শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বাসে তিন গুণ ভাড়া আদায়

নিষেধাজ্ঞার দিনেও রাজধানীতে তীব্র যানজট

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০১ এএম

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধের সপ্তম দিন ছিল গতকাল। চলমান এই বিধিনিষেধেও রাজধানীতে যানজট দেখা গেছে। রাজধানীতে যানবাহন চলাচল দেখে মনে হয়নি দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে কোনো বিধিনিষেধ চলছে। গণপরিবহনে প্রতি দুইসিটে একজন করে যাত্রী বহনের নির্দেশনা দিয়ে শতকরা ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী গণপরিবহনগুলো অর্ধেক যাত্রী বহনের নির্দেশনা উপেক্ষা করে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে ২ থেকে ৪ গুণ পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া আদায় করছে। যাত্রীদের অভিযোগ ভাড়া বৃদ্ধির দোহাই দিয়ে গণপরিবহনগুলোতে ভাড়া আদায়ের নামে ডাকাতির মহোৎসব চলছে। গতকাল রোববার যাত্রাবাড়ি, মিরপুর, ফার্মগেট, কাওরান বাজার, শাহবাগ, গুলিস্তান, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় তীব্র যানজট দেখা গেছে। ট্রাফিক সিগন্যালে কোথাও কোথাও দীর্ঘক্ষণ যানজট লেগে থাকার দৃশ্যও দেখা গেছে। কেউবা কাজের উদ্দেশ্যে ছুটছেন কর্মস্থলে, কেউবা কারণ ছাড়াই রাস্তায় বেরিয়েছেন। কিন্তু বাসগুলোতে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ইচ্ছামাফিক।

মানুষের চলাচলেও দেখা গেছে, সবার মধ্যে গা ছাড়া ভাব, যেন দেশে করোনা বলতে কিছু নেই। সামাজিক দ‚রত্বের বালাই দেখা যায়নি বেশিরভাগ জায়গায়।বাসের ড্রাইভার-কন্টাক্টর-হেলপারদের অধিকাংশের মুখে মাস্ক নেই। যাত্রীদের অনেকের মাস্ক ছিল থুতনির নিচে। কাজের উদ্দেশে বা কর্মস্থলে যাওয়া ছাড়াও অকারণে গল্প-গুজবে লিপ্ত থাকতে দেখা গেছে অনেককে।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে বাসগুলোর যাত্রীদের মাস্ক না পরা, সামাজিক দ‚রত্ব না মানার বিষয়টি তো ছিলই; অনেক গণপরিবহনে দাঁড়িয়ে যাত্রী নিতে দেখা গেছে। এ নিয়ে যাত্রীদের বাক-বিতন্ডা করতে দেখা গেছে। রাইড শেয়ারিংয়ে যাত্রী নেয়া নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বিভিন্ন সড়কে, মোড়ে দেখা গেছে রাইডারদের অবস্থান।
শাহবাগ থেকে বাসে উঠেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী আবদুস সালাম। তিনি বলেন, অফিস খোলা রেখে লকডাউন হয় নাকি, আজকে অফিসের কাজে তিন জায়গায় যেতে হয়েছে। চাকরি মানব, নাকি লকডাউন মানব। গুলিস্তানের শহিদুল হক বলেন, রমজান আগামী সপ্তাহে। আজ সপ্তাহের প্রথম দিন। লকডাউনের জন্য মানুষকে প্রস্তুতি নিতে হবে। একটু ভিড় হবেই।

রাজধানীর কাজলা থেকে গুলিস্তান ও কাজলা থেকে মতিঝিল ভাড়া ছিল ১০ টাকা। এক দিলোমিটার দূরের শনিরআখড়া থেকে একই ভাড়া ছিল ১৫ টাকা। কিন্তু গত কয়েকদিন থেকে কাজলা থেকে গুলিস্তান ভাড়া ২০ টাকা এবং শনিরআখড়া থেকে গুলিস্তান ভাড়া ৩০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। অথচ কোনো সিট ফাঁকা রাখা হচ্ছে না। একই বাসে চিটাগাং রোড থেকে গুলিস্তান ভাড়া ৫০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। হিমালয়, শ্রাবণ নামের গণপরিবহনে এই ভাড়া আদায় করা হয়। এ ছাড়াও এই রুটের ঠিকানা, মেঘলা, রজনীগন্ধ্যা, লাভলি, অনাবিল নামের বাসে দ্বিগুণ তিনগুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। অথচ প্রতিটি বাসেই যাত্রী নিচ্ছেন প্রতিটিটি সিটেই।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন মোহিতুল রহমান। প্রতিদিন রায়েরবাগ থেকে গুলিস্তান আসেন শ্রাবণ পরিবহনে। তিনি জানালেন, সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক সিট খালি রাখার শর্তে শতকরা ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করেছেন। অথচ গণপরিবহনগুলো সব সিটে যাত্রী তুলেও দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছেন। গুলিস্তান টু মিরপুর, সায়েদাবাদ টু গাজীপুর, আবদুল্লাহপুর টু সদরঘাট, সারুলিয়া টু গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ি টু মিরপুর চিড়িয়াখানা, যাত্রাবাড়ি টু গাবতলী রুটের প্রতিটি বাসে একই ভাবে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের সংঘাত সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে। যাত্রীদের অভিযোগ করোনার নাম করে ভাড়া বৃদ্ধির নামে বাসের ড্রাইভার কন্টাকটরা যাত্রীদের কাছে জোর করে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছে। এটা ডাকাতির নামান্তর।
গতকাল রোববার দুপুরে বাসের অভাবে অনেক যাত্রীকে শাহবাগ মোড়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। তবে শাহবাগ থেকে কাওরান পর্যন্ত ও শাহবাগ থেকে পল্টন মোড় পর্যন্ত পুরো রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এদিকে প্রচন্ড গরমে যানজটে আটকে থাকা মানুষের নাভিশ্বাস উঠে চরমে। মেডিক্যাল শিক্ষার্থী নিঝুম মিরপুরগামী বাসে ওঠার জন্য শাহবাগ মোড় থেকে মৎসভবন পর্যন্ত হেঁটে যান। তিনি বলেন, এখনই এ অবস্থা। রোজা আসলে তো আরও খারাপ হবে পরিস্থিতি।

বিভিন্ন মোড়ের ট্রাফিক পুলিশদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার ও শনিবার দুই দিন ছুটি ছিল। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস হওয়ায় রোববার রাস্তায় গাড়ি বেশি। তারা দ্রæত গাড়ি ছেড়ে দিচ্ছেন। বিধিনিষেধেও রাজধানীতে তীব্র যানজট। মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। গণপরিবহনগুলোও স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কাই করছে না।

পরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় প্রসঙ্গে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী গণপরিবহনের অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নামে যাত্রীদের কাছ থেকে ডাকাতের মতো টাকা আদায় করছেন বলে অভিযোগ করেছেন। সংস্থাটি বলছে, বাড়তি ভাড়ার কারণে সংকটাপন্ন নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষের জীবন অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে গণপরিবহনের অতিরিক্ত ভাড়া প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে তারা। সংগঠনের মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, লকডাউনের ঘোষণা আসার পর থেকে দেশে বাসটার্মিনাল ও বাস কাউন্টারগুলোতে যাত্রী চাপ বাড়তে থাকে। করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ সাপেক্ষে অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের শর্তে গণপরিবহন চালানোর সরকারি সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে দূরপাল্লার যাত্রাপথে অধিকাংশ গণপরিবহনে দ্বিগুণ ভাড়া নিয়ে যত সিট তত যাত্রী বহন করাই দেশের যাত্রী সাধারণ অস্বাভাবিক ভাড়া ডাকাতির শিকার হচ্ছে। সরকার বাসের ভাড়া ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করলেও সিটি সার্ভিসের গণপরিবহন মালিকরা সরকারি তালিকার পরিবর্তে তাদের ওয়েবিল নির্ধারিত পূর্বের ভাড়া ওপর ১০০ শতাংশ যোগ করে ভাড়া আদায় করায় এ ভাড়া কোথাও কোথাও সরকারি নির্ধারিত ভাড়ার ১৮০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে।

রাজধানীর মনঞ্জিল পরিবহনের বাসে শনিরআখড়া থেকে মালিবাগ সাড়ে ৯ কিলোমিটার যাত্রাপথে ২৪ টাকার ভাড়ার স্থলে ৫০ টাকা ভাড়া আদায় হয়েছে। বাসে করোনার স্বাস্থ্যবিধি মানতে সিটখালি রাখা হয়নি। কোনো কোনো বাসে যাত্রীদের দাঁড়িয়ে বহন করতেও দেখা গেছে।
রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী প্রতিটি হিউম্যান হলার, অটোটেম্পু, অটোরিকশায় বিদ্যমান ভাড়ার চেয়ে কোথাও দ্বিগুণ আবার কোথাও তিনগুণ বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। যাত্রীরা নিরূপায় হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া গুণে গন্তব্যে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। অথচ স্বাস্থবিধি বা অর্ধেক যাত্রী বহনের সরকারি নির্দেশনার দোহাই দিয়ে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করলেও যাত্রী তোলার পর ভাড়া আদায় শেষে মাঝপথে গাদাগাদি করে যাত্রী তোলা হচ্ছে।

এ পরিস্থিতিতে দেশব্যাপী চলমান গণপরিবহনে যাত্রী, পরিবহন শ্রমিক, বচসা, হাতাহাতি, মারামারি চলছে। এদিকে গতকাল রাজধানীর গুলশান থেকে মতিঝিল-কমলাপুর রুটের বাসে দেখা গেছে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করতে। স্বাস্থ্যবিধি মানার দোহাই দিয়ে এই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাসগুলোতে সিট ফাঁকা রাখা হয় না। তবে যাত্রী যেখানে কম, সেখানে আসন ফাঁকা রাখা হচ্ছে দেখিয়ে দ্বিগুণ ভাড়া নেয়া হচ্ছে। চিটাগাং রোড থেকে মতিঝিল আসা এক যাত্রী তরিকুল ইসলাম জানান, তিনি ২০ টাকার ভাড়া ৪০ টাকা দিয়ে এসেছেন। অন্য যাত্রীরা ভাড়া নিয়ে বিতর্ক করলে পথে গণপরিবহনের মালিকদের ‘গুন্ডা বাহিনী’ দিয়ে যাত্রীদের শায়েস্তা করা হয়। একই অভিযোগ করেছেন যাত্রবাড়ি থেকে মীরপুর রুটের যাত্রীরা। তাদের অভিযোগ দ্বিগুণ ভাড়া গণপরিবহনে নেয়া হচ্ছে; অথচ সিট ফাঁকা রাখা হচ্ছে না। বেশিরভাগ সিটে দুজন করে যাত্রী বসানো হচ্ছে; আর দু’টারটি সিট ফাঁকা রাখা হচ্ছে। করোনার নামে গত কয়েকদিন ধরে গণপরিবহনে ভাড়া আদায়ের নামে ডাকাতি চলছে। জানতে চাইলে ঠিকানা পরিবহনের ড্রাইভার ইদ্রিস বলেন, সরকার বেঁধে দেয়া ভাড়াই নেয়া হচ্ছে। তাছাড়া সব সময় যাত্রী পাওয়া যায় না। সরকার ভাড়া বাড়িয়েছে আমাদের করার কিছু নেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Iqbal amin ratan ১২ এপ্রিল, ২০২১, ৯:০৩ এএম says : 0
এরই নাম স্বাধীন বাংলাদেশ। তামাশার যেখানে নাই শেষ।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন