শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কঠোর লকডাউন কাল থেকে

প্রজ্ঞাপন জারি চলবে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত : বন্ধ গণপরিবহন ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খোলা শিল্প-কারখানা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০০ এএম

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় আগামীকাল বুধবার থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এই আটদিন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। বন্ধ থাকবে গণপরিবহন ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। তবে জরুরি সেবা দেয়া প্রতিষ্ঠান-সংস্থা খোলা থাকবে। খোলা থাকবে শিল্প-কারখানা। এ সময়ে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়া যাবে না। খোলা স্থানে কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কেনা-বেচা করা যাবে ৬ ঘণ্টা।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতি অবনতির কারণে আগের নির্দেশনার ধারাবাহিকতায় আগামীকাল ভোর ৬টা থেকে ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত ১৩টি বিধি-নিষেধ আরোপ করার কথা বলা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে। প্রজ্ঞাপনে যেসব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সেগুলো হলো : ১. সব সরকারি, আধাসরকারি, সায়ত্ত¡শাসিত ও বেসরকারি অফিস, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। প্রতিষ্ঠানের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন। তবে বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থল বন্দর এবং তৎসংশ্লিষ্ট অফিসগুলো এ নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে। ২. বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে। ৩. সব ধরনের পরিবহন (সড়ক, নৌ, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট) বন্ধ থাকবে। তবে পণ্য পরিবহন, উৎপাদন ব্যবস্থা ও জরুরি সেবাদানের ক্ষেত্রে এ আদেশ প্রযোজ্য হবে না।

৪. শিল্প-কারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। তবে শ্রমিকদের স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান থেকে নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আনা-নেওয়া নিশ্চিত করতে হবে। ৫. আইন-শৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন- কৃষি উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরগুলোর (স্থল, নদী ও সমুদ্রবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতা বহির্ভূত থাকবে।

৬. অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। তবে টিকা কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে টিকা গ্রহণের জন্য যাতায়াত করা যাবে।

৭. খাবারের দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁয় দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা এবং রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত কেবল খাদ্য বিক্রয়/সরবরাহ করা যাবে। শপিংমলসহ অন্যান্য দোকান বন্ধ থাকবে। ৮. কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। বাজার কর্তৃপক্ষ স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

৯. বোরো ধান কাটার জরুরি প্রয়োজনে কৃষি শ্রমিক পরিবহনে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন সমন্বয় করবে। ১০. সারাদেশে জেলা ও মাঠ প্রশাসন উল্লেখিত নির্দেশনা বাস্তবায়নে কার্যকর পদপেক্ষ গ্রহণ করবে এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত টহল জোরদার করবে।

১১. স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক তার পক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয় ক্ষমতা প্রদান করবেন। ১২. স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জুমা ও তারাবির নামাজে জমায়েত বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় নির্দেশনা জারি করবে। ১৩. উপরোক্ত নির্দেশনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ প্রয়োজনে সম্পূরক নির্দেশনা জারি করতে পারবে।

এর আগে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়তে থাকায় গত ৫ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে সাত দিনের লকডাউন বা বিধি-নিষেধ জারি করে সরকার। এই বিধি-নিষেধের মেয়াদ শেষ হয় গত রোববার। বিধি-নিষেধের সময়ে পালনের জন্য ১১টি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ৪ এপ্রিল জারি করা প্রজ্ঞাপনে। বিধি-নিষেধ শুরু হলে গণপরিবহন না পেয়ে দুর্ভোগে পড়েন থোলা থাকা সরকারি-বেসরকারি অফিসের কর্মীরা। গণপরিবহন না পেয়ে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেন যাত্রীরা। একই সঙ্গে দোকান ও মার্কেট খুলে দিতেও আন্দোলনে নামেন মালিক-শ্রমিকরা।

এরই মধ্যে গত ৭ এপ্রিল সিটি কর্পোরেশন এলাকার মধ্যে গণপরিবহন খুলে দেয়া হয়। সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলাচল করছে বাস। তবে শপিংমল ও দোকান মালিক-শ্রমিকদের আন্দোলন চলছিল। শেষে শুক্রবার (৯ এপ্রিল) থেকে আজ ১৩ এপ্রিল সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকানপাট ও শপিংমল খোলা রাখা যাবে বলে গত ৮ এপ্রিল নির্দেশনা জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এরপর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে কঠোর লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এ সময়ে জরুরি সেবা দেয়া প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা ছাড়া সরকারি-বেসরকারি সব অফিস বন্ধ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (11)
লুৎফুর ১২ এপ্রিল, ২০২১, ১১:২৯ পিএম says : 0
আগামি কাল কি বুধবার?
Total Reply(0)
Mahmud Selim ১৩ এপ্রিল, ২০২১, ৩:৩৫ এএম says : 0
লকডাউনে মানুষতো ঘরে থাকেই না, আর থাকতে চাইলেও পারেনা ক্ষুদার জ্বালায়। শুধু শুধু মানুষের আরো হয়রানি। আর এদিকে আরেকটি চক্র করোনাকে পুজি করে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। তথাকথিত লকডাউনে মানুষের আরো হয়রানি
Total Reply(0)
Robi Ullah ১৩ এপ্রিল, ২০২১, ৩:৩৫ এএম says : 0
গার্মেন্টসের প্রায় 1 কোটি লোকের প্রতিদিনের প্রদচারণায় কঠোর লকডাউনের 'কঠোর' শব্দটি উদাও হয়ে আবারও 'সীমিত' শব্দে রুপান্তরিত হবে।
Total Reply(0)
Dr-Asif Chowdhury ১৩ এপ্রিল, ২০২১, ৩:৩৬ এএম says : 0
বাংলাদেশের সরকার যেমন, মানুষও তেমন। মানুষও জানে এই লকডাউন ঈদ এর পরে গিয়েই খুলতে পারে, ৭ দিন করে লকডাউনের ভাউতাবাজি তারা বুঝে। যারা গ্রাম থেকে ঢাকায় কাজ করে ভাড়া দিয়ে চলে তারা সব বন্ধ থাকায় ঢাকায় থাকবেই বা কেন!!! তাদের খাওয়াবে কে বা ভাড়া দিবে কে!! সরকার দিবে!!! আর সরকারকে বাচানোর ঠেকা কি বাড়ির মালিকেরা নিয়ে রাখছে, তারাও এই ভাড়া থেকে খায়৷ তাদেরকে কে খাওয়াবে!! ফাজলেমি চলতেছে।
Total Reply(0)
Mohammad Shakil ১৩ এপ্রিল, ২০২১, ৩:৩৬ এএম says : 0
লকডাউনের ঘোষণা দেওয়া মানে করোনাকে গ্রাম গঞ্জে রপ্তানি করা,, এই সিদ্ধান্ত কেবল অযোগ্যতা কে তুলে ধরে,,,,
Total Reply(0)
Atiqur Rahman Atik ১৩ এপ্রিল, ২০২১, ৩:৩৭ এএম says : 0
আবারো একই ভৃল ? আমরা কেন অতিত থেকে শিক্ষা নিতে পারি না অভিজ্ঞতা অজ'ন করতে পারি না ?
Total Reply(0)
Mollah Badsha Salam ১৩ এপ্রিল, ২০২১, ৩:৩৭ এএম says : 0
করিতে ধুলা দূর জগত হবে ধুলায় ভরপুর। আমাদের এই অসচেতনতা মূলক ছুটাছুটির কারনে শহর থেকে কভিড সংক্রামিত হবে গ্রাম পারা মহল্লায়। তিব্র থেকে তিব্রতর হতে পারে মহামারি।
Total Reply(0)
Arif Ahmad ১৩ এপ্রিল, ২০২১, ৩:৩৯ এএম says : 0
সরকার লকডাউনে কর্মহীন মানুষকে মানবিক সহায়তার জন্য ৫৭২ কোটি ৯ লাখ ২৭ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে দূর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, এই টাকা যদি সঠিকভাবে বন্টন করা হয়,গরীবরা পায়, তাহলে লকডাউন সরকার দেওক, তাতে আমার কোন আপত্তি নাই।
Total Reply(0)
Mamun Al Hera ১৩ এপ্রিল, ২০২১, ৩:৩৯ এএম says : 0
স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা খোলা-গাড়ি বন্ধ আবার কৃষি শ্রমিক এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারবেন-আবার গাড়ি বন্ধ, তারা কিভাবে যাবে?................... যত্তসব পাগলামি যুক্তি। খেটে খাওয়া মানুষের কত জনের করোনা হচ্ছে? এসি রুম থেকে জনগনের কাতারে এসে কাজ করুন গাযে রোদ লাগান করোনা চলে যাবে।
Total Reply(0)
গাজী দ্য ব্ল্যাক নাইট ১৩ এপ্রিল, ২০২১, ৩:৩৯ এএম says : 0
দুনিয়াতে মনে হয় বাংলাদেশই প্রথম কোন দেশ যেখানে লকডাউনের শক্তিমাত্রা বোঝাতে "কঠোর" শব্দটা ব্যবহার করতে হয়। লকডাউন তো লকডাউনই, সেখানে আবার হার্ড/সফট এইসব শব্দ বলতে হবে কেন? আমরা কী আজব জাতি মাইরি, লকডাউনের মধ্যে প্রকারভেদ করে ফেলসি, হালকা লকডাউন, মাঝারি লকডাউন, কঠোর....
Total Reply(0)
Mahfuzur Rahman ১৩ এপ্রিল, ২০২১, ২:৪০ পিএম says : 0
This farsical lockdown will only harm the poor day to day earner people of the country. This inhuman decision should be reconsidered.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন