শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

লকডাউনের প্রথম দিনে কড়াকড়ি : দ্বিতীয় দিনে ঢিলেঢালা

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৭ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০২ এএম

করোনার সংক্রমণরোধে গত বুধবার থেকে সারাদেশে সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। এই লকডাউনের প্রথমদিন যতটা কড়াকড়ি ছিল তা দ্বিতীয় দিনে অনেকটাই ঢিলেঢালা। প্রথম দিনে রাজধানীর রাজপথ ছিল ফাঁকা। গাড়ি চলাচল করেছে হাতেগোনা। তাও আবার সেগুলোকে বার বার পুলিশের চেকপোস্টের মুখোমুখি হতে হয়েছে। মুভমেন্ট পাস দেখাতে না পারলে পুলিশ রাস্তা থেকে ফিরিয়ে দিয়েছে গাড়ি। পক্ষান্তরে গতকাল বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনে রাজধানীর ব্যস্ত এলাকার রাস্তায় ছিল ভয়াবহ যানজট। পুলিশের শৈথল্যভাবের কারণেই এমন অবস্থা হয়েছে।

গতকাল রাজধানীর মতিঝিল, দৈনিকবাংলা, ফকিরাপুল, শান্তিনগর, মগবাজার, কাওরানবাজার ঘুরে দেকা গেছে লকডাউনের ঢিলেঢালা ভাব। প্রথমদিন প্রধান রাস্তায় কোনো রিকশার দেখা না মিললেও দ্বিতীয় দিনে নগরীর প্রধান রাস্তা ছিল মূলত রিকশার দখলে। যদিও কোথাও কোথাও পুলিশকে রিকশা আটকাতে দেখা গেছে। কিন্তু এত রিকশা নেমে পড়েছে রাস্তায় যে কত আটকাবে? তাছাড়া ব্যক্তিগত কার চলাচল আগের দিনের তুলনায় অনেক বেশি লক্ষ্য করা গেছে।

মতিঝিল এলাকার বাসিন্দা জাহেদুর রহমান জানান, বুধবার লকডাউনের প্রথম দিনে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মতিঝিল থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত গোটা দশেক গাড়ি চোখে পড়েনি। যারাই নেমেছে জরুরি প্রয়োজন আর পুলিশের মুভমেন্ট পাস দেখাতে হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় দিনে সেই চিত্র পুরোটাই উল্টো। গাড়ির চাপে পুলিশকে মুভমেন্ট পাস চেক করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়েছে। এক পর্যায়ে চেকপোস্টের কারণে যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে গতকাল সকালে প্রগতি সরণীর নতুন বাজার এলাকায় দেখা গেছে ভয়াবহ যানজট। নতুনবাজার থেকে যানজট একদিকে কুড়িল এবং আরেকদিকে রামপুরা গিয়ে ঠেকেছে। এ দৃশ্য দেখে মনেই হয়নি রাজধানীতে চলাচলে কোনো নিষেধাজ্ঞা চলছে। তবে লকডাউনে মহাসড়কগুলোতে পুলিশ কোনো চাড় দেয়নি। মালবাহী ট্রাক বা কাভার্ডভ্যান চলাচল করতে দিলেও প্রাইভেট কার থামিয়ে উপযুক্ত জবাব বা মুভমেন্ট পাস না থাকলে পুলিশ ছাড় দেয়নি। এ কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-আরিচা, ঢাকা-গাজীপুর মহাসড়ক ছিল অনেকটাই নিথর নীরব।

এদিকে, রাজধানীর প্রধান রাস্তায় লকডাউনের প্রভাব দেখা গেলেও পাড়া মহল্লার অলিগলি ছিল সরব। প্রথম দিন ভয়ে আতঙ্কে মানুষ ঘর থেকে বের না হলেও দ্বিতীয় দিনে তার কোনো লক্ষণ চোখে পড়েনি। পাড়া মহল্লার অলিতে-গলিতে মানুষের চলাচল স্বাভাবিক ছিল। ছিল উঠতি বয়সীদের আড্ডা। দোকানপাট ছিল সবই খোলা। আর কাঁচাবাজারের চিত্র প্রতিদিনকার মতোই। কাওরানবাজারে প্রথম দিনেও লকডাউনের কোনো প্রভাব ছিল না, দ্বিতীয় দিনেও না। এমনকি সেখানে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কোনো তৎপরতাও লক্ষ্য করা যায় নি। ভিড় ঠেলে মানুষকে বেচাকেনা করতে দেখা গেছে। যদিও সেখানকার ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন, বেচাকেনা স্বভাবিকের তুলনায় কিছুটা কম। তবে সর্বাত্মক লকডাউনের সঙ্গে তা সাদৃশ্যপূর্ণ ছিল না।

দ্বিতীয় দিনে খুলেছে ব্যাংকগুলো। তবে গ্রাহকদের উপস্থিতি কম। মতিঝিলে সীমিত পরিসরে বেশকিছু ব্যাংকের শাখা এ চিত্র দেখা গেছে। যদিও সর্বাত্মক লকডাউনে ব্যাংক খোলা থাকা বা না থাকা নিয়ে হয়েছে লঙ্কাকান্ড। গতকাল ব্যাংক খুললেই জরুরি প্রয়োজন ছাড়া গ্রাহকরা খুব একটা ব্যাংকমুখি হচ্ছেন বলে মনে হয়নি। শুধুমাত্র ব্যবসায়ীদের জরুরি প্রয়োজনে কিছূ লেনেদেন সম্পন্ন হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, লকডাউনের দ্বিতীয় দিনেই অনেকটা ঢিলেঢালাভাবে পালিত হচ্ছে বিধিনিষেধ। প্রথম দিন পুলিশ যেখানে মুভমেন্ট পাস থাকলেও যৌক্তিক কারণ না দেখালে জরিমানা করেছে, সেখানে দ্বিতীয় দিনে সেখানে মুভমেন্ট পাসই চেক করছে না পুলিশ। নিজেদের মতো করে দুই-একটি প্রাইভেটকার থামিয়ে মুভমেন্ট পাস চেক করলেও মোটরসাইকেল বা রিকশার যাত্রীদের কোনো ধরনের মুভমেন্ট পাস চেক করছেন না পুলিশ সদস্যরা।
গতকাল রাজধানীর রামপুরা, মেরুলবাড্ডা ও নতুন বাজার এলাকায় অবস্থিত তিনটি পুলিশের চেকপোস্ট এ চিত্র দেখা যায়।

এই তিনটি চেকপোস্টে ৩০ মিনিট করে দাঁড়িয়ে সরেজমিনে দেখা যায়, চেকপোস্টগুলো দিয়ে যাতায়াত করা ৯০ শতাংশ গাড়ি থামাচ্ছে না পুলিশ। গাড়িতে যারা যাচ্ছেন তাদের মুভমেন্ট পাস আছে কি না তাও চেক করছেন না তারা। তবে মাঝেমধ্যে দুয়েকটা প্রাইভেট কার থামিয়ে চেক করতে দেখা গেছে। মুভমেন্ট পাস চেক না করার বিষয়ে চেকপোস্ট ইনচার্জদের জিজ্ঞাসা করলে তারা বলেন, যাদের সন্দেহজনক মনে হচ্ছে, তাদের চেক করা হচ্ছে। এছাড়া এত মানুষ যাতায়াত করছে, কত জনের মুভমেন্ট পাস চেক করা সম্ভব? আর গাড়ি থামিয়ে চেক করতে গেলে রাস্তায় সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। তাই কিছুক্ষণ থেমে থেমে মুভমেন্ট পাস চেক করছি আমরা। এদিকে রামপুরা থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত দেখা যায়, সম্পূর্ণ রাস্তা প্রাইভেটকার ও রিকশার দখলে। কে, কেন বা কী প্রয়োজনে বের হয়েছে বা সেই প্রয়োজনটি জরুরি কি না তা নির্ণয় করার কেউ নেই। আবার রাস্তা ফাঁকা হওয়ায় অনেকে রিকশা নিয়ে ঘোরাঘুরি করছেন। যা বিধিনিষেধর প্রথম দিন মোটেই দেখা যায়নি। নতুন বাজার এলাকার রিকশা চালক মো. রমজান মিয়া বলেন, প্রথম দিন রাস্তায় পুলিশ অনেক কড়া ছিল। আজ গতকালের মতো চেক করছে না। মাঝে-মধ্যে দুয়েকটা গাড়ি চেক করছে। আজ রাস্তায় পুলিশ অনেক শান্ত।

এদিকে সরকারি বিধিনিষেধ মানার বিষয়ে পুলিশ সদরদফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, সরকার যেসব নির্দেশনা দিয়েছে তার আলোকেই পুলিশ কাজ করছে। এছাড়া করোনাকালে দায়িত্ব পালনের জন্য আমাদের একটি সুলিখিতি ও আন্তর্জাতিক মানের এসওপি (স্ট্যান্ডিং অপারেটিং প্রসিডিওর) রয়েছে। সেখানে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে পুলিশের দায়িত্ব-কর্তব্য ও তা পালনের উপায়। সেই এসওপি অনুসরণ করে সরকারি নির্দেশনার আলোকে দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (13)
Mohi Uddin ১৬ এপ্রিল, ২০২১, ১২:৪৭ এএম says : 0
চারচাকা ছোট ছোট গাড়ি দেখলে ছেড়ে দেবেন রিক্সা অটো গাড়ি সিএনজি দেখলে আটকে দেবেন. আপনারা কি করে জানেন কোন গাড়িতে কোন যানবাহনে করোনাভাইরাস আছে অথবা নেই...
Total Reply(0)
Alif Hasan ১৬ এপ্রিল, ২০২১, ১২:৪৮ এএম says : 0
আজকে থেকে সব চলবে মসজিদ মাদ্রাসা বাদে
Total Reply(0)
Amzad DP ১৬ এপ্রিল, ২০২১, ১২:৪৮ এএম says : 0
অভাব ও লকডাউন একে অপরের বিপরীত।
Total Reply(0)
Sujayet Shamim Sumon ১৬ এপ্রিল, ২০২১, ১২:৪৯ এএম says : 0
অসহায় গরীব রিক্সাওয়ালাদের জীবিকার ওপর চরম জুলুম করা হচ্ছে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে রিক্সা উল্টে রাখা হয়েছে। সাধারণ চাকুরিজীবীরা যেতে পারছেন না। অপরদিকে টুপিপড়া মুসল্লিরা যাতে এক জায়গায় হতে না পারে তাই মসজিদে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিয়ম নিষেধ জারি করা হয়েছে। চলছে বহু বছরের পুরানো মামলায় প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের গ্ৰেফতার প্রক্রিয়া। দেশের মানুষের কাছে বোধগম্য হয়ে গেছে এটা পলিটিক্যাল লকডাউন।
Total Reply(0)
রিয়াদ আহসান রানা ১৬ এপ্রিল, ২০২১, ১২:৪৯ এএম says : 0
প্রতিবারই ঘোষণার পর প্রথম দিনটা লকডাউনের মত মনে হয়।দ্বিতীয় দিন থেকে সেটা স্বাভাবিক লকডাউনে(আমাদের দেশে যেটা হয়) পরিনত হয়।
Total Reply(0)
জান্নাতুল নাঈম মনি ১৬ এপ্রিল, ২০২১, ১২:৫০ এএম says : 0
লকডাউন উঠিয়ে দিন। এসব কন্ডিশন করা লকডাউনে অর্থনীতি আরো ডাউন হয়ে যাচ্ছে। ছোট খাট ব্যবসায়ী আর খেটে খাওয়া মানুষেরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এমনিতেই বিশ্ব অর্থনীতির অবস্থা খারাপ। ব্রাজিল উত্তর কোরিয়ার মত দেশে অলরেডি খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। আল্লাহ না করুন আমাদের দেশে এমন অবস্থা হলে কি হবে কল্পনাও করতে পারছি না! দশের কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নিন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে কঠোর পদক্ষেপ নিন প্রয়োজনে। কিন্তু এই মানুষ মারার কল নামক লকডাউন উঠিয়ে নিন।
Total Reply(0)
Md Saon Rahaman Jony ১৬ এপ্রিল, ২০২১, ১২:৫০ এএম says : 0
যারা করোনা ভাইরাস কে ভয় পাচ্ছেন অনুগ্রহ করে গার্মেন্টসে আশ্রয় নিন নিরাপদে থাকবেন!
Total Reply(0)
Mostak Ahmad ১৬ এপ্রিল, ২০২১, ১২:৫০ এএম says : 0
একটা প্রাইভেট কারের মালিক হলেই চলে, লকডাউন তখন আপনার কোনো ক্ষতিই করতে পারবেনা চলাচলে...
Total Reply(0)
MD Shawon ১৬ এপ্রিল, ২০২১, ১২:৫০ এএম says : 0
দেশের জনগণ এবং প্রশাসনের উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ কমে গেছে।
Total Reply(0)
ধূসর সময় ১৬ এপ্রিল, ২০২১, ১২:৫০ এএম says : 0
মসজিদ বন্ধ(২০ জন অতি নগন্য) অথচ গার্মেন্টস খোলা! মানে বাংলাদেশে গার্মেন্টস মসজিদের চেয়ে উত্তম!
Total Reply(0)
Md Palash ১৬ এপ্রিল, ২০২১, ১২:৫১ এএম says : 0
আজকে কিছুটা বেশি, কালকে এদের দেখাদেখি আরেকটু বেশি হইব। পরশু পুরাপুরি বেশি হইয়া যাইব। একজনের দেখাদেখি আরেকজন বাইর হইব। একজন অফিস খুলব, তার দেখাদেখি আর দশজন খুলব। লকডাউনরে গোডাউনে পাঠানো সাড়া।
Total Reply(0)
akthar ১৬ এপ্রিল, ২০২১, ৪:০৯ এএম says : 0
সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে /
Total Reply(0)
akthar ১৬ এপ্রিল, ২০২১, ৪:১৫ এএম says : 0
সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে /
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন