শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে সিপিডি চায় সেনাবাহিনী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০১ এএম

মহামারি করোনাভাইরাসের প্রেক্ষিতে শিল্প-কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং সাধারণ মানুষের চলাচলে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বিশেষ করে মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে সেনাবাহিনী ও আর্মড ফোর্সকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ব্যবহার করার দাবি জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। গতকাল সিপিডি আয়োজিত ‘কোভিড অতিমারির দ্বিতীয় ঢেউ : কিভাবে সামলাবো’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনায় প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে এ দাবি জানান গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। সিপিডির এই গবেষণা পরিচালক বলেন, ‘সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। সুতরাং এর আলোকে এখন স্বাস্থ্যবিধিকে গুরুত্ব দিতে হবে। কলকারখানায়, বাজারে স্বাস্থ্যবিধি বিশেষ করে মাস্ক পরা সুনিশ্চিত করার জন্য সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।’
তিনি বলেন, এজন্য (স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে) আর্মড ফোর্স, সরকারের এজেন্সিগুলোকে ব্যবহার করতে হবে। সরকারের যেসব এজেন্সি রয়েছে, সেখানে লোকবল কম, প্রয়োজনে অন্যান্য এজেন্সি থেকে লোকবল নেয়া যেতে পারে। এলাকাভিত্তিক জোন ভাগ করে পর্যবেক্ষণ করা, যে মাস্ক ব্যবহার করা হচ্ছে কি না।
ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, প্রয়োজনবোধে সেনাবাহিনী ও আর্মড ফোর্সকে ব্যবহার করা যেতে পারে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে। পরিপালনগুলো কঠোরভাবে শিল্প-কারখানা হোক, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হোক, এমনকি সাধারণ মানুষের চলাচলেও এনফোর্সমেন্টের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। এটা এনফোর্সমেন্ট না হলে জারিমানা, এমনকি সংক্রমণের আশঙ্কা থাকলে প্রতিষ্ঠান বা কলকারখানা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার মতো ম্যাজেস্ট্রেসি ক্ষমতা এই কর্মকর্তাদের দেয়া যেতে পারে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় আলোচনায় বক্তব্য রাখেন ব্র্যাকের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মুস্তাক রেজা চৌধুরী, রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর, সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন, বিজিএমইএ’র নতুন সভাপতি ফারুক হোসেন, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলালউদ্দিন, বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি সমন্বয়ক তাসলিমা আখতার প্রমুখ।
আলোচনা শেষে সারসংক্ষেপ তুলে ধরে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, আলোচনায় সুপারিশগুলোকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হলো- স্বাস্থ্যবিধি, চিকিৎসা এবং অন্যান্য সহায়তা। স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে অনেকে বলেছেন জনসম্পৃক্ততা বড়ানোর জন্য। মাস্ক পরা এবং মাস্ক আরও বেশি পরিমাণে বিতরণ করা, সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা, জনসমাগম না হাওয়ার বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ এসেছে।
তিনি বলেন, চিকিৎসার বিষয়ে ফিল্ড হাসপাতালের সুপারিশ এসেছে। সেখানে কমিউনিটি হেলথ ওয়ার্কার ব্যবহারের সুপারিশ এসেছে। আমরা দেখছি যে টিকা দেয়া শুরু হয়েছে, সেখানে একটা অসামঞ্জস্যতা দেখা যাচ্ছে। টিকার সরবরাহ কম এবং জনসচেতনতাও কম। টিকার সরবরাহ কম হওয়ার জন্য অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে টিকা আমদানির সুপারিশ এসেছে। সেই সঙ্গে কোভিড চিকিৎসার ওষুধ কিভাবে সুলভ মূল্যে দেয়া যায় তার সুপারিশ এসেছে।
ড. ফাহমিদা বলেন, কারখানা কর্মীদের স্বাস্থ্যের কথা আলোচনায় উঠে এসেছে। তাদের সব ধরনের স্বাস্থ্যগত সুবিধা দেয়ার জন্য কারখানা মালিকদের প্রতি অনুরোধ জনানো হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাতে কারখানাগুলো খোলা থাকে এবং কর্মীদের কোন চিকিৎসার প্রয়োজন হলে, যেন সেই সহযোগিতা দেয়া হয়।’ তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিচ্ছেন। তাদের পুরস্কার দেয়ার সুপারিশ এসেছে।ক্ষুদ্র দোকান মালিকদের কথা চিন্তা করেক্ষুদ্র দোকান খোলা রাখার সুপারিশ এসেছে। সেই সঙ্গে দরিদ্র জনগণের জীবিকার ওপর যে আঘাত আসে, তার জন্য নগদ অর্থ সহায়তা বাড়ানোর সুপারিশ এসেছে। গত বছর ৫০ লাখ পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা দেয়া হয়, কিন্তু সবাই পাইনি এখনো। এটার ব্যপ্তি আরও বাড়ানোর সুপারিশ এসেছে।
বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি সমন্বয়ক তাসলিমা আখতার জানান, পোশাক শ্রমিকদের সংখ্যা ৪০ লাখ। পরিবারসহ এই সংখ্যা কোটিতে ছাড়িয়ে যাবে। এসব শ্রমিকদের মধ্যে মাত্র ৫ হাজার শ্রমিকদের কোভিড টেস্ট করা হয়েছে। যা খুবই অপ্রতুল। তিনি বলেন, এবারের প্রস্তুতি সম্পর্কে আমাদের জানা নেই। এ বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তাও পাচ্ছি না। বলা হচ্ছে মাত্র ৭০৯ জন শ্রমিকের মধ্যে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শ্রমিকদের টেস্টের ব্যবস্থা করা দরকার। সাভার ও আশুলিয়ার দিকে তাকান, সেখানেই কতজনের সুযোগ আছে করোনা টেস্ট করানোর। আমরা শুনতে পাচ্ছি করোনা উপসর্গ নিয়ে অনেক শ্রমিকই কাজে যাচ্ছেন। তাই আমাদের শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সেবায় নজর দেয়া উচিত। তাদের মৃত্যু হলে পোশাক মালিকদের কী অবস্থান আমরা জানি না। শ্রমিকরা বাঁচলে গার্মেন্টস শিল্প বাঁচবে। এটা মাথায় রাখা উচিত মালিক ও সরকারকে।
তাসলিমা বলেন, করোনালকডাউন শ্রমিকদের কাছে আতঙ্কের নাম। মধ্যবিত্তরা যেমন স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবতে পারেন, শ্রমিকদের সেটা ভাবার সুযোগ নেই। তাদের একটাই চিন্তা, জীবিকা। মালিকপক্ষ থেকে বলা হয়েছে অর্থনীতি বাঁচাতে হলে কারখানা খোলা রাখতে হবে। সবকিছু মিলিয়ে আমরা আতঙ্কে আছি।
জরুরি তহবিল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি গঠন হয়েছে কি-না আমাদের জানা নেই। আমাদের পোশাক শ্রমিকদেরও প্রথম সারির যোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া উচিত। লকডাউনে জরুরি সেবার মতো শ্রমিকদেরও কাজ করতে হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
Abul Kamal ১৩ এপ্রিল, ২০২১, ৩:৪৯ এএম says : 0
সব মিডিকেল সেনট্রারে করোনা টেস্ট ফ্রি করা হোক দেখবেন একজনও করোনা রুগি পাবেন না সব ধানদা নতুন ব‍্যাবসা গরিব মারার ফাদ মেডিকেল সেনট্রারের রমরমা ব‍্যাবসা
Total Reply(0)
Raju H Ahmed ১৩ এপ্রিল, ২০২১, ৩:৫০ এএম says : 0
ভালো হবে... তাহলে লোকজন কিছুটা স্বাস্থ্যবিধি মানবে।
Total Reply(0)
মুক্তিকামী জনতা ১৩ এপ্রিল, ২০২১, ৩:৫০ এএম says : 0
স্বাগতম।আশা করি আমাদের দেশপ্রেমিক ও দক্ষ সেনাবাহিনী করোনা সঙ্কটের এই ক্রান্তিলগ্নে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে। পরম করুনাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ বাংলাদেশের প্রতি সহায় হন। আমিন।
Total Reply(0)
নাজনীন জাহান ১৩ এপ্রিল, ২০২১, ৩:৫০ এএম says : 0
আমাদের দেশ এর নাগরিকরা, কোন দিন ও চিন্তা করতে পারে না মহামারি কি। টিভি, রেডিও, মোবাইল এ এর ভয়াবহতা বর্ণনা করে আমাদের বিচ্ছিন্ন থাকতে বাধ্য করতে পারলে ই মনে হয় আমরা সফল হব।
Total Reply(0)
রফিকুল ইসলাম ১৩ এপ্রিল, ২০২১, ৩:৫০ এএম says : 0
থানা পর্যায়ে সেনা ক্যাম্প খোলার জোর দাবি জানাচ্ছি,,,।
Total Reply(0)
মেঘদূত পারভেজ ১৩ এপ্রিল, ২০২১, ৩:৫১ এএম says : 0
Dear Army you are the only hope now. Get well protection. Stay safe.
Total Reply(0)
কুদ্দুস তালুকদার ১৩ এপ্রিল, ২০২১, ৩:৫২ এএম says : 0
আসল কাজটি যদি না করেন তবে আরো অনেক প্রানহাণীর সংখ্যা উড়িয়ে দেয়া যায় নাহ ...! সেনা বাহিনী আক্রান্ত ব্যক্তি অথবা সন্দেহভাজন ব্যক্তির সাস্থ পরীক্ষা নিশ্চিত করাও অত্যন্ত জরুরী । দেশে লাখ লাখ মানুষ জ্বর সর্দি কাঁশিতে আক্রান্ত আছে যার ৯০% এর বেশি মানুষ জানেনা কেনো এসব হচ্চে, ভিবিন্ন প্রকার ধারনস করে বসে আছে। আবার হসপিটাল গুলোতে গেলেও সুচিকিৎসার অভাব, টেস্টকীট নাই ইত্যাদি। এক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর মেডিকেল টীম দারুন ভাবে মানুষের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিতে পারেন। সরকার থেকে পর্যাপ্ত বাজেট আদায় করে জনস্বার্থে সেনাবাহিনী মানুষের সূচিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারেন...
Total Reply(0)
রুবি আক্তার ১৩ এপ্রিল, ২০২১, ৩:৫২ এএম says : 0
সেনাবাহিনী দুইটা কাজ বেশী জরুরি করা দরকার এক বাজার মনিটরিং করা, দুই কাজ ছাড়া যে ঘর থেকে বের হয় অাড্ডা দে তাদের শাসন করা।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন