রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

লকডাউনে খোলা রাখুন পোশাক কারখানা

চার মালিক সমিতির সংবাদ সম্মেলন পোশাক কারখানা বন্ধ হলে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়বে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০১ এএম

১৪ এপ্রিল শুরু হতে যাওয়া ‘কঠোর লকডাউনের’ মধ্যেও পোশাক কারখানা খোলা রাখার দাবি জানিয়েছে- বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমইএ ও ইএবি’র। গতকাল রোববার ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ আবদুস সালামের সভাপতিত্বে সভায় সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা এ দাবি জানান। তারা বলছেন, কারখানা বন্ধ হলে শ্রমিকরা গ্রামে ফিরতে গিয়ে উল্টো সারা দেশে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলবে। আর প্রতিষ্ঠানগুলোর বিপুল পরিমাণ অর্থ লোকসান হবে।
‘কঠোর লকডাউন’ শুরুর তিন দিন আগে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএসহ আরও কয়েকটি মালিক সমিতির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে রোগী ও মৃত্যু লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ার কারণে আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে কঠোর ‘লকডাউনের’ পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, এক সপ্তাহ জরুরি সেবার প্রতিষ্ঠান ছাড়া আর সব কিছুই বন্ধ থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, করোনা মহামারির ফলে সৃষ্ট সঙ্কট থেকে শিল্প যখন ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে, ঠিক তখনই করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের অশনিসংকেত দৃশ্যমান হতে শুরু করে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এবং এর প্রভাব সংক্রান্ত একটি হালনাগাদ তথ্য উপস্থাপন করে তাতে বলা হয়, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার মূল্যের রফতানি হারিয়েছে। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের তুলনায় রফতানি হারিয়েছে ৯.৫ শতাংশ।
২০২০ সালের এপ্রিলের শেষ নাগাদ ১১৫০টি সদস্য প্রতিষ্ঠান ৩.১৮ বিলিয়ন ডলারের কার্যাদেশ বাতিল ও স্থগিতের শিকার হয়েছে। পরবর্তীতে ৯০ শতাংশ বাতিল প্রত্যাহার হলেও মূল্য ছাড় ও ডেফার্ড পেমেন্ট মেনে নিতে হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের আগে থেকেই পোশাকের দরপতন শুরু হতে থাকে, যা করোনার পরে তীব্র আকার ধারণ করে। গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে পোশাকের ৪.৫-৫ শতাংশ হারে দরপতন অব্যাহত আছে।

তৈরি পোশাক শিল্পের আন্তর্জাতিক অনেক ক্রেতা ও ব্র্যান্ড ক্রয়াদেশ এর বিপরীতে মূল্য পরিশোধ করেনি। অনেকে আবার দেউলিয়া হয়ে গেছে। ফলে অনেক কারখানা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, অনেকে তাদের জাহাজীকৃত পণ্য অথবা স্টক এর মূল্য পায়নি। কিন্তু বাধ্য হয়ে কাঁচামাল বাবদ খোলা এলসি’র দায় মেটাতে ফোর্সড লোনের শিকার হয়েছে। এ সঙ্কটের মধ্যেও শ্রমিকদের মজুরি দিয়ে যেতে হয়েছে এবং অন্যান্য খরচ মেটাতে হয়েছে। উপরন্ত করণা মোকাবিলায় প্রণোদনা বাবদ যে ঋণ নিয়েছিল তা পরিশোধের সময় ঘনিয়ে এসেছে।

সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুস সালাম বলেন, গত বছর সাধারণ ছুটি ও পরবর্তীতে দুই ঈদে শ্রমিকদের আবাসস্থল ত্যাগ করে গ্রামের বাড়ি চলে যাওয়ায় যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল তার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা উপেক্ষা করা যায় না। লকডাউনের প্রথম দিন থেকেই ব্যাপক সংখ্যক শ্রমিক শহর ছাড়তে পারেন। এতে দেশব্যাপী সংক্রমণের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে। এ অবস্থায় বস্ত্র ও পোশাক খাত ও সহযোগী খাত লকডাউনের আওতাধীন রাখা হলে দেশব্যাপী সংক্রমণের বিস্তারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাবে। সেই সাথে লকডাউন শেষে এসব শ্রমিক কর্মস্থলে ফিরে আসার ক্ষেত্রেও দেখা দেবে অনিশ্চয়তা।

দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর গত বছরের মার্চে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলে পোশাক কারখানাও বন্ধ হয়েছিল। এর মধ্যে এপ্রিলের শুরুতে কারখানা খোলার খবরে হাজার হাজার শ্রমিক ঢাকার পথে রওনা হয়।
বাস-ট্রেন না চলায় এসব শ্রমিক হেঁটেই পাড়ি দেয় মাইলের পর মাইল পথ। ঢাকায় ফিরে কারখানা বন্ধ দেখে আবার ফিরেও যায়। কিছু দিন পর কারখানা খুললে আবার এসে কাজে যোগ দেয় এই সব শ্রমিক।
ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর কেন্দ্রিক তৈরি পোশাক শিল্পে ৪০ লাখের মতো শ্রমিক কাজ করে। তখন শ্রমিকের এই যাতায়াত সংক্রমণ ছড়াতে ভ‚মিকা রেখেছিল বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
এবার মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর সীমিত পরিসরে যে ‘লকডাউন’ চলছে, তার আওতামুক্ত রাখা হয় দেশের রফতানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকশিল্পকে।

পোশাকশিল্প মালিকদের দাবি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কারণে পোশাক শ্রমিকদের মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা খুবই কম। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কারণে পোশাক শ্রমিকদের মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা খুবই কম।

আসন্ন কঠোর ‘লকডাউনেও’ পোশাক শিল্পকে আওতামুক্ত রাখার দাবি জানিয়ে শিল্প মালিকরা বলেন, উন্নত বিশ্বসহ প্রতিযোগী দেশগুলোতেও রফতানিমুখী কারখানাগুলো ‘লকডাউনের’ আওতামুক্ত। কারখানা বন্ধ হলে দেশের রফতানিতে ‘মারাত্মক নেতিবাচক’ প্রভাব পড়বে দাবি করে তারা বলেন, আমাদেরকে ক্রয়াদেশগুলো অনেক আগে থেকেই নির্ধারিত থাকে। সেই অনুযায়ী উৎপাদন ও জাহাজীকরণ প‚র্ব নির্ধারিত থাকে। তাই এই খাতগুলোতে লকডাউন কার্যকর হলে নতুন করে ক্রয়াদেশ বাতিলসহ নানা বিপর্যয়ের ঝুঁকি রয়েছে। সাপ্লাই চেইন বিপর্যস্ত হলে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজজট, কনটেইনার জট ও অন্যান্য বিপত্তি যুক্ত হবে। পাশাপাশি প্রতিযোগী দেশগুলোর কাছে বাংলাদেশ বাজার হারাবে।

শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন দাবি করেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কারণে পোশাকশিল্পে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা খুবই কম। তিনি বলেন, গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত প্রায় ৫০০০ নমুনা পরীক্ষা করে ৭০৯ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা গেছে। পোশাক কারখানা মালিক ও কর্মকর্তা পর্যায়ের দু’একজনের মৃত্যু হলেও শ্রমিক পর্যায়ে কারও মৃত্যুর খবর তাদের জানা নেই। তিনি মহামারিকালে সংক্রমণ ঠেকাতে সচেতনতা গড়ে তোলার উপর জোর দেন। বলেন, শ্রমিকরা যতক্ষণ কারখানার অভ্যন্তরে থাকে ততক্ষণ তারা স্বাস্থ্যবিধি পরিপূর্ণভাবে পালন করতে পারে। কারখানার বাইরের পরিস্থিতি কী সেটা সবারই জানা। মহামারির প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সর্বস্তরের জনগণকে সচেতন হতে হবে।
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিকেএমইএ সভাপতি একেএম সেলিম ওসমান, বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ, বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন, বাংলাদেশ এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন