‘হিট শক’ বাংলাদেশের কৃষিতে নতুন এক আতংকের নাম। গরম কালে লু হাওয়া বা গরম বাতাসের প্রবাহ নতুন কিছু নয়।
সাধারণত আম, জাম, কাঁঠাল ও তাল পাকার সময়ে এই লু হাওয়া বা গরম বাতাস প্রবাহিত হয়ে থাকে।
তবে দৃ’একদিন বা সপ্তাহের ব্যবধানে কাল বৈশাখী ঝড় ,শিলা বৃষ্টি বা বর্ষনের মাধ্যমে কমে আসে গরমের প্রকোপ। প্রকৃতির এই চিরায়ত খেলা নিয়ে চাষী বা কৃষি বিভাগ উদ্বিগ্ন হয়না।
তবে এবছর প্রকৃতি পরিবেশে এক ভিন্ন অবস্থা বা পরিবেশ বিরাজ করছে। গত বর্ষা মওশুমে দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় ব্যাপকভাবে ফসলহানি হয়েছে। খাদ্য বিভাগের হিসেবে গত আমন মওশুমে ১০ লাখ টন ধান কম উৎপাদন হয়েছে। গত রবি মওশুমে শাক সবজীর উৎপাদন কম হওয়ায় বাংরাদেশে প্রথম বারের মত আলুর দাম বেড়ে ৬০ টাকায় উঠে যায়। ধানের মন একেবারে ভরা মওশুমেই ১১ /১২ শ টাকায় ওঠে । ১০ লাখ মেট্রিক টন ধান কম হওয়ায় চালের দামেও রেকর্ড হয়েছে। চালের দাম বাড়তে বাড়তে এখন ৬০ থেকে ৭০ টাকায় ওঠানামা করছে ।
কৃষি ও খাদ্য বিভাগ এবং উৎপাদক চাষীরা সবাই তাকিয়ে আছে বোরো ফসলের দিকে। কারন কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হবে বোরো ধানের কাটা মাড়াইয়ের কাজ। স্থানীয় আবহাওয়া অফিসগুলোর রেকর্ড অনুযায়ী গত তিন যুগে এত দীর্ঘ সময় বৃষ্টি হীন ছিলনা উত্তর জনপদ। এই অঞ্চলে বিশেষ করে রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলের সেচ ব্যবস্থা খরা মওশুমে সম্পুর্ন ভু-গর্ভস্থ পানির ওপর। তা’ সত্বেও এই সময়ে ( নভেম্বর- থেকে মার্চের শেষ অবধি ) একাধিকবার হালকা, ভারি ও মাঝারি আকারের বর্ষনের আশির্বাদে তরতর করে বেড়ে ওঠে বোরো ধানের ক্ষেত। মধ্য মার্চ থেকে আগাম লাগানো বোরো ধানে ‘গামড়’ (ধানের ফুল ) আসতে শুরু করে। এসময়টা ধানের গোড়ায় পানি ও আকাশের রোদ প্রয়োজন হয় । মাঝে মাঝের বর্ষনে ধানের গা ধোওয়ার কাজটা হয়ে যায় । ধানের গাছে বৃষ্টির ধারা সমস্ত ক্ষতিকর ভাইরাস থেকে রক্ষা করে । তরতাজা স্বচ্ছ ঝরঝরে হয়ে ওঠে ধান গাছ ।
এবছরের দীর্ঘস্থায়ী খরায় ওই কাজগুলো হয়নি। তার ওপর এপ্রিলের ৪ তারিখে কোথাও ঘুর্ণিবায়ু , কোথাও শিলার বর্ষন আবার বিভিন্ন স্থানে ‘হিটশক’ নামের গরম বায়ু প্রবাহ প্রবাহিত হয়ে গেছে ধান ক্ষেতের ওপর দিয়ে। বরেন্দ্র অঞ্চলের নাটোর সহ , ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা,হওড়াঞ্চলের কিছু স্থান সহ সারাদেশেই কিছু কিছু স্থানে বয়ে যায় হিট শক। যেসব এলাকায় হিট শক বয়ে গেছে। সেসব স্থানে কপাল পুড়েছে বোরো চাষীদের।
কৃষি ও ধান গবেষনা ইনস্টিটিউটের সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক মাঠে নেমে জরীপ পরিচালনা সহ বোরো ধান চাষীদের বহুমুখি দিক নির্দেশনা দিয়েছে চলেছেন।
বগুড়া ,পাবনা,সিরাজগঞ্জ ও জয়পুরহাট জেলা নিয়ে গঠিত বগুড়া াতিরিক্ত পরিচালক ড. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন হিট শক ’ থেকে বোরো ধান রক্ষায় দিক নির্দেশনা দিতে মাঠে নেমেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তারা।
তবে চাষী পর্যায়ে ‘হিট শক’ নিয়ে শংকা কাঠছেই না। তারা দ’ুহাত তুলে মোনাজাতে প্রার্থনা করছেন ফের যেন হিট শকের পুনরাবৃত্তি না হয় ।
এদিকে আবহাওয়া দপ্তরের পর্যালোচনায় দেখা যায় এপ্রিলের ২য় প্রান্তিকে বর্ষনের জোর সম্ভাবনার যোগ আছে।
উল্লেখ্য গত আমন মওশুমে ধান চালের উচ্চ মুল্যের কারণে বোরো চাষীরা একটু বেশি আগ্রহী ছিল । কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা আজিজার রহমান জানান, চলতি বোরো মওশুমে ৪৮ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। বগুড়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সাইফুল ইসলাম জানান , বোরো ধানের ফলন নিয়ে তারাও চিন্তিত। কারন আমন মওশুমের ফলন বিপর্যয়ের কারনে সংগ্রহ অভিযান সফল হয়নি । হিট শক সহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারনে বোরোতেও ফলন বিপর্যয় হলে বিপাকে পড়বে খাদ্য বিভাগও ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন