মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

লকডাউনে কমছে ঢাকার বায়ুদূষণ

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৯ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০১ এএম

লকডাউনে কমেছে রাজধানীর বায়ুদূষণ। অন্যান্য সময়ের মতো মানুষ ঘর থেকে বের হতে না পারায় রাস্তাগুলো বলতে গেলে ফাঁকা। চলছে না গণপরিবহন। জরুরি সেবা ছাড়া কোনও ইঞ্জিন চলছে না। অনেক কলকারখানাও বন্ধ রয়েছে। উন্নয়ন কর্মকান্ড বন্ধ থাকায় নেই রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি। ফলে বায়ুদূষণও আগের চেয়ে অনেক কমেছে। যে ঢাকা বায়ুদূষণের দিক দিয়ে বিশ্বের বড় শহরগুলোর মধ্যে প্রথম কাতারে ছিল, সেখান থেকে এখন নেমে গেছে কয়েক ধাপ। করোনার ভয়ঙ্কর থাবায় হতাশার শহরে এ যেন নতুন আশার খবর।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের বায়ুমান যাচাইবিষয়ক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘এয়ার ভিজ্যুয়াল’ এর বায়ুমান সূচক (একিউআই) অনুযায়ী গতকাল বায়ুদূষণের মানমাত্রায় ঢাকায় ১০২ পিএম। আর এ বায়ুমান নিয়ে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকা এখন আট নম্বরে। অথচ এ লকডাউনের আগে প্রায় প্রতিদিনই ঢাকা থাকত শীর্ষে। অর্থাৎ ১ নম্বরে বা তার আশপাশে। বায়ুদূষণের মাত্রা ৩০০ থেকে ৪০০ পিএম পর্যন্ত পৌঁছেছে। যেটাকে বলা হয় ‘দুর্যোগপূর্ণ’ আবহাওয়া।

লকডাউনে চলছে না গাড়ি, উন্নয়ন কর্মকান্ডের খোঁড়াখুঁড়িও বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া পুড়ানো হচ্ছে না ময়লা-আবর্জনা। এছাড়া গত শনিবার রাতে বৃষ্টির কারণেও ধুলাবালি আরও কমেছে। ফলে বাতাসের বিশুদ্ধতা বেড়েছে। গতকাল দিনের বেলায় এই মান মাত্রা ছিল ১০০ থেকে ১২০ পিএম এর মধ্যে।
স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) বলছে, লকডাউন শুরুর পর ১৪ এপ্রিল থেকে দিনের কোনও কোনও সময় স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ৭০ ভাগ বায়ুদূষণ কমেছে, সারাদিনের হিসেবে ৫৫ ভাগ কমেছে।

ক্যাপস সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিদিন ঢাকার রাস্তায় জীবিকার তাগিদে বহু লোকের আনাগোনা লেগেই থাকে। এসব মানুষকে বহন করে রাজপথে ছুটে বেড়ায় বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। এখন এগুলো চলছে না বললেই চলে। সাধারণ মানুষ লকডাউনের এ সময়টা সাধারণত ঘরেই কাটাচ্ছেন। আর এতে করে বায়ুরদূষণও কমেছে।
ঢাকার মাঝ বরাবর নির্মাণ করা হচ্ছে মেট্রোরেল এর পাইলিং এবং পিলার তৈরির সময় ঢাকার বাতাসে ব্যাপক মাত্রায় ধুলা ছড়িয়ে পড়তো। এখন মেট্রোরেলের নিচের অবকাঠামোর নির্মাণকাজ প্রায় শেষদিকে। চলছে ওপরের অংশের কাজ। এ কারণেও বাতাসের দূষণ খানিকটা কমেছে। ক্যাপস বলছে, ২০২০ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের তুলনায় ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ১১ ভাগ, ফেব্রুয়ারিতে ৫ ভাগ এবং মার্চ মাসে ২১ ভাগ বায়ুদূষণ বেড়েছে।
লকডাউন চলাকালে প্রতিদিন ঢাকার দুটি এলাকায় স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) আট ঘণ্টা করে বায়ুর মান পরিমাপ করছে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের সাহায্যে। ক্যাপস এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মো: কামরুজ্জামান বলেন, প্রতিদিন ঢাকার যে কোনও দুটি এলাকায় বায়ুদূষণ বিষয়ে তথ্যসংগ্রহ করা হয়েছে। মতিঝিল, আহসান মঞ্জিল এলাকা, শাহবাগ, ধানমন্ডি, সংসদ এলাকা, তেজগাঁও শিল্পএলাকা, আগারগাঁও বিসিএস কম্পিউটার সিটির রাস্তা, মিরপুর ১০, গুলশান ২, আব্দুল্লাহপুর এসব এলাকার মধ্য থেকে যে কোনও দুটি বেছে নেওয়া হয়। পরদিন অন্য এলাকার তথ্য নেওয়া হয়। এক বছর ধরে সপ্তাহে পাঁচ দিন আমরা এই তথ্য সংগ্রহ করছি। ইউএসএইড এবং ইউকেএইড অর্থায়নে এই কাজ হচ্ছে।

বলা হয়ে থাকে, অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও নির্মাণ কাজ থেকে দূষণ হয় ৩০ ভাগ, ২৯ ভাগ হয় ইটভাটা ও শিল্পকারখানা থেকে, ১৫ ভাগ যানবাহনের কালো ধোঁয়া থেকে। ১০ ভাগ আন্তঃদেশীয় বায়ুদূষণ এবং ৯ ভাগ গৃহস্থালি ও রান্নার চুলা থেকে নির্গত দূষণ। বছরব্যাপী গবেষণা করে ক্যাপস গত মার্চে যে প্রতিবেদন দিয়েছিল তাতে বলা হয়, ঢাকার অভিজাত আবাসিক এলাকাগুলোতে আশঙ্কাজনকভাবে দিন দিন বাড়ছে দূষণের মাত্রা।

২০২০ সালে বাংলাদেশের বাতাসে গড় ধুলিকণার পরিমাণ ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৭৭ দশমিক ১ মাইক্রোগ্রাম। যা পরিবেশ অধিদফতরের আদর্শমানের সাড়ে পাঁচ গুণ বেশি। এর মধ্যে ঢাকার ৭০টি স্থানের দূষণ গবেষণা করে দেখা যায়, পরিবেশ অধিদফতরের বায়ুদূষণের মাত্রা আদর্শ মানের চেয়ে বাতাস পাঁচ দশমিক ২ গুণ বেশি দূষিত।
দূষণ কমানোর বিষয়ে জানতে চাইলে বাপার সাধারণ সম্পাদক শরিফ জামিল বলেন, যানবাহন, ইটভাটা, খোঁড়াখুঁড়ি হচ্ছে মূলত বায়ুদূষণের কারণ। লকডাউনের কারণে এখন কমে আসলেও তা তো সাময়িক। সব খুলে দিলে আবার তো আগের অবস্থা হয়ে যাবে। তাই এখনই উদ্যোগ নেওয়া দরকার। দূষণ কমানোর এই ঘটনায় প্রমাণিত হলো, এতদিন আমরা যেসব উৎসকে কারণ হিসেবে বলেছি সেগুলা সঠিক। সরকার যদি আমাদের চিহ্নিত উৎসগুলো থেকে দূষণ কমানোর উদ্যোগ নেয় তাহলে দূষণ কমে যেতো। তবে সরকারের এ বিষয়ে মানসিকতা আছে কি-না তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কারণ ক্লিন এয়ার অ্যাক্ট এর খসড়া করে ফেলে রেখেছে। ফলে উদ্যোগ নেওয়াটাই একটা বড় বিষয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন