ইমামুল হাবীব বাপ্পি
ক্রিকেট খেলার উৎপত্তি সম্পর্কে সঠিক কোন প্রমাণ এখন পর্যন্ত অজানা। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ষোড়শ শতকের একেবারে শেষের দিকে দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডে এর জন্ম। এরপর সময়ের স্রোতে ধীরে ধীরে খেলাটি ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বময়। ১৮৪৪ সালে আন্তর্জাতিক খেলা হিসেবে এর আত্মপ্রকাশ ঘটে। নিউইয়র্কের সেন্ট জর্জ ক্রিকেট ক্লাব মাঠে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম আন্তর্জাতিক টেস্ট ম্যাচের আয়োজন করা হয় ১৮৭৭ সালের ১৫ মার্চ, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে। মাঠটি ছিল ঐতিহ্যবাহী মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড। ম্যাচটি ৪৫ রানে জিতে প্রথম টেস্ট জয়ের রেকর্ড গড়েছিল স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। ১৯৩৯ সালের আগ পর্যন্ত খেলাটির ধরা বাধা কোন সময় নির্ধারণ ছিল না। তাতে ম্যাচের ফলাফল নির্ধারণে বেগ পেতে হত। এ কারণে নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়। এরপর সময় তার নিজস্ব প্রয়োজনে খেলাটাকে সংস্কর করে নিয়েছে নিজের মত করে। ১৯৭১ সালের জানুয়ারিতে যাত্রা শুরু করে একদিনের ক্রিকেট। এরও চার বছর পর থেকে যাত্রা শুরু হয় বিশ্বকাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের। কিন্তু তাতেও ক্রিকেট ভক্তদের চাওয়ায় কোথায় যেন ঘাটতি থেকে যাচ্ছিল। সময় আর বিনোদনের কথা চিন্তা করে ২০০৩ সাল থেকে তাই শুরু হয় ২০ ওভারের টি-টোয়েন্টি ম্যাচ।
সেই শুরু থেকে ক্রিকেট মানেই যেন একের পর এক রেকর্ড ভাঙা-গড়ার খেলা। কেউ ব্যক্তিগত নৈপূণ্যে সবাইকে ছাড়িয়ে রেকর্ড গড়ে জায়গা করে নিচ্ছেন ইতিহাসের পাতায়। আবার কখনো ইতিহাসে দেশের নাম লেখাচ্ছেন দলীয় প্রচেষ্টায়। কিছুদিন আগে কয়েক দিনের ব্যবধানে হয়ে গেল তেমনি দুই বিশ্ব রেকর্ড। পাকিস্তানের বিপক্ষে একদিনের ক্রিকেটে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রেহের বিশ্ব রেকর্ড গড়ে ইংল্যান্ড। এক সপ্তাহ পর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের বিশ্ব রেকর্ড গড়ে অস্ট্রেলিয়া।
ক্রিকেটের তিন সংস্করণেই এতদিন সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের এই রেকর্ড ছিল শ্রীলঙ্কার দখলে। টেস্টে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটি অবশ্য এখনো তাদের দখলেই আছে। প্রায় দুই দশক আগে কলম্বোয় ভারতের বিপক্ষে ৬ উইকেটে ৯৫২ রান করে ইনিংস ঘোষণা করেছিল লঙ্কানরা। এটিই টেস্ট ক্রিকেটে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ দলীয় রানের রেকর্ড। টেস্টেও দ্বিতীয় ও তৃতীয় সর্বোচ্চ রেকর্ড দুটি ইংল্যান্ডের। তবে ৯০৩/৭ ডিক্লে. ও ৮৪৯ রানের রেকর্ড দুটি ইংলিশরা যখন গড়েছিল, সেসময় এখনকার মত ধরাবাধা সময় ছিল না। মোট চার ইনিংসে ফল বের না হওয়া পর্যন্ত ব্যাট করত দু’দল।
প্রায় এক দশক ধরে লঙ্কানদের দখলে থাকা ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির রেকর্ড দুটি হাতছাড়া হয়েছে মাত্র এক সপ্তাহর ব্যবধানে! গেল ৩০ আগস্ট নটিংহ্যামের ছোট্ট মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩ উইকেটে ৪৪৪ রান করে রেকর্ডটি দখলে নেয় ইংল্যান্ড। ২০০৬ সালে নেদারল্যান্ডেসের বিপক্ষে ৯ উইকেটে ৪৪৩ রান করে এতদিন রেকর্ডটি ছিল লঙ্কানদের।
এর এক সপ্তাহ পর ৬ সেপ্টেম্বর টি-২০’র রেকর্ডটি তারা নিজেরাই তুলে দেয় অস্ট্রেলিয়ার হাতে। ঘরের মাঠে তাদের বোলাদের তুলোধুনো করে ২০ ওভারে ৩ উইকেটে ২৬৩ রান করে অস্ট্রেলিয়া। লঙ্কানদের রেকর্ডটি ছিল কেনিয়ার বিপক্ষে টি-২০ ক্রিকেট বিশ্বকাপের প্রথম আসরে। জোহানোসবার্গে সেদিন ৬ উইকেটে ২৬০ রান করেছিল শ্রীলঙ্কা। টি-২০তে আড়াইশ’ পেরুনো ইনিংস এই দু’টিই।
ওয়ানডে ক্রিকেট এ পর্যন্ত চারশোর্ধো ইনিংস দেখেছে মোট ১৮ বার। সবচেয়ে বেশিবার এমন ম্যাচ উপহার দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা, ৬ বার; দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভারত ৪ বার। ৪০০ রান করেও হারের রেকর্ড আছে একটি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ইতিহাসে প্রথমবারের মত চারশোর্ধো রানের স্কোর গড়ে বিষ্ময় উপহার দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু জোহানেসবার্গের মাঠে অপেক্ষা করছিল তার চেয়েও বড় বিষ্ময়। অজিদের দেয়া ৪৩৪/৪ রানের লক্ষ্যে এক বল আর এক উইকেট হাতে রেখেই পেরিয়ে যায় প্রটিয়ারা। চার’শর বেশি লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে একবার অবশ্য জয়ের খুব কাছাকাছি গিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। ২০০৯ সালে রাজকোটে ভারতের ৭ উইকেটে ৪১৪ রানের জবাবে ৮ উইকেটে ৪১১ রানে থেমে যায় শ্রীলঙ্কা।
টি-২০তেও ২০০ রান করেও হারার কের্ড আছে অনেকই। গেল ২৭ আগস্ট ফ্লোরিডায় তো ২৪৫ রান করেও ভারতের কাছে হারতে বসেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ! শেষ পর্যন্ত ১ রানের শ্বাসরুদ্ধকর জয় পায় ক্যারিবিওরা।
টেস্টে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ
দল স্কোর প্রতিপক্ষ ভেন্যু তারিখ
শ্রীলঙ্কা ৯৫২/৬ ডিক্লে. ভারত কলম্বো ২ আগস্ট
ইংল্যান্ড ৯০৩/৭ ডিক্লে. অস্ট্রেলিয়া ওভাল ২০ আগস্ট ১৯৩৮
ইংল্যান্ড ৮৪৯ ইউন্ডিজ কিংস্টোন ৩ এপ্রিল ১৯৩০
উইন্ডিজ ৭৯০/৩ ডিক্লে. পাকিস্তান কিংস্টোন ২৬ ফেব্রু. ১৯৫৮
পাকিস্তান ৭৬৫/৬ ডিক্লে. শ্রীলঙ্কা করাচি ২১ ফেব্রু. ২০০৯
শ্রীলঙ্কা ৭৬০/৭ ডেিক্ল. ভারত আহমেদাবাদ ১৬ নভে. ২০০৯
অস্ট্রেলিয়া ৭৫৮/৮ ডিক্লে. উইন্ডিজ কিংস্টোন ১১ জানু. ১৯৫৫
শ্রীলঙ্কা ৭৫৬/৫ ডিক্লে. দক্ষিণ আফ্রিকা কলম্বো ২৭ জুলাই ২০০৬
উইন্ডিজ ৭৫১/৫ ডিক্লে. ইংল্যান্ড সেন্ট জোন্স ১০ এপ্রিল ২০০৪
উইন্ডিজ ৭৪৯/৯ ডিক্লে. ইংল্যান্ড ব্রিজাঁউন ২৬ ফেব্রু. ২০০৯
ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ
দল স্কোর প্রতিপক্ষ ভেন্যু তারিখ
ইংল্যান্ড ৪৪৪/৩ পাকিস্তান নটিংহাম ৩০ আগস্ট ২০১৬
শ্রীলঙ্কা ৪৪৩/৯ নেদারল্যান্ডস আমস্টেলভিন ৪ জুন ২০০৬
দ. আফ্রিকা ৪৩৯/২ উইন্ডিজ জোহানেসবার্গ ১৮ জানু ২০১৫
দ. আফ্রিকা ৪৩৮/৯ অস্ট্রেলিয়া জোহানেসবার্গ ১২ মার্চ ২০০৬
দ. আফ্রিকা ৪৩৮/৪ ভারত মুম্বাই ২৫ অক্টো. ২০১৫
অস্ট্রেলিয়া ৪৩৪/৪ দ. আফ্রিকা জোহাসেনবার্গ ১৮ জানু ২০১৫
দ. আফ্রিকা ৪১৮/৫ জিম্বাবুয়ে পচেফস্ট্রোম ২০ সেপ্টে ২০০৬
ভারত ৪১৮/৫ উইন্ডিজ ইনডোর ৮ ডিসে ২০১১
অস্ট্রেলিয়া ৪১৭/৬ আফগানিস্তান পার্থ ৪ মার্চ ১০১৫
ভারত ৪১৪/৭ শ্রীলঙ্কা রাজকোট ১৫ ডিসে ২০১৫
টি-টোয়েন্টতে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ
দল স্কোর প্রতিপক্ষ ভেন্যু তারিখ
অস্ট্রেলিয়া ২৬৩/৩ শ্রীলঙ্কা পাল্লেকেলে ৬ সেপ্টে. ২০১৬
শ্রীলঙ্কা ২৬০/৬ কেনিয়া জোহানেজবার্গ ১৪ সেপ্টে. ২০০৭
অস্ট্রেলিয়া ২৪৮/৬ ইংল্যান্ড সাউদাম্পটন ২৯ আগস্ট ২০১৩
উইন্ডিজ ২৪৫/৬ ভারত লাউডারহিল ২৭ আগস্ট ২০১৬
ভারত ২৪৪/৪ উইন্ডিজ লাউডারহিল ২৭ আগস্ট ২০১৬
দ. আফ্রিকা ২৪১/৬ ইংল্যান্ড সেঞ্চুরিয়ন ১৫ নভে. ২০০৯
উইন্ডিজ ২৩৬/৬ দ. আফ্রিকা জোহানেসবার্গ ১১ জানু. ২০১৫
দ. আফ্রিকা ২৩১/৭ উইন্ডিজ জোহানেসবার্গ ১১ জানু. ২০১৫
ইংল্যান্ড ২৩০/৮ দ. আফ্রিকা মুম্বাই ১৮ মার্চ ২০১৬
দ. আফ্রিকা ২২৯/৪ ইংল্যান্ড মুম্বাই ১৮ মার্চ ২০১৬
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন