এবারের করোনা মহামারীও গত বছরের মত দক্ষিণাঞ্চলের অন্তত ৪০ হাজার তরমুজ চাষির ভাগ্য বিপর্যয়ের আশংক সৃষ্টি করেছে। ক্রেতার অভাবে অনেক এলাকার তরমুজ বিক্রী হচ্ছে না। চলতি মৌসুমে দেশে যে প্রায় ৪২ হাজার হেক্টর জমিতে রসালো ফল তরমুজের আবাদ হয়েছে, তার প্রায় ২৫ হেক্টরই হয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলায়। কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই’র মতে চলতি রবি মৌসুমে দক্ষিনাঞ্চলের তরমুজের ফলন অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক, হেক্টরপ্রতি ৫০ টন। সে হিসেবে এবার দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ টন তরমুজ উৎপাদনের আশার কথা শুনিয়েছে ডিএই।
কিন্তু শুরু থেকেই দাম নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারেননি চাষিরা। মাঠে ১০ থেকে ১২ টাকা কেজি দরে তরমুজ বিক্রী করতে হয়েছে। তিনহাত ঘুরে তা ক্রেতার কাছে বিক্রী হচ্ছিল ৩৫-৪০ টাকা কেজি দরে। ইতোমধ্যে প্রায় অর্ধেক তরমুজ মাঠ পর্যায়ে বিক্রী হলেও করোনা মহামারী সংকটে লকডাউনে এখন তরমুজের মাঠে ফরিয়া সংকট। কারন তরমুজ পরিবহন কিছুটা জটিল। উপরন্তু লকডাউনের কারনে খুচরা পর্যায়েও ক্রেতা সংকটে ফরিয়ারা মাঠ পর্যায়ে তরমুজ কিনছে না। ফলে ১০-১২ টাকার তরমুজ এখন ৫-৭ টাকা কেজিতেও বিক্রী করতে পারছেন না চাষিরা।
ডিএই’র হিসেব মতে ২৫ হাজার হেক্টরে উৎপাদিত সাড়ে ১২ লাখ টন তরমুজ মাঠ পর্যায়ে ১০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও এবার দক্ষিণাঞ্চলের চাষিদের হাতে অন্তত ১২৫ কোটি টাকা আসার কথা। কিন্তু করোনা মহামারীর দরপতন সে আশাকে ইতোমধ্যে চরম দুরাশায় পরিনত করেছে। এরপরেও চাষিরা অপেক্ষা করছেন দ্বিতীয় দফার চলতি লকডাউন শেষে পরিস্থিতি ঘুরে দাড়াবার আশায়।
কুমড়া পরিবারের সুমিষ্ট রসালো ফল তরমুজ তার উৎপত্তিস্থল আফ্রিকা মহাদেশ ছাড়িয়ে বহু আগে থেকেই বাংলাদেশ সহ দক্ষিন-পূর্ব এশিয়া এবং বিশ্বের অনেক দেশেই আবাদ হচ্ছে। অত্যন্ত জনপ্রিয় এ ফল মূলত মৌমাছির সাহায্যে পরাগায়িত হয়ে উৎপাদন নিশ্চিত হয়। বর্ষজীবী, দিবস দৈর্ঘ নিরপেক্ষ ও লতানো প্রকৃতির তরমুজের গাছ বেলে দো-আঁশ থেকে এটেল দো-আঁশ পর্যন্ত সব ধরনের মাটিতে আবাদ হচ্ছে। নদ-নদীবহুল দক্ষিনাঞ্চলের নোনা পানিমূক্ত চরাঞ্চলের পলি মাটিতেও তরমুজের ভাল ফলন হয়ে থাকে। ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর ও বরিশালের বিভিন্ন নদ-নদীর চরাঞ্চলে তরমুজের ভাল আবাদ ও উৎপাদন হলেও গত কয়েক বছর ধরে উজানের প্রবাহ সংকটের সাথে এবার অনাবৃষ্টিতে সাগরের নোনা পানি অতিমাত্রায় দক্ষিনাঞ্চলে উঠে আসায় আবাদ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। ফলে চলতি মৌসুমে আবাদ গত বছরের সমান হলেও বাড়তি লক্ষ্যে পৌছান যায়নি।
মুলত ৫.৫ থেকে ৭.০ পিএইচ মাত্রার জমি সুমিষ্ট তরমুজ আবাদের উপযোগী হলেও কোন অবস্থাতেই অতিরিক্ত লবনাক্ততা সহ্য করতে পারেনা। খরা প্রতিরোধক এ ফসল অপেক্ষাকৃত শুষ্ক পরিবেশে বড় হয়ে ওঠে। যথেষ্ট পরিমান ভিটামিন-এ, রিবোফ্লাভিন, থায়ামিন ও পেপটিন সমৃদ্ধ রসালো এ ফল চীনা ভেষজবীদদের মতে রক্তচাপ স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখতে সহায়তা করে। পাকা তরমুজের রসালো শাস স্বাদে-গন্ধে যেমনি সমৃদ্ধ, তেমনি তৃপ্তিদায়ক ও তৃষ্ঞা নিবারক।
উন্নত বিশ্বে তরমুজ দিয়ে নানা ধরনের সরবত, জ্যাম,সিরাপ, গুড় ছাড়াও এ্যালকহল পর্যন্ত তৈরী হচ্ছে। এমনকি সইট্রেন শ্রেণীর তরমুজ দিয়ে জেলীও তৈরী হয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের দেশ তরমুজ প্রক্রিয়াজাত করে কোন ধরনের খাদ্য সামগ্রী প্রস্তুতের উদ্যোগ নেই। রসারো এ ফল প্রক্রিয়াকরন সম্ভব হলে তা কৃষকদের ভাগ্য পরিবর্তনেরও সহায়ক হতে পারত বলে মনে করেন কৃষিবীদগন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন