শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

ঈদের ছুটিতে জটের মুখে চট্টগ্রাম বন্দর

প্রকাশের সময় : ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শফিউল আলম : গত ঈদুল ফিতরের মতো এবার ঈদুল আজহার টানা ছুটিতে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার ও জাহাজ জটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বন্দরে জট সমস্যা না কাটতেই গতকাল (শুক্রবার) থেকে শুরু হয়েছে টানা এক সপ্তাহের ছুটি। গতকাল থেকেই বন্দরে আমদানি ও রফতানিমুখী পণ্যসামগ্রী জাহাজীকরণ, খালাস, ডেলিভারি পরিবহনের স্বাভাবিক কর্মকাÐে অনেকটা ভাটা পড়েছে। বন্দর চালু থাকলেও বন্দর-শিপিংয়ের ওপর নির্ভরশীল বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ঈদের ছুটি শুরু হওয়ায় তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রমে। এদিকে ঈদের ছুটির সময়ে দেশের বৃহত্তর অর্থনৈতিক স্বার্থে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য গতিশীল রাখার লক্ষ্যে বন্দর ও কাস্টম হাউসের স্বাভাবিক কাজকর্ম সচল রাখতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি। গত সপ্তাহে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান বরাবর দেয়া এক জরুরি পত্রে চেম্বারের সভাপতি আহŸান জানান।
গত প্রায় দুই মাস ধরে টানা প্রতিকূল আবহাওয়া, ঘন ঘন উত্তর বঙ্গোপসাগর উত্তাল, প্রবল সামুদ্রিক জোয়ার, দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়ায় সতর্ক সংকেত, অতিবর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে ও বহির্নোঙরে পণ্যসামগ্রী খালাস, ডেলিভারি পরিবহন ব্যাহত হয়। বৈরী আবহাওয়ার রেশ না থাকতেই এবার লম্বা ছুটির ফাঁদে পড়েছে দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম। পবিত্র ঈদুল আজহা ও এর আগে-পরের ছুটিসহ সাপ্তাহিক ছুটিছাটা মিলিয়ে একটানা এক সপ্তাহ অবকাশ। এ সময় বন্দর ছাড়াও বেসরকারি আইসিডিগুলোতে (অফডক) পণ্য বা কন্টেইনারের জট সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করতে পারে। তাছাড়া সরকারি-বেসরকারি শিপিং প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজের গতি আরও আগেই স্থবির হয়ে পড়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বন্দর কার্যক্রমে।
অবশ্য বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, টানা ছুটির সময় বন্দরে স্বাভাবিক কাজ বজায় থাকলে কার্গোজট কিংবা জাহাজের জট সমস্যার কোন আশংকা নেই। প্রতিদিন বন্দরে গড়ে ২ হাজারেরও বেশি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ও ডেলিভারি করা হচ্ছে এবং তা বজায় থাকবে। গতকাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি কন্টেইনারের মজুদ স্থিতি ছিল ২৮ হাজার ৫শ’ টিইইউএস। যা আমদানি খাতে ধারণক্ষমতার চেয়ে প্রায় ২ হাজার টিইইউএস কন্টেইনার বেশি। বন্দরে অবস্থানরত কন্টেইনার ফিডার জাহাজের সংখ্যা ২০টি। এর মধ্যে বর্তমানে কাজ চলছে ১১টি জাহাজে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে আরও অন্তত ২৮টি জাহাজ আমদানি পণ্যসামগ্রী নিয়ে বন্দরে ভিড়ার কথা রয়েছে।
এদিকে বন্দর কার্যক্রম পুরোদমে চালুর ঘোষণা থাকলেও বন্দর, বন্দর-নির্ভর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যে আংশিক ফাঁকা হয়ে গেছে। সাধারণ বন্দর ডক ও মার্চেন্ট শ্রমিক-কর্মচারীরা ঈদ করতে অনেকেই নিজেদের গ্রামের বাড়িঘরে চলে গেছেন। এ অবস্থায় টানা ছুটির ফাঁদে ব্যাপক কার্গো জটের মুখে পড়তে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর। আমদানিকৃত ও রফতানিমুখী পণ্যসামগ্রী ভর্তি ও খালি কন্টেইনারসহ সাধারণ খোলা (ব্রেক বাল্ক) পণ্য এবং কন্টেইনারের জট সৃষ্টি হতে পারে ছুটির সময়ে। এতে করে বন্দরে জাহাজের জট সৃষ্টিরও আশংকা রয়েছে।
প্রধান সমুদ্র বন্দরের পাশাপাশি ঈদের ছুটিতে বেসরকারি আইসিডিসমূহেও (অফডক) কন্টেইনার তথা পণ্যজটের আলামত দেখা দিয়েছে। যা ক্রমেই বেসামাল আকার ধারণ করতে পারে। এ নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি আমদানি ও রফতানিকারক, শিপার্স, ব্যবসায়ী তথা স্টেকহোল্ডাররাও বেশ চিন্তিত।
ঈদের টানা ছুটির শুরুতে গতকাল থেকে বন্দরে কাজের গতি স্থবির হয়ে পড়েছে। কাজ চলছে ক্রমশ ধীর গতিতে। আজ শনিবার, আগামীকালও (রোববার) একই অবস্থা বিরাজ করবে বলে শিপিং সেক্টর সূত্র জানায়। এ অবস্থায় কন্টেইনারের জট সৃষ্টি হতে পারে। কেননা জাহাজবহর থেকে কন্টেইনারজাত আমদানিকৃত পণ্যসামগ্রী খালাস ও ডেলিভারি পরিবহন এবং রফতানি কন্টেইনার জাহাজীকরণ কার্যক্রম চলবে স্বাভাবিকের তুলনায় ধীর গতিতে। বন্দরে জাহাজ ও কার্গোর দ্বিমুখী জট সমস্যার সৃষ্টির আশংকা দেখা দিয়েছে।
বন্দর সূত্র জানায়, দেশের প্রধান এই সমুদ্র বন্দরে দুই ঈদের দিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত শুধুই ৮ ঘণ্টা জাহাজ ও পণ্যসামগ্রীর হ্যান্ডলিং বন্ধ রাখা হয়। এছাড়া তিন শিফটে ২৪ ঘণ্টা বন্দর সার্বক্ষণিক চালু রাখার যথারীতি প্রস্তুতি থাকে বন্দর কর্তৃপক্ষের। কিন্তু কেবল বন্দর খোলা রেখেই পুরোদমে কাজ সচল করা যায় না। কেননা বন্দর-নির্ভর কাস্টম হাউস, ব্যাংক-বীমা, শিপিং ও সিএন্ডএফ এজেন্ট, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার, পরিবহনসহ অন্যান্য খাতে ছুটি থাকায় বন্দর কার্যক্রম পরিচালিত হয় ধীরগতিতে। আগের ঈদেও তাই দেখা গেছে। এ কারণে সার্বিক উৎপাদনশীলতা হ্রাস, রফতানি শিপমেন্টে লিডটাইম ও জাহাজের গড় অবস্থানকাল বৃদ্ধিসহ বন্দরের দক্ষতা, সেবার মান ও গতিশীলতার সূচকে অবনতি ঘটতে পারে এমনটি আশংকা ব্যক্ত করা হচ্ছে পোর্ট-শিপিং সার্কেল থেকে। গতকাল থেকে টানা এক সপ্তাহের ছুটিতে বন্দর ও শিপিং কার্যক্রম ধীরগতির দিকে ধাবিত হয়েছে। জাহাজের লোডিং আন-লোডিং, ডেলিভারি পরিবহন, কন্টেইনার স্টাফিং আন-স্টাফিংয়ের কাজ মুখ থুবড়ে পড়েছে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন