সারাদেশে হেফাজত নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার ও হয়রানি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের আমির শায়খুল হাদীস আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী। গতকাল রোববার চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসায় অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির এক বিশেষ জরুরি সভায় এ দাবি জানান তিনি। ২৬ মার্চ থেকে টানা কয়েকদিন হাটহাজারী, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের বিক্ষোভে সরকার দলীয় ক্যাডার বাহিনী হামলা চালিয়েছে অভিযোগ করে বলা হয়, সারাদেশে ২৬ জনকে হত্যা করা হয়েছে। তান্ডবের সাথে হেফাজতে ইসলাম জড়িত নয় বলেও জানান নেতারা।
সভা থেকে আগামী ২৯ মে হাটহাজারী মাদরাসায় জাতীয় ওলামা মাশায়েখ সম্মেলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। করোনার অজুহাতে কওমী মাদরাসা বন্ধের সিদ্ধান্ত তৌহিদী জনতা মানবে না বলেও জানিয়ে দেয়া হয়। সভা শেষে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে নিয়ে চলমান ঘটনাপ্রবাহ তার একান্ত ব্যক্তিগত উল্লেখ করে হেফাজত আমির বলেন, তার বিষয়ে সভায় কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।
বেলা ১১টায় দারুল উলূম হাটহাজারী মাদরাসা মিলনায়তনে হেফাজতে ইসলামের প্রধান উপদেষ্টা আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন হেফাজতের আমির আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী, নায়েবে আমীর মাওলানা হাফেয তাজুল ইসলাম (পীর সাহেব ফিরোজশাহ), মাওলানা আব্দুল আওয়াল, মাওলানা মুহাম্মদ ইয়াহইয়া, মাওলানা সালাহ উদ্দিন নানুপুরী, মাওলানা জুনায়েদ আল-হাবীব, মাওলানা শোআইব জমীরী, মাওলানা ওমর মেখলী, মাওলানা নাসির উদ্দিন মুনির, মাওলানা খুরশিদ আলম কাসেমী, মাওলানা জসিম উদ্দিন, মাওলানা মুনির হুসাইন কাসেমী, মুফতী সাখাওয়াত হুসাইন রাজী, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা মীর মুহাম্মদ ইদরীস, মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়জী, ড. নূরুল আবসার আজহারী, মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন, মাওলানা ফয়সাল আহমদ, মাওলানা ইলিয়াস হামিদী, মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ প্রমুখ।
সভায় বক্তাগণ বলেন, গত ২৬ মার্চ হেফাজতের কোনো কর্মসূচি ছিলো না। কিন্তু ঢাকা বায়তুল মোকাররম মসজিদে মুসল্লিদের উপর পরিকল্পিতভাবে পুলিশ ও সরকার দলীয় হেলমেট বাহিনী কর্তৃক আক্রমণের প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্ষুদ্ধ জনতা মিছিল বের করে। হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মিছিল বের হলে পুলিশ বিনা উস্কানিতে গুলি করে পাঁচ জনকে শহিদ করে। এ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলাম ২৭ মার্চ বিক্ষোভ ও ২৮ মার্চ শান্তিপূর্ণ হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করে। কিন্তু হেফাজতের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ২১ জনকে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ ও সরকার দলীয় ক্যাডার বাহিনী।
তারা বলেন, হেফাজত কোনো তান্ডব চালায়নি বরং ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও শ্রমিক লীগের সন্ত্রাসীদের দিয়ে চোরাগুপ্তা হামলার তান্ডব চালিয়ে রাজনৈতিকভাবে এখন হেফাজতকে দোষারোপ করা হচ্ছে। সরকারের লোকজন এবং কতিপয় ইসলাম বিদ্বেষী মিডিয়া এখন আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি নিয়ে মিথ্যাচার করছেন। তারা বলেন, ভিডিও ফুটেজ দেখে প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তির ব্যবস্থা করুন। কিন্তু নিরীহ আলেম, ওলামা, মাদরাসা ছাত্র ও তৌহিদী জনতাকে হয়রানি করবেন না। অবিলম্বে গণগ্রেফতার বন্ধ করুন। মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করুন। যাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে অবিলম্বে নিঃশর্তে মুক্তি দিন।
সভায় আরো বলা হয়, করোনার অজুহাতে দেশের ঐতিহ্যবাহী কওমী মাদরাসা বন্ধ করার ষড়যন্ত্র দেশের তৌহিদী জনতা মেনে নেবে না। করোনা মহমারী থেকে মুক্তির জন্য মহান আল্লাহর দরবারে কোরআনের তিলাওয়াত, যিকির, তাসবী পাঠ ও দোআ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। পবিত্র মাহে রমজানে হিফজখানা, নূরানী, মক্তব চালু রাখতে হবে। মসজিদে সুন্নাহ মোতাবেক নামায তারাবীহ, ইতিকাফ চলবে। লকডাউনের নামে শরীয়তবিরোধী কোনো বিধি-নিষেধ আরোপ করা যাবে না। যথা নিয়মে তাফসীর, দাওয়াত ও তালীমের কাজ চালু রাখতে হবে। সভায় যে কোনো সঙ্কটকালীন সময়ে হেফাজতের সর্বস্তরে নেতাকর্মী, ওলামায়ে কেরাম, ও ধর্মপ্রাণ তৌহিদী জনতাকে ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য আহ্বান জানানো হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন