্লেখিত মূল্য সীমার ঊর্ধ্বে হওয়ায় অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির নীতিগত অনুমোদন অত্যাবশ্যক। এ অবস্থায়, রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে পিপিএ ২০০৬-এর ধারা ৬৮ (১) ও ধারা ৩২ এবং পিপিআর ২০০৮-এর বিধি ৭৬ (২)-এ বর্ণিত ক্রয় পদ্ধতি প্রয়োগ করে জি-টু-জি’র আওতায় ভারত থেকে এক লাখ মেট্রিক টন (সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ ভাঙা দানাবিশিষ্ট) নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানির বিষয়টি গত ৭ এপ্রিল সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন দিয়েছে। এছাড়া আগে আমদানির অনুমোদন পাওয়া চালের মধ্যে ভারতের একটি বেসরকারি কোম্পানি থেকে প্রতি কেজি ৩৫ টাকা দরে ৫০ হাজার টন চাল কেনার প্রস্তাবও অনুমোদন দিয়েছে এ কমিটি।
ধান-চাল সংগ্রহে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সরকারের ব্যর্থতার জন্য দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ভয়াবহ হুমকিতে পড়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। সরকারের ধান-চাল সংগ্রহের বিষয়টি পুরোপুরি হতাশাজনক। গেল ২০২০ সালের বোরো মৌসুমে সাড়ে ১৯ লাখ মেট্রিক টন ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু বছর শেষে এই লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৫৪ ভাগ অর্জন করা সম্ভব হয়। বোরো সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে আট লাখ টন বোরো ধান, ১০ লাখ টন বোরো সিদ্ধ চাল ও দেড় লাখ টন বোরো আতপ চাল ছিল। প্রতি কেজি ২৬ টাকা দরে বোরো ধান, ৩৬ টাকা দরে বোরো সিদ্ধ চাল এবং ৩৫ টাকা দরে বোরো আতপ চাল কেনার দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু সেটি অর্জন করা সম্ভব হয়নি।
শুধু বোরো শস্যই নয়, একইভাবে আমন সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন করা সম্ভব হয়নি। চলতি আমন সংগ্রহ মৌসুমে ২.০৭ লাখ মেট্রিক টন ধান এবং ৬.৫০ লাখ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে গত মার্চ পর্যন্ত মাত্র ৭২ হাজার ২৫৬ মেট্রিক টন চাল ও ১২ হাজার ২০৯ মেট্রিক টন ধান সংগৃহীত হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন