কঠোর লকডাউনেও সচল দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি চট্টগ্রাম বন্দর। সচল রয়েছে সিংহভাগ রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসসহ কল কারখানার উৎপাদনের চাকা। তবে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় শ্রমিকদের দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। হাসপাতাল, ব্যাংক, বীমাসহ জরুরি সেবায় নিয়োজিতদেরও চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়।
দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের মার্কেট, বিপনী কেন্দ্র বন্ধ। তবে লকডাউনে চট্টগ্রাম বন্দর তথা আমদানি-রফতানি বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট শিপিং এজেন্টস, বেসরকারি কন্টেইনার ডিপো, কাস্টম ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টসহ ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানও চালু আছে।
দেশের সর্ববৃহৎ ইপিজেড চট্টগ্রাম ইপিজেড, কর্ণফুলী ইপিজেড বেসরকারি কোরিয়ান ইপিজেড, বিজিএমইএর অধীন তৈরি পোশাক কারখানার পাশাপাশি নগরীর সাগরিকা, কালুরঘাট, ফৌজদারহাট, সীতাকুন্ড সহ বিভিন্ন শিল্প এলাকার ছোট বড় ও ভারী শিল্প কারখানার চাকাও সচল।
দেশের অন্যতম বাণিজ্যিক এলাকা চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, আছদগঞ্জে ভোগ্যপণ্য বেচাকেনা চলছে। এসব এলাকা থেকে সড়ক এবং নৌপথে পণ্য ও মালামাল পরিবহন হচ্ছে। কর্ণফুলীর বিভিন্ন ঘাটে মালামাল খালাস, গুদামজাত ও পরিবহন অব্যাহত আছে। আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী ভারী যানবাহন চলছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে। ট্রেনে কন্টেইনার ও পণ্য পরিবহন বাড়ানো হয়েছে। কৃষিপণ্যের সবরবরাহও সচল রয়েছে। করোনা সংক্রমণ কমাতে টানা লকডাউনে ফের চ্যালেঞ্জের মুখে দেশের অর্থনীতি। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর সচল রাখার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের ৯২ শতাংশই হয়ে থাকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। রাজস্বের বিরাট অংশ জোগান দেয় চট্টগ্রাম বন্দরভিত্তিক কাস্টম হাউস। তাই অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে বন্দর সচল রাখার কোনো বিকল্প নেই।
গতবারের মতো এবারও লকডাউনে সচল রয়েছে বন্দর। হ্যান্ডলিংয়ের চেয়ে কন্টেইনার এবং পণ্য ডেলিভারি কিছুটা কম হলেও বন্দর সচল রাখা হয়েছে। গতকাল দুপুরে বন্দর এলাকায় পণ্যবাহী ভারী যানবাহনের জট দেখা যায়। যানবাহনের চাপ ছিলো দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, কঠোর লকডাউনেও বন্দর সচল রয়েছে। বন্দরের জেটিতে ১২টি জাহাজে কন্টেইনার ও পণ্য উঠানামা হচ্ছে। বহির্নোঙ্গরে ৪৬টি জাহাজে কাজ হচ্ছে। গতকাল বন্দর থেকে তিন হাজারের বেশি কন্টেইনার ডেলিভারি হয়েছে। বন্দরে জট পরিস্থিতি নেই। বন্দরে ৩৭ হাজারের মতো কন্টেইনার রয়েছে যা ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অনেক কম।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম বলেন, কাস্টম হাউসে শুল্কায়নসহ স্বাভাবিক কার্যক্রম চলছে। আমরা নিয়মিত অফিস করছি। সবকিছু সচল রয়েছে। ইপিজেডগুলোতেও স্বাভাবিক উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত আছে। চট্টগ্রাম ইপিজেডের জিএম মশিউদ্দিন বিন মেজবাহ বলেন, চালু ১৪৬টি কারখানা সচল আছে। কারখানার নিজস্ব পরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রমিকদের আনা নেওয়া করা হচ্ছে। কর্ণফুলী ইপিজেড এবং বেসরকারি কোরিয়ান ইপিজেডের সবকটি কারখানা চালু আছে।
বিজিএমইএর নেতারা জানান, চট্টগ্রামে চালু দুই শতাধিক কারখানায় উৎপাদন চলছে। উৎপাদিত পণ্য জাহাজীকরণ এবং আমদানিকৃত কাঁচামাল কারখানায় পৌঁছাতে কোন সমস্যা হচ্ছে না। চাক্তাই খাতুনগঞ্জে স্বাভাবিকের চেয়ে বেচাকেনা কমে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, লকডাউন দীর্ঘ হলে তাদের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। একই কথা জানান মার্কেট, বিপনী বিতান ও শপিং মলের ব্যবাসয়ীরা। তারা বলেন, লকডাউন দীর্ঘ হলে তাদের পথে বসা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না।
এদিকে নগরীতে রিকশা এবং ব্যক্তিগত যানবাহন ছাড়া অন্য কোন পরিবহন তেমন নেই। লকডাউন বাস্তবায়নে মাঠে সক্রিয় প্রশাসন। প্রধান প্রধান সড়ক প্রায় ফাঁকা থাকলেও অলিগলিতে মানুষের জটলা আড্ডা আগের মতোই আছে। তবে আগের লকডাউনের তুলনায় চলমান কঠোর লকডাউনে মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি বিশেষ করে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার প্রবণতা কিছুটা বেড়েছে। র্যাব ও পুলিশের চেকপোস্টের পাশাপাশি জেলা প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলছে। গতকাল ব্যাংক খোলা থাকলেও গ্রাহকের ভিড় তেমন ছিলো না। কাঁচা বাজারে মানুষের ভিড় আছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন