শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

আল্লাহ মেঘ দে ছায়া দে

মাহে রমজানে আগামী সপ্তাহে রহমতের মেঘ-বৃষ্টি শীতল বাতাসের আভাস : মাঝেমধ্যে বজ্রপাত-কালবৈশাখীর সঙ্গেই বর্ষণের সম্ভাবনা : ধীরে ধীরে কাটবে ভ্যাপসা গরমের যন্ত্রণা শিলাবৃষ্টি, সমুদ্রে লঘ

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ১৬ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০৭ এএম

“আল্লাহ মেঘ দে; পানি দে, ছায়া দে রে তুই, আল্লাহ মেঘ দে। আসমান হইল টুডা টুডা, জমিন হইল ফাডা। মেঘ রাজা ঘুমায়া রইছে, মেঘ দিব কন কেডা। ফাইট্টা ফাইট্টা রইছি যত, খালা বিলা নদী। পানির লাইগ্যা কাইন্দা ফিরে পঙ্খি জলদি। হালের গরু বাইন্দা, গিরস্ত মরে কাইন্দা। খাওয়ার পানে ফডো ফডো, নারীনাংটী গরে। কপোত কপোতি কান্দে, খোপে তে বসিয়া। শুকনা ফুলের কলি পড়ে, ঝরিয়া ঝরিয়া...”।

উপমহাদেশের পল্লীগীতির সুরসম্রাট জাদুকরি শিল্পী আব্বাস উদ্দীন আহমদের দরদী-দরাজ কণ্ঠে প্রাণময় হয়ে ওঠে খরতাপের দহনে আধপোড়া পৃথিবীবাসীর কিংবা বাংলার জনগণের দু’হাত তুলে আল্লাহতায়ালার দরবারে আকুল ফরিয়াদ-চাই শীতল মেঘের ছায়া। চাই একটু বৃষ্টির ধারা। ঠান্ডা হাওয়ায় বুকভরা শ্বাস-প্রশাসে চাই স্বস্তি চাই শান্তি।

চৈত্র মাস শেষ হলো গতকাল মঙ্গলবার। পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ-১৪২৮ সন আজ বুধবার শুরু। করোনাকালে জনজীবনে নববর্ষের আবেদন ফিকে। সেইসাথে টানা খরা-অনাবৃষ্টি-তাপদাহ, মৌসুমী অসুখ-বিসুখে দুর্বিষহ জীবনযাত্রা। পুড়ে খাক ফল-ফসলের জমি। খাদ্যশস্যের সঙ্কট উঁকি দিয়েছে। চাতক পাখির মতো সবার চোখ আকাশপানে। বৃষ্টিতে ধরা ভিজবে কবে? ঢাকাসহ দেশের অনেক জেলায় তাপপ্রবাহ বইছে। পারদ ৩৮ ডিগ্রি সে. ছাড়িয়ে গেছে। দিন-রাতে সমানতালে বাড়ছে তাপমাত্রা। কোথাও কোথাও দমকা বাতাসের সাথে ছিটেফোঁটা ধুলিভেজা বৃষ্টি হলেও এতে গরম উসকে উঠছে।

এ অবস্থায় পবিত্র রমজান মাসে আগামী সপ্তাহ থেকে রহমতের মেঘ-বৃষ্টি, শীতল বাতাসের পরশ মিলতে পারে এমনটি সুখবর রয়েছে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে। বৈশাখ মাসজুড়ে মাঝেমধ্যে বজ্রপাত, বজ্রবৃষ্টি, কালবৈশাখীর সঙ্গেই বর্ষণের সম্ভাবনা আছে। কোথাও কোথাও ঝরতে পারে শিলাবৃৃষ্টি। ধীরে ধীরে কাটবে ভ্যাপসা গরমের যন্ত্রণা। এ সময়ে বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ-নিম্নচাপের ঘনঘটাও তৈরি হতে পারে।

আবহাওয়া বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) এবং আন্তর্জাতিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকারী স্যাটেলাইট সংস্থাগুলো উপরোক্ত পূর্বাভাস দিয়েছে। বৈশি^ক আবহাওয়া সংস্থাসমূহের গাণিতিক মডেল তথ্যের বরাত দিয়ে পাউবো’র পূর্বাভাস মতে, আগামী ১৮ থেকে ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশে প্রত্যাশিত হালকা থেকে মাঝারি বর্ষণ, কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

বিগত নভেম্বর থেকে টানা পাঁচ মাস যাবত তীব্র খরা-অনাবৃষ্টির কবলে পড়েছে দেশ। বাংলাদেশের আবহাওয়া-জলবায়ুর হিসাব নিরিখে, গত ডিসেম্বর মাসে সারাদেশে স্বাভাবিক হারের তুলনায় সার্বিকভাবে গড়ে ৯৮.৮ শতাংশই কম, জানুয়ারিতে ৯৭.৭ শতাংশ কম, ফেব্রæয়ারিতে ৯৯ শতাংশ কম, মার্চ মাসে ৭৯ দশমিক ৬ শতাংশই কম বৃষ্টি হয়। অর্থাৎ গেল চার মাসে গড়ে প্রায় ৯৪ ভাগই বৃষ্টিবিহীন অবস্থা বিরাজ করে। একই ধারায় এপ্রিলেও দীর্ঘায়িত হচ্ছে তীব্র খরা-অনাবৃষ্টি।

দিনে-রাতে গরমের দাপটে স্বস্তি নেই শহর-নগর-বন্দর, গ্রাম-গঞ্জে কোথাও। ঘামে-নেয়ে মানুষ একাকার। কাহিল প্রাণিকুল। গরম বাতাসে যেন মরুর আগুনের ঝাপটা। পুড়ছে ফল-ফসল। ঠা ঠা রোদে মাঠ-ঘাট, নদ-নদী, খাল-বিল, হাওড়-বাওড়, পুকুর-দীঘি ফেটে চৌচির অথবা পানি তলানিতে। ভ‚গর্ভস্থ পানির স্তর নামছেই। হাজার হাজার নলকুপে উঠছে না পানি। গভীর নলকুপগুলোও অচল হয়ে পড়েছে। অচলপ্রায় সেচকাজ। কৃষক দিশেহারা। সর্বত্র বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট। দূষিত পানিবাহিত রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে অনেক এলাকায়। করোনা মহামারীকালে সর্দি-কাশি-জ¦র, ডায়রিয়া, শ^াসকষ্ট, হাঁপানি, চর্মরোগ, রক্তচাপে তারতম্য, চোখ ওঠাসহ মৌসুমী বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধিতে হাসপাতাল-স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ডাক্তারের চেম্বারে রোগী ও স্বজনের ভিড় বাড়ছেই। বেড়েছে মানুষের কষ্ট-দুর্ভোগ। বাতাসে জলীয়বাষ্পের হার বেশি। এরফলে গরমের সঙ্গে অতিরিক্ত ঘাম ঝরছে। পানিশূন্যতায় দ্রæত কাহিল হচ্ছেন বিশেষত কর্মজীবী মানুষ।

আবহাওয়া বিভাগ জানায়, পশ্চিমা লঘুচাপের একটি বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানা গেছে, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। তবে সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় হালকা বা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। ঢাকা, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, রাঙ্গামাটি, ফেনী, শ্রীমঙ্গল, রাজশাহী, দিনাজপুর ও খেপুপাড়া অঞ্চলসহ খুলনা বিভাগের চলমান মৃদু তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। পরবর্তী তিন দিনে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

বাপাউবো’র দেশে বৃষ্টিপাত সম্পর্কিত গত ১১ এপ্রিল বিশেষ পূর্বাভাস প্রতিবেদনে পাউবো’র বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূূঁইয়া জানান, বাংলাদেশ আবহাওয়া বিভাগ ও বৈশি^ক আবহাওয়া সংস্থাসমূহের গাণিতিক মডেলের তথ্য মতে, দেশের উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে চলতি এপ্রিলে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হতে পারে। এ অঞ্চলে এপ্রিল মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৬০ থেকে ২৩০ মিলিমিটার। ১১ থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত এ অঞ্চলে এবং এর সংলগ্ন ভারতের আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এর পরবর্তী সপ্তাহে ১৮ থেকে ২৪ এপ্রিল মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে।

চলতি সপ্তাহের পূর্বাভাস
চলতি সপ্তাহের কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাসে (১৩ থেকে ২১ এপ্রিল) আবহাওয়া বিভাগের কৃষি আবহাওয়া মহাশাখার উপ-পরিচালক এস এম মাহমুদুল হক জানান, এ সময়ে দৈনিক উজ্জ্বল সূর্য কিরণকাল সাড়ে ৬ ঘণ্টা থেকে সাড়ে ৭ ঘণ্টাকাল থাকতে পারে।

এ সপ্তাহে সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুর ও ঢাকা বিভাগের দুয়েক জায়গায় এবং কুমিল্লা অঞ্চলে অস্থায়ী দমকা ও ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে বিচ্ছিন্নভাবে কোথাও কোথাও শিলাবৃষ্টি হতে পারে।
এছাড়া দেশের অন্যত্র আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। এ সময় সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে।

এক নম্বর নৌ-সতর্কতা
দেশের অভ্যন্তরীণ নদী বন্দরসমূহের জন্য আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, পাবনা, ঢাকা, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা ও সিলেট অঞ্চলসমূহের উপর দিয়ে পশ্চিম, উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। এসব এলাকার নদী বন্দরসমূহকে ১ নম্বর সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে।

৪০ ডিগ্রি ছুঁই ছুঁই : তাপদাহের সাথে বৃষ্টির সম্ভাবনা
বৈশাখ মাস অর্থাৎ পঞ্জিকার পাতায় আজ থেকে গ্রীষ্মঋতু শুরু হওয়ার আগেই গতকাল চৈত্রের শেষ দিনে রাজশাহীতে তাপমাত্রার পারদ উঠে গেছে ৩৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। দেশের বেশিরভাগ জেলায় দিনের পারদ ৩৫ থেকে ৩৬ ডিগ্রিরও ঊর্ধ্বে। ঢাকার তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩৬.৯ এবং সর্বনিম্ন ২৭.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় টাঙ্গাইল ও সিলেটে এক মিলিমিটার বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির ফোঁটা ঝরলেও সমগ্র দেশ টানা অনাবৃষ্টি-খরার কবলে।

আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানা গেছে, কুমিল্লা অঞ্চলসহ সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ী দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি-বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। বিক্ষিপ্তভাবে কোথাও কোথাও শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া আকাশ আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। ঢাকা, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, নওগাঁ, ঈশ^রদী, রাঙ্গামাটি, দিনাজপুর, নীলফামারী, পঞ্চগড় ও পটুয়াখালী অঞ্চল এবং খুলনা বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকবে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টি-বজ্রবৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এরপরের ৫ দিনে বৃষ্টি-বজ্রবৃষ্টি বৃদ্ধি পেতে পারে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
।।শওকত আকবর।। ১৪ এপ্রিল, ২০২১, ৯:৪০ এএম says : 0
আপনার পুরোনো দিনের একটি গানের কলি আমার হূদয় ভীষন নাড়া দিয়েছে।আজ ১লা রমজান।১লা বৈশাখ।এ ছাড়া কঠর লকডাউনের ১ম দিন পাড় করতে চলেছি।ডেকোরেটর দোকান তালাবদ্ধ।তাই ইনকিলাবে সংবাদ পড়ি কমেন্ট করি। আল্লাহ যেন আমাদেরকে করোনা থেকে সুস্থ রাখেন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন