রাজধানীর শনিরআখড়ায় এক বর্গকিলোমিটার এলাকার বিভিন্ন স্পটে প্রায় অর্ধশত ভিক্ষুক রাস্তায় বসে ভিক্ষা করছেন। যাত্রাবাড়িতেও দেখা গেল একই চিত্র। লকডাউনে অনেকেই রাজধানী ছেড়ে গ্রামের বাড়ি চলে গেছেন। কিন্তু নিম্নআয়ের যারা রয়েছেন- তাদের কারো কারো পরিবারের বয়োবৃদ্ধ সদস্য ভিক্ষাবৃত্তিতে নেমেছেন। এদের একজন রুহুল। তিনি বলেন, ভীষণ কষ্টে আছি। এবারের লকডাউনে কেউ কোনো সাহায্য করেনি। খাওয়া-দাওয়া নিয়ে কত যে কষ্টে আছি আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে কথাগুলো বলছিলেন তখন পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন রিকশাচালক হোসেন আলী। তিনি বলেন, লকডাউনের কারণে দিনমজুর যারা তারা এখন গৃহবন্দি। সবকিছুই বন্ধ। যে কারণে কোনো আয় নেই। ফলে রিকশা নিয়ে নেমেছি; পরিবার ভিক্ষা করছে।
২০২০ সালের দেশে করোনা মহামারি শুরু হলে সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউন দেওয়া হয়। সে সময় সরকার নানাভাবে সাহায্য সহায়তা ও প্রণোদনা দেয়। সমাজের বৃত্তবান মানুষও গরিব ও দুস্থদের নানাভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেন। রাজধানী ঢাকায় প্রতিদিন বিভিন্ন স্পটে সাধারণ গরিব মানুষকে সাহায্য সহায়তার দৃশ্য দেখা যেত। এবার সরকার গরিবদের সহায়তার ঘোষণা দিলেও সেটা ‘কাজীর গরু কেতাবে আছে গোয়ালে নেই’ প্রবাদের মতো হয়ে গেছে। গত বছর ৬৪ জেলায় ত্রাণ তৎপরতা ও গরিব মানুষের তালিকার তদারকির জন্য ৬৪ জন সচিবকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু দলীয়করণ এবং আমলাদের দুর্র্নীতির কারণে বেশিরভাগ গরিব সরকারি সহায়তা পায়নি। সুজন, সিপিডি, টিআইবি ওই সময়ের ত্রাণ নিয়ে দুর্নীতি ও গরিবদের সরকারি ত্রাণ না পাওয়ার চিত্র তুলে ধরেছে। এবারও ৬৪ জেলায় সচিবদের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাউকে সাহায্য সহায়তা করা হয়েছে বলে মিডিয়ায় খবর আসেনি।
মুজগুন্নী এলাকার হতদরিদ্র কুলসুম বেগম জানান, এবার লকডাউনে তেমন কোনো সহযোগিতা পাননি। গত বৃহস্পতিবার খুলনা ফুড ব্যাংকের পক্ষ থেকে কিছু ত্রাণ পেয়েছেন।
যাত্রাবাড়ি এলাকার ইজিবাইক চালক আশরাফুল আলম বলেন, ইজিবাইক নিয়ে রাস্তায় বের হতে দিচ্ছে না। বের হলেও ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে। অনেক কষ্ট করে রোজা রাখতে হচ্ছে। আমাদের প্রতিদিন আয় প্রতিদিন ব্যয়। তা বন্ধ থাকায় খুব কষ্ট করে রোজা রাখতে হচ্ছে। গত বছর লকডাউনের সময় অনেকে সহযোগিতা করেছেন। কিন্তু এবার কেউ কোনো সাহায্য করেনি। আমাদের বসিয়ে রেখেছে; কিন্তু কোনো সহযোগিতা করছে না।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলমান কঠোর লকডাউনে গাড়িচালক, দিনমজুর, কৃষিশ্রমিক, দোকানদার, ফুটপাতের ছোট ব্যবসায়ী এমনকী খেটে খাওয়া কর্মজীবীদের বেশিরভাগই এখন ঘরবন্দি। তাদের জীবন চলছে ভীষণ কষ্টে। অনেকেই খাদ্য সঙ্কটে আছেন। রিকশাচালকরা রিকশা চালালেও অন্যেরা ঘরে বসে নিদারুণ কষ্টে রোগা রাখছেন।
নিম্নআয়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানীতে বসবাস করেন, এমন দিন আনে দিন খায় এমন মানুষ এখন সবচেয়ে বেশি বিপদে আছেন। গতবছর লকডাউনে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সহযোগিতা করলেও এবার তাদের কেউ সহযোগিতা করছে না অভিযোগ উঠেছে।
চলমান এই লকডাউনে ডেমরা, শ্যামপুরের কর্মহীন শ্রমিকের মলিন মুখে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের শঙ্কাই বেশি। তারা অনেকেই শহর ছাড়ার চিন্তা করছেন। রমজান মাসে এ লকডাউনে তাদের জীবনে নেমে এসেছে অবর্ণনীয় কষ্ট। সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবান মানুষ এই করোনা সংকট মোকাবিলায় তাদের পাশে দাঁড়ানোর দাবি জানান তারা।
চলমান লকডাউনে নিম্নআয়ের মানুষের পাশাপাশি মধ্যবিত্তরাও পড়েছেন বিপাকে। করোনার মধ্যে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা যখন কমেছে, সে সময় নিত্যপণ্যের বাজারে দ্রব্যমূল্য বেড়েছে। প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে। এমনকি কিছু কিছু পণ্যের কেজি একশ’ টাকা ছাড়িয়েছে। চালের দাম হুহু করে বাড়ছে। এতে লকডাউনে ঘরে বসে থাকা ভোক্তাদের কষ্টও বেড়েছে। প্রতিনিয়ত চাল, ডাল, তেলসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন