আফগানিস্তান থেকে নাইন ইলেভেন অর্থাৎ, ১১ সেপ্টেম্বরের আগেই বাকি সেনা প্রত্যাহার করবেন বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এই সিদ্ধান্তের সাথে নিজেদের নিরাপত্তাও সংযুক্ত বলে মনে করছে ভারত। আফগানিস্তান আবার তালিবানদের কব্জায় যেতে পারে এবং সে ক্ষেত্রে লাভবান হতে পারে পাকিস্তান, এমনটাই মনে করছে তারা। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পরে ন্যাটো জোটের সাথে ব্রিটিশ সেনারাও আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার শুরু করবে।
বাইডেনের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে আমেরিকার ভিতরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। রিপাবলিকান এমনকি ডেমোক্র্যাটদেরও একাংশ এর বিরুদ্ধে। পাশাপাশি এই সিদ্ধান্তে গোটা দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়েও প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হল বলে মনে করছে ক‚টনৈতিক শিবির। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়েছিল। তার পরেই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আফগানিস্তানে সামরিক অভিযানে যায় যুক্তরাষ্ট্র। সেই ঘটনার ২০ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। এই মাসের ২৪ তারিখ থেকে শুরু হচ্ছে আফগানিস্তানে শান্তি ফেরানো সংক্রান্ত আলোচনাচক্র, ইস্তানবুল কনফারেন্স। আয়োজক তুরস্ক। সেখানে যোগ দেবে ভারত, পাকিস্তান, আমেরিকা, ব্রিটেন, রশিয়া, ফ্রান্সসহ কুড়িটি দেশ।
ক‚টনৈতিক সূত্রের মতে, বাইডেন সরকারের নতুন কাবুল নীতি নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে ইতিমধ্যেই দু’ দফা কথা হয়েছে আমেরিকার প্রতিনিধিদের। প্রথমে সে দেশের আফগানিস্তান সংক্রান্ত বিশেষ দূত জালমেই খলিলজাদ এবং তার পর আমেরিকার প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন-এর সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে তার। কাবুল সমস্যার আশু সমাধান যে বাইডেন চাইছেন, সে ব্যাপারে স্পষ্ট ইঙ্গিত ওয়াশিংটন থেকে তখনই পাওয়া গিয়েছিল।
তবে তালিবান নেতৃত্বের হামলা বন্ধের প্রতিশ্রæতি যতক্ষণ না বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, সম্প‚র্ণ সেনা প্রত্যাহার না করাই বিবেচকের কাজ হবে বলে মনে করে সাউথ বøক। ফলে বাইডেনের সেনা সরানোর নীতি ভারতের জন্য স্বস্তিজনক নয়। পাশাপাশি আফগান শান্তি প্রক্রিয়ায় তুরস্ককে সামিল করার কথা ঘোষণা করেছে আমেরিকা, যাতে ঘোর আপত্তি রয়েছে ভারতের। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মঞ্চগুলিতে তুরস্ক এবং পাকিস্তানের অক্ষ ভারতের বিরুদ্ধে কার্যত ঝাঁপিয়ে পড়েছে। কাশ্মীর থেকে ৩৭০ প্রত্যাহার করার পর তুরস্ক এবং পাকিস্তান ধারাবাহিক ভাবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভারত-বিরোধী বক্তৃতা দিয়ে গিয়েছে। ফলে আপাতত সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে দিল্লি।
গত বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। এরপর ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল স্টলটেনবার্গ জানিয়ে দেন, ন্যাটোর দেশগুলিও ১ মে থেকে পর্যায়ক্রমে সেনা সরিয়ে নেবে। তবে তারা জানিয়ে দিয়েছে, প্রত্যাহার করার সময় তালেবান যদি আক্রমণ করে, তবে তাদের উপযুক্ত জবাব দেয়া হবে। ন্যাটো জানিয়েছে, আফগানিস্তানকে নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। ন্যাটোকে ধন্যবাদ দিয়ে অ্যামেরিকা জানিয়েছে, তারা কখনোই ন্যাটোর দেশগুলির এই সহযোগিতা ও পাশে থাকার কথা ভুলবে না।
এদিকে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রসচিব ডমিনিক রাব বলেছেন, ‘আমরা গত ২০ বছরে প্রাপ্ত সফলতা রক্ষার করে স্বশাসনের জন্য আফগানিস্তানের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সন্ত্রাসবাদ বিরোধী সমর্থন অব্যাহত রেখে আমাদের বাহিনীকে সুশৃঙ্খলভাবে ফেরত আনার পক্ষে সমর্থন করব।’ সূত্র : স্কাই নিউজ, এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন