করোনার সংক্রমণরোধে গত বুধবার থেকে সারাদেশে সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। এই লকডাউনের প্রথমদিন যতটা কড়াকড়ি ছিল তা দ্বিতীয় দিনে অনেকটাই ঢিলেঢালা। প্রথম দিনে রাজধানীর রাজপথ ছিল ফাঁকা। গাড়ি চলাচল করেছে হাতেগোনা। তাও আবার সেগুলোকে বার বার পুলিশের চেকপোস্টের মুখোমুখি হতে হয়েছে। মুভমেন্ট পাস দেখাতে না পারলে পুলিশ রাস্তা থেকে ফিরিয়ে দিয়েছে গাড়ি। পক্ষান্তরে গতকাল বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনে রাজধানীর ব্যস্ত এলাকার রাস্তায় ছিল ভয়াবহ যানজট। পুলিশের শৈথল্যভাবের কারণেই এমন অবস্থা হয়েছে।
গতকাল রাজধানীর মতিঝিল, দৈনিকবাংলা, ফকিরাপুল, শান্তিনগর, মগবাজার, কাওরানবাজার ঘুরে দেকা গেছে লকডাউনের ঢিলেঢালা ভাব। প্রথমদিন প্রধান রাস্তায় কোনো রিকশার দেখা না মিললেও দ্বিতীয় দিনে নগরীর প্রধান রাস্তা ছিল মূলত রিকশার দখলে। যদিও কোথাও কোথাও পুলিশকে রিকশা আটকাতে দেখা গেছে। কিন্তু এত রিকশা নেমে পড়েছে রাস্তায় যে কত আটকাবে? তাছাড়া ব্যক্তিগত কার চলাচল আগের দিনের তুলনায় অনেক বেশি লক্ষ্য করা গেছে।
মতিঝিল এলাকার বাসিন্দা জাহেদুর রহমান জানান, বুধবার লকডাউনের প্রথম দিনে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মতিঝিল থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত গোটা দশেক গাড়ি চোখে পড়েনি। যারাই নেমেছে জরুরি প্রয়োজন আর পুলিশের মুভমেন্ট পাস দেখাতে হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় দিনে সেই চিত্র পুরোটাই উল্টো। গাড়ির চাপে পুলিশকে মুভমেন্ট পাস চেক করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়েছে। এক পর্যায়ে চেকপোস্টের কারণে যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে গতকাল সকালে প্রগতি সরণীর নতুন বাজার এলাকায় দেখা গেছে ভয়াবহ যানজট। নতুনবাজার থেকে যানজট একদিকে কুড়িল এবং আরেকদিকে রামপুরা গিয়ে ঠেকেছে। এ দৃশ্য দেখে মনেই হয়নি রাজধানীতে চলাচলে কোনো নিষেধাজ্ঞা চলছে। তবে লকডাউনে মহাসড়কগুলোতে পুলিশ কোনো চাড় দেয়নি। মালবাহী ট্রাক বা কাভার্ডভ্যান চলাচল করতে দিলেও প্রাইভেট কার থামিয়ে উপযুক্ত জবাব বা মুভমেন্ট পাস না থাকলে পুলিশ ছাড় দেয়নি। এ কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-আরিচা, ঢাকা-গাজীপুর মহাসড়ক ছিল অনেকটাই নিথর নীরব।
এদিকে, রাজধানীর প্রধান রাস্তায় লকডাউনের প্রভাব দেখা গেলেও পাড়া মহল্লার অলিগলি ছিল সরব। প্রথম দিন ভয়ে আতঙ্কে মানুষ ঘর থেকে বের না হলেও দ্বিতীয় দিনে তার কোনো লক্ষণ চোখে পড়েনি। পাড়া মহল্লার অলিতে-গলিতে মানুষের চলাচল স্বাভাবিক ছিল। ছিল উঠতি বয়সীদের আড্ডা। দোকানপাট ছিল সবই খোলা। আর কাঁচাবাজারের চিত্র প্রতিদিনকার মতোই। কাওরানবাজারে প্রথম দিনেও লকডাউনের কোনো প্রভাব ছিল না, দ্বিতীয় দিনেও না। এমনকি সেখানে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কোনো তৎপরতাও লক্ষ্য করা যায় নি। ভিড় ঠেলে মানুষকে বেচাকেনা করতে দেখা গেছে। যদিও সেখানকার ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন, বেচাকেনা স্বভাবিকের তুলনায় কিছুটা কম। তবে সর্বাত্মক লকডাউনের সঙ্গে তা সাদৃশ্যপূর্ণ ছিল না।
দ্বিতীয় দিনে খুলেছে ব্যাংকগুলো। তবে গ্রাহকদের উপস্থিতি কম। মতিঝিলে সীমিত পরিসরে বেশকিছু ব্যাংকের শাখা এ চিত্র দেখা গেছে। যদিও সর্বাত্মক লকডাউনে ব্যাংক খোলা থাকা বা না থাকা নিয়ে হয়েছে লঙ্কাকান্ড। গতকাল ব্যাংক খুললেই জরুরি প্রয়োজন ছাড়া গ্রাহকরা খুব একটা ব্যাংকমুখি হচ্ছেন বলে মনে হয়নি। শুধুমাত্র ব্যবসায়ীদের জরুরি প্রয়োজনে কিছূ লেনেদেন সম্পন্ন হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, লকডাউনের দ্বিতীয় দিনেই অনেকটা ঢিলেঢালাভাবে পালিত হচ্ছে বিধিনিষেধ। প্রথম দিন পুলিশ যেখানে মুভমেন্ট পাস থাকলেও যৌক্তিক কারণ না দেখালে জরিমানা করেছে, সেখানে দ্বিতীয় দিনে সেখানে মুভমেন্ট পাসই চেক করছে না পুলিশ। নিজেদের মতো করে দুই-একটি প্রাইভেটকার থামিয়ে মুভমেন্ট পাস চেক করলেও মোটরসাইকেল বা রিকশার যাত্রীদের কোনো ধরনের মুভমেন্ট পাস চেক করছেন না পুলিশ সদস্যরা।
গতকাল রাজধানীর রামপুরা, মেরুলবাড্ডা ও নতুন বাজার এলাকায় অবস্থিত তিনটি পুলিশের চেকপোস্ট এ চিত্র দেখা যায়।
এই তিনটি চেকপোস্টে ৩০ মিনিট করে দাঁড়িয়ে সরেজমিনে দেখা যায়, চেকপোস্টগুলো দিয়ে যাতায়াত করা ৯০ শতাংশ গাড়ি থামাচ্ছে না পুলিশ। গাড়িতে যারা যাচ্ছেন তাদের মুভমেন্ট পাস আছে কি না তাও চেক করছেন না তারা। তবে মাঝেমধ্যে দুয়েকটা প্রাইভেট কার থামিয়ে চেক করতে দেখা গেছে। মুভমেন্ট পাস চেক না করার বিষয়ে চেকপোস্ট ইনচার্জদের জিজ্ঞাসা করলে তারা বলেন, যাদের সন্দেহজনক মনে হচ্ছে, তাদের চেক করা হচ্ছে। এছাড়া এত মানুষ যাতায়াত করছে, কত জনের মুভমেন্ট পাস চেক করা সম্ভব? আর গাড়ি থামিয়ে চেক করতে গেলে রাস্তায় সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। তাই কিছুক্ষণ থেমে থেমে মুভমেন্ট পাস চেক করছি আমরা। এদিকে রামপুরা থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত দেখা যায়, সম্পূর্ণ রাস্তা প্রাইভেটকার ও রিকশার দখলে। কে, কেন বা কী প্রয়োজনে বের হয়েছে বা সেই প্রয়োজনটি জরুরি কি না তা নির্ণয় করার কেউ নেই। আবার রাস্তা ফাঁকা হওয়ায় অনেকে রিকশা নিয়ে ঘোরাঘুরি করছেন। যা বিধিনিষেধর প্রথম দিন মোটেই দেখা যায়নি। নতুন বাজার এলাকার রিকশা চালক মো. রমজান মিয়া বলেন, প্রথম দিন রাস্তায় পুলিশ অনেক কড়া ছিল। আজ গতকালের মতো চেক করছে না। মাঝে-মধ্যে দুয়েকটা গাড়ি চেক করছে। আজ রাস্তায় পুলিশ অনেক শান্ত।
এদিকে সরকারি বিধিনিষেধ মানার বিষয়ে পুলিশ সদরদফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, সরকার যেসব নির্দেশনা দিয়েছে তার আলোকেই পুলিশ কাজ করছে। এছাড়া করোনাকালে দায়িত্ব পালনের জন্য আমাদের একটি সুলিখিতি ও আন্তর্জাতিক মানের এসওপি (স্ট্যান্ডিং অপারেটিং প্রসিডিওর) রয়েছে। সেখানে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে পুলিশের দায়িত্ব-কর্তব্য ও তা পালনের উপায়। সেই এসওপি অনুসরণ করে সরকারি নির্দেশনার আলোকে দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন