শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

আগুনে পুড়ছে পাহাড়ের বনাঞ্চল

হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য : ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে টপসয়েল

মো. কবির হোসেন, কাপ্তাই (রাঙামাটি) থেকে | প্রকাশের সময় : ১৩ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০২ এএম

চৈত্রের তীব্র খড়তাপে পাহাড়ে জলছে আগুনের লেলিহা। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। আগুনে পুড়ছে বনের পশু-পাখি ও সবুজ বনাঞ্চল। নষ্ট হচ্ছে মাটির উপরের অংশ বা টপসয়েল। চৈত্র-বৈশাখ মাস আসলেই প্রচন্ড খড়তাপে গাছের পাতা শুকিয়ে নিচে ঝড়ে পরে ¯ূ‘প হয়ে যায়। এ যেন এক জঙ্গল মনে হয়। দেখতে তেমন একটা ভালো লাগে না। এক শ্রেণির মানুষ ইচ্ছায়-অনিচ্ছা বনের মধ্যে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং সিগারেটের অবশিষ্ট অংশ বনের মধ্যে ফেলে দিয়ে মজা পায়। অন্য এক শ্রেণির মানুষ জুম চাষের জন্য প্রতি বছর বনের মধ্যে আগুন ধরিয়ে দেয়। বিভিন্ন কারণে পার্বত্যঞ্চলের রিজার্ভ বনের মধ্যে আগুন ও ঝুম চাষের ফলে পার্বত্যঞ্চলের বিভিন্ন প্রজাতির পশু-পাখি আগুনের লেলিহা শিখায় পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। এত করে পার্বত্যঞ্চল হতে বিলুপ্ত হচ্ছে প্রাণিজগৎ।

পাশাপাশি অনেক ছোট-বড় সবুজ গাছ পুড়ে পশুখাদ্য বাগান ধবংস হচ্ছে। পাহাড়ের টপসয়েল নষ্টের ফলে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হচ্ছে বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা। চলতি মাসে রাঙামাটি পার্বত্য জেলার দক্ষিণ বন বিভাগের কাপ্তাইয়ের বিভিন্ন রিজার্ভ বনে একশ্রেণীর লোক কারণে, অকারণে বনের মধ্যে আগুন ধরিয়ে দিয়ে বনের জীববৈচিত্র্যসহ বনের অনেক ক্ষতিসাধন করেছে।
এ বিষয়ে কাপ্তাই ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র ফায়ার সার্ভিস স্টেশন কর্মকর্তা আবদুল মাননান আনসারী বলেন- বন বিভাগের, বনের পাশের, সড়কের পাশে বসবাসরত লোকজনের সংবাদ পেয়ে গত মার্চ মাসে ও চলতি এপ্রিল মাসে অনেকবার পাহাড়ের আগুন আমরা পানি দিয়ে নিভিয়েছি। পাহাড়ে আগুন নিভানোর সময় দেখেছি অনেক বনের পশু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

এদিকে কাপ্তাই ন্যাশনাল পার্ক সিএমসি কমিটির সভাপতি কাজী মাকসুদুর রহমান বাবুল বলেন, এক শ্রেণির অসাধু লোকজন অযথা ও ঝুম চাষের জন্য পাহাড়ে আগুন দিয়ে বন ধবংস করছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বনের পরিবেশ ও বিলুপ্ত হচ্ছে পশু-পাখি। হুমকির মুখে পড়েছে পার্বত্যঞ্চলের বন্যপ্রাণি। এখনো প্রায় দিন হাতি বনে খাদ্য না পেয়ে লোকালয়ে এসে মানুষের বাসা-বাড়িতে হামলা করছে। তিনি এ ধরনের কর্মকান্ড যারা করছে তাদের প্রতি প্রচন্ড ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং পাহাড়ে আগুন ও ঝুম চাষ বন্ধ করার আহবান জানান।

এদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. রফিকুজ্জামান শাহ্ (ডিএফও) বলেন, বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন বনভূমি বা পাহাড়ে কেউ আগুন দিচ্ছেনা। কেউ আগুন দেয়ার অপচেষ্টা করলে তাৎক্ষনিকভাবে তা প্রতিহত করা হয়। মূলত জুম চাষিগণ কর্তৃক পাহাড়ে চাষ করার জন্য আগুন দিচ্ছে। আগুন দেয়ার ফলে পাহাড়ের উপরিভাগের মাটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মাটিতে যে সমস্ত উপকারী অণুজীব আছে সেগুলো ধবংসপ্রাপ্ত হয়। বন্যপ্রাণির আবাসস্থল ধবংস হয়। প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো গাছপালাগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ভ‚মির উর্বরতা ক্ষয়সাধিত হয়। যার ফলে ভ‚মিধসের সৃষ্ঠি হয় এবং বন্যপ্রাণী খাবার সংকট দেখা দেয়, ফলে বন্যপ্রাণী লোকালয়ে আসে। পাহাড়ে আগুন দেয়ার ফলে ক্ষতিকর প্রভাবগুলো বিষয়ে স্থানীয় জনগনকে সচেতন করার পাশাপাশি পাহাড়ে আগুন দেয়া থেকে বিরত থাকার প্রচারণমূলক কার্যক্রম চলছে এবং স্থানীয় জনগনকে সম্পৃক্ত করে সামাজিক বনায়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন চেষ্টা করছি। ফলে খালি পাহাড়গুলোতে বনায়ন করা সম্ভব হবে অন্য দিকে জনগনের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়ে আর্থ-সামাজিক উন্নতি সাধিত হবে বলে মত প্রকাশ করে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন