ফরিদপুর সদর, ভাঙ্গা, নগরকান্দা, সালথা, মধুখালী, বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গা, চরভদ্রাসন, সদরপুর উপজেলাসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের অভ্যন্তরীণ নদ-নদী, জলাশয়, পুকুর, মাঠ-ঘাট, বিল-ঝিল ও বড় বড় দিঘি সব শুকিয়ে গেছে। কৃষি কাজে ব্যবহারের জন্য পানির প্রচন্ড অভাব দেখা দেয়ায় কৃষকের কান্নার শেষ নেই।
পদ্মা নদীর প্রধান শাখা নদী আড়িয়ালখা, কুমার, মধুমতি এবং ভুবনেশ^র। এই চারটি নদীর মধ্যে ভুবনেশ্বর ফরিদপুরের মানচিত্র থেকে একেবারেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। বৃহত্তর ফরিদপুর তথা রাজবাড়ী, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ জেলার চারপাশ ঘিরে আছে আড়িয়ালখাঁ, কুমার ও মধুমতি। ফারাক্কার প্রভাবে এবং পদ্মায় ব্যাপক ডুবোচর জাগায় পানির প্রবাহ কমে যাওয়া উল্লিখিত নদীর পানিও শুকিয়ে একেবারেই নিচের স্তরে নেমে এসেছে। উল্লিখিত তিনটি শাখা নদীরও রয়েছে অনেকগুলো উপ-শাখা। সেই নদীগুলো আজ একেবারেই পানিশূণ্য। শুকিয়ে গেছে সমস্ত খাল-বিল পুকুর ও জলাশয়। প্রচন্ড গরম ও তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় পানির উৎস স্থানগুলো পর্যায়ক্রমে পানি শূণ্য হয়ে পড়ছে। অকেজো হয়ে গেছে উপ-শহরের ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে নলকূপগুলো। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় উল্লিখিত উপজেলার সদরের নলকূপের মাধ্যমে কৃষকদের ধান খেতের সেচ ব্যবস্থাও প্রায় অচল হয়ে পড়ছে। পানি শূন্যতার কারণে মানুষের খাবার পানি ও গবাদি পশু, হাস মুরগীর জন্য বিশুদ্ধ পানি পাওয়াটাই দুষ্কর হয়ে পড়েছে। প্রচন্ড ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে জনজীবন ও গণস্বাস্থ্য।
এ বিষয়ে ফরিদপুর জেলার জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা প্রকৌশলী মো. শফিকুল আলম জানান, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এ জেলার বহু নলকূপের পানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফরিদপুর কৃষি বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক আশুতোষ কুমার বিশ্বাস জানান, জেলার অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানি শুকিয়ে যাবার কারণে যেসকল স্থানে পানির প্রচুর ব্যবহার হয় সেখানেই তীব্র পানি সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। ফলে পানির ব্যবহারের জন্য বাধ্যতামূলক ডিজেল চালিত পাম্প চালু রাখতে বাধ্য হচ্ছে কৃষকরা। এর ফলে বাড়ছে বায়ূ দূষণ। পাশাপাশি সেচ কাজে অতিরিক্ত পানি ব্যবহার হওয়ায় নলক‚পের পানির স্তরও কমে আসছে। কারণ ভূ-গর্ভস্থ থেকে অতিরিক্ত পানি টেনে তোলায় পানির ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ভূগর্ভস্থ থেকে পানি উঠানোয় জমিতে অধিক পরিমান আয়রন ও লবনাক্ত পানি পরায় কমছে কৃষিজ সম্পদ উৎপাদন শক্তি এবং কৃষকের বাড়ছে সেচ খরচ। সব মিলিয়ে আয়ের চেয়ে ব্যয় অধিক। যেমন পানি তেমন ডিজেল।
ফরিদপুর সদর থানার পদ্মার চর এলাকার ডিক্রিরচর, নর্থ চ্যানেল, অম্বিকাপুরের আদর্শ কৃষক হাসেম, করিম চোকদার, রহমান ঢালির সাথে কথা বললে তারা প্রতিনিধিকে আক্ষেপ করে বলেন, পদ্মার পাড়ে বাস করি অথচ আমাদের কলেই পানি নাই। নিজেদের খাওয়ার পানি, গোসল ও গবাদিপশুর জন্য ব্যবহৃত সব পানি এক থেকে দেড় কি.মি. হেটে গিয়ে আনতে হয়। বাড়িতে নলকূপ থাকলেও পানি নাই।
মধুখালী উপজেলার গাজনার খলিল মিয়া একসময় নাম করা জেলে ছিলেন। আজ নদীতে পানি নেই, সে কারণে তিনি এই পেশা বাদ দিয়ে শীল কাজ করেন। চরভদ্রাসন উপজেলার চরভদ্রাসন গ্রামের সাবের মিয়া একসময় কুমার নদীতে দোয়ারী পেতে জীবিকা চালাতেন। আজকে তিনি রিকশা চালক। কারণ নদীতে পানি নেই। নগরকান্দা ও ভাঙ্গার বিল হাওড়ে মাছ মারতেন রহিম ও তার বাবা আজ নগরকান্দার বৃহত্তর কাইচাইলের বিল শুকিয়ে যাওয়ায় তারা এখন ভ্যান চালায়। বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গার অসিত মালো মাটি দিয়ে হাড়ি পাতিল তৈরি করে নৌকা যোগে বিভিন্ন বাজার ঘাটে বিক্রি করত। নদীতে পানি নেই নৌকায় করে হাড়ি পাতিলের চালান নিতে পারেন না। এখন বেকার। পেশা বদলে তিনি এখন ঝালমুড়ি বিক্রেতা।
উল্লিখিত সকল বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উপজেলার ভুক্তভোগীরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন যদি উপজেলার প্রত্যেকটি গ্রামের জনস্বাস্থ্য বিভাগ একটি করে গভীর নলকূপ স্থাপন করেন তাহলে মানুষের সুপ্রিয় খাবার পানি ব্যবহারে কোন সঙ্কট থাকত না এবং জনস্বাস্থ্য বিভাগ দাবি করছেন ব্যক্তিগত উদ্যোগে কেউ যদি গভীর নলকূপ বসাতে চান সে ব্যপারে আমরা সাধ্যমত সহযোগীতা করব।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন