১১. সন্তান তরবিয়তে বাবার অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও বড়ো দায়িত্ব রয়েছে। যতোক্ষণ পর্যন্ত পিতা সন্তানের তরবিয়তের জন্য সচেতন না হবেন, উল্লেখযোগ্য ভূমিকা না রাখবেন, ততোক্ষণ পর্যন্ত তার তরবিয়ত অসম্ভব প্রায়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) রাসুল (সা.) থেকে বর্ণনা করে বলেন-‘পুরুষ তার পরিবারের দায়িত্বশীল। এ বিষয়ে কেয়ামতের দিন সে জিজ্ঞাসিত হবে।’ এ হাদিসে নারীর ব্যাপারেও উল্লেখ আছে-‘নারী তার স্বামীর ঘরের দায়িত্বশীল। আর এ বিষয়ে কেয়ামতের দিন সেও জিজ্ঞাসিত হবে।’ সে ঘরে সন্তানের কোনো সঠিক তরবিয়ত হতে পারে না, যে ঘরে তার মায়ের ওপর বাবা অত্যাচার করেন। যে ঘরে বাবা ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে সন্তান ভয়ে ও অসংকোচে ঘরের কোণায় লুকিয়ে থাকে, সে ঘরে সন্তানের সঠিক তরবিয়ত কল্পনাও করা যায় না, যে ঘরে পুরুষ একাধিক বিয়ে করে ও অন্য স্ত্রী-সন্তানের হক নষ্ট করে। প্রয়োজনের সময় তার জরুরত পূর্ণ করে না। তাৎক্ষণিক বিষয়টি না বুঝলেও পরে সন্তানের ওপর কঠিনভাবে এর প্রভাব পড়ে। ধীরে ধীরে সে পিতামাতার শত্রুতে পরিণত হয়। আর যখন এসবের আসর তার মাঝে স্থায়ী হয়ে কঠিনরূপে প্রকাশ পায়, তখন অনুধাবন হয় সন্তানকে তিনি অজ্ঞতাবশত কতো বেশি নষ্ট করে ফেলেছেন। কিন্তু তখন ভেবে আর কি লাভ! ইসলাম চার বিয়ের অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু এ শর্তও দিয়েছে-‘স্ত্রীদের মাঝে সমতা বা ইনসাফ করার ক্ষমতা থাকতে হবে।’ ইরশাদ হচ্ছে-‘যদি তোমরা স্ত্রীদের মাঝে ইনসাফের ব্যাপারে সঙ্কিত থাকো, তবে এক স্ত্রীতেই তুষ্ট থাকো। আর যদি এক স্ত্রীর মাঝে ইনসাফের ব্যাপারেও সঙ্কিত হও, (বিয়ে না করে) অধীনস্থ দাসীদের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকো।’ (সুরা নিসা : ৩)। একজন পুরুষকে এ বিষয়ে খেয়াল রেখেই বিয়ে করতে হয়। এটা এমন মহাদায়িত্ব, কেয়ামতের দিন যে বিষয়ে জবাব দিতে হবে আল্লাহর কাছে।
বাবাদের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বিয়ের পূর্ব থেকেই তার একটি সঠিক বুঝ থাকা চাই। সন্তান প্রতিপালনের একজন পূর্ণ বাবা হিসেবে এটা তার দায়িত্ব ও কর্তব্য। অসংখ্য ঘর-সংসার আজ এ কারণে বরবাদ হচ্ছে, বিচ্ছেদ হচ্ছে। মা সন্তানের তরবিয়তে তার খাওয়া-দাওয়া, ঘুম, গোসল, ঘর পরিচর্যা ও রান্নায় সারাদিন শেষ করে দেয়। এতো কষ্ট ও ক্লান্তির পর স্বভাবতই তার মন চায়, রাতে স্বামী ঘরে এলে তাকে যেনো একটু সময় দেন। স্ত্রী চায় স্বামীর সঙ্গে কিছু আনন্দময় ও মুগ্ধকর সময় গড়িয়ে পরস্পর মন ভোলাতে। কিছু হাসিরসিকতা করতে। কিন্তু পুরুষ মোবাইল, কম্পিউটার, ইমো ওয়াটসঅ্যাপ, ইত্যাদির জন্য এতো সময় নষ্ট করেন, ঘরে মা ও সন্তান অপেক্ষা করতে করতে অবশেষে ঘুমিয়ে যায়। এটা বর্তমানে অধিকাংশ ঘরের রোজকার কাহিনি। এ ধরনের কাজে সন্তানের মন থেকে বাবার প্রতি ভক্তি-ভালোবাসা মুছে যায়। দূরত্ব সৃষ্টি হয়। স্ত্রীর মন থেকেও স্বামীর প্রতি সম্মান, ভালোবাসা ও ভক্তি শূন্য হতে থাকে। শুধু প্রথা ও নামেমাত্র ভালোবাসা ও বৈবাহিক জীবনাচার চলবে এর সমস্ত প্রভাব পড়ে সন্তানদের তরবিয়তের ওপর প্রতিফলিত হবে। এজন্য সন্তানের তরবিয়তের ব্যাপারে বাবাকে খেয়াল রাখতে হবে। আল্লাহ না করুন, তার কোনো ত্রুটির কারণে সমাজে ফেতনা-ফাসাদ ছড়িয়ে না পড়ে সন্তানের মাধ্যমে।
অনেক বাবা মনে করেন, তাদের দায়িত্ব সন্তানের জীবনযাপনের প্রয়োজনীয়তা পূর্ণ করা, তাদেরকে খাওয়ানোর জন্য চাকরি করা। রাব্বে কারিম কোরআনে কারিমে কর্তা বা আমির ঘোষণা করেছেন পুরুষকে আর কর্তা পরিচয় কর্তার পরিচালনা ও পূর্ণ দিকনির্দেশনা ছাড়া ঘরের কোনো কাজ সঠিকভাবে আদায় হতে পারে না। কারণ পুরুষ যদি নিজ তত্ত¡াবধানে সংসার পরিচালনা না করেন, তাহলে শয়তান সেখানে পথপ্রদর্শক হয়ে অবশ্যই ঘর নষ্ট করার চেষ্টা করবে। সন্তানের তরবিয়ত করার চেষ্টা করবে। এটি কোরআন ও হাদিসের সারকথা। আজ অনেক বাবাদের দেখা যায়, তারা ব্যবসা-বাণিজ্য, বন্ধুবান্ধব, মোবাইল, কম্পিউটার, ইত্যাদি সব কাজে সময় দেন। কিন্তু সন্তানদের সময় দেন না। তাদের সুখদুঃখে অংশ নেন না। তাদেরকে ভালোবেসে বুকে জড়ানো। রাতে তাদের সারাদিনের ভালোমন্দ হিসেব নেন না। এতে সন্তান বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তার ভবিষ্যৎ ধ্বংস হয়ে যায়। বাবার বিরুদ্ধে অভক্তি ও হাজারো প্রশ্ন মনে লালন করতে থাকে। ছেলেবেলায় এটা বিলকুল বোঝা যায় না। এর প্রভাব প্রকাশ পায় না। কিন্তু বড়ো হবার পর তা কঠোররূপে জাহির হয়।
১২. মায়ের দায়িত্ব। সন্তান বাবার চেয়ে মায়ের সঙ্গে বেশি সময় পার করে। আল্লাহতায়ালা মায়ের কাছে সন্তান তরবিয়তের দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। হজরত ইবনে উমর (রা.) রাসুল (সা.) থেকে বর্ণনা করেন-‘সন্তান তরবিয়তের ব্যাপারে মায়েরও দায়িত্ব রয়েছে আর স্বামীর ঘরের রক্ষণাবেক্ষণও তার কর্তব্য। আর কেয়ামতের দিন তাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন