করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় ৭ দিনের কঠোর লকডাউনের গতকাল ছিল পঞ্চম দিন। এদিন রাজধানীতে পুলিশের চেকপোস্টে আগের দিনের তুলনায় বেশি কড়াকড়ি দেখা গেছে। অথছ সড়কে যানবাহনের চাপ আগের চারদিনের চেয়ে বেড়েছে। বিশেষ করে রাজধানীর সড়কগুলোতে প্রাইভেট কার ও ব্যাক্তিগত গাড়ির আধিক্য দেখা গেছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এ চিত্র পাওয়া গেছে। কোথাও কোথাও দেখা গেছে লকডাউনের মধ্যেই রীতিমতো যানজট। প্রাইভেট কারের দীর্ঘ সময় ধরে রাস্তায় যানজটে আটকে রয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে মূল সড়কগুলোও ছিল ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল ও রিকশার দখলে। চেকপোস্টে আগের মতোই গাড়ি থামিয়ে পুলিশ মুভমেন্ট পাস আছে কি-না চেক করছেন। পাস না থাকলে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকারগুলোকে মামলা দিতেও দেখা গেছে। কিন্তু মানুষ কারণে অকারণে রাস্তায় নামছেন। কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, রাস্তায় না নামলে উপোস থাকতে হবে। সরকার ও কোনো বিত্তবানরা এবার করোনায় কোনো সাহায্য সহায়তা করছে না।
লকডাউনের মধ্যেও গার্মেন্টস ও শিল্প প্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে। আন্তর্জাতিক বিমান চলছে। ব্যাংকসহ জরুরি যেসব অফিস খোলা রয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীরা রাস্তায় নেমে কর্মস্থলে পৌঁছাতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। গণপরিবহন না থাকায় কেউ এক মোড় থেকে আরেক মোড় পর্যন্ত রিকশায় আবার কেউ ভাড়া করে প্রাইভেটকারে যাচ্ছেন। অনেকেই মোটরসাইকেলে যাত্রা করে পথিমধ্যে পুলিশের বাধার মুখেও পড়েছেন। মোটরসাইকেলে একজনের বেশি চলাচল করতে দিচ্ছে না পুলিশ।
গতকালও দোকান মালিক সমিতি সংবাদ সম্মেলন করে ২২ এপ্রিল রাজধানীর সকল মার্কেট খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছে। অথচ গতকাল রাজধানীর কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে স্বাস্থ্যবিধি সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত হচ্ছে কাঁচাবাজার ও দোকানগুলোতে।
সকালে যাত্রবাড়িতে দেখা গেছে প্রচুর মানুষ মোড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন রিক্সার জন্য। রিক্সাওয়ালারা সুযোগ বুঝে দ্বিগুন তিনগুন বেশি দামে যাত্রীদের আনা নেয়া করছেন। বাধ্য হয়েই যাত্রীরা বেশি ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন।
যাত্রাবাড়ি, সায়েদাবাদ, শনিরআখড়া, কাজলায় দেখা গেল পুলিশ চেসপোস্ট বসিয়েছে। তবে দুপুরের পর পুলিশের চেকপোস্টগুলোতে কড়াকড়ি কমে গেছে বলে মনে হলো।
আসাদগেট মোড়ে পুলিশের কোনো চেকপোস্ট না থাকলেও কিছুটা দূর ফার্মগেট মোড়ে পুলিশের কড়া চেকপোস্ট। চেকপোস্টের আগে থেকেই পুলিশ হাত উঁচিয়ে থামার নির্দেশ দিচ্ছে। থামার পরে প্রথমেই জিজ্ঞেস করা হচ্ছে মুভমেন্ট পাস আছে কি-না। মোহাম্মদপুর, গাবতলী, শ্যামলী, মিরপুর, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার ও শাহবাগ এলাকা ঘুরে একই চিত্র দেখা গেছে।
রাজধানীর পল্টন মোড়ে দেখা গেল, চেকপোস্টে আসা প্রতিটি গাড়ি চেক করছেন পুলিশ সদস্যরা। মোটরসাইকেলে দু›জন ও মুভমেন্ট পাস না থাকায় মামলাও দেয়া হচ্ছে। পল্টন মোড় চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. রাফি বলেন, রোববার কিছু অফিস ও ব্যাংক খোলার কারণে সড়কে মানুষের চাপ যেমন বেড়েছে, তেমন বেড়েছে গাড়ির চাপও। প্রত্যেককে চেক করা হচ্ছে। প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসের প্রত্যেক যাত্রীদের মুভমেন্ট পাস আছে কি-না দেখা হচ্ছে।
মতিঝিল শাপলা চত্ত¡রে পুলিশের চেকপোস্টে রিকশায় দু’জন করে চলাচল করতে পারছে না। রিকশায় দু’জন দেখলেই পুলিশ একজনকে নামিয়ে হেঁটে যাওয়ার অথবা অন্য রিকশায় যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। মোটরসাইকেলে দু’জন চলাচল করলে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ এবং মুভমেন্ট পাস আছে কি-না চেক করা হচ্ছে।
এছাড়াও পুলিশের চেকপোস্টের কারণে কোনো কোনো সড়কে যানজটেরও সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সেসব সড়ক ব্যবহার করতে গিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে কিছুটা দেরি হচ্ছে অনেকের।
জয়কালী মন্দিরে দেখা গেল পুলিশের চেকপোস্ট যাবনাহন পরীক্ষা করা হচ্ছে। দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য বললেন, আমাদের কাজ আমরা করছি। কিন্তু মানুষকে সচেতন হতে হবে।
চলমান লকডাউনের পঞ্চম দিন আজ রোববার (১৮ এপ্রিল)। খেটে খাওয়া মানুষ এই লকডাউনে কোনোভাবেই ঘরে থাকতে চাইছেন না। মিরপুরের বিভিন্ন অলিগলিতে কঠোর লকডাউন মানার কোনো দৃশ্য চোখে পড়েনি। এমনকি বেশিরভাগ মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করেও চলতে দেখা গেছে।
এদিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ি, জুরাইন, ওয়ারী, মিরপুর এলাকার ১, ২ ও ১০ নম্বর মিরপুর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, লকডাউনের মধ্যেই কাচা বাজারগুলোতে প্রচন্ড ভীড়। পুলিশের গাড়ির হর্ণের শব্দ শুনলেই অলিগলিতে দৌড়ে পালাচ্ছে মানুষ। মিরপুর-১ নম্বর কাঁচা বাজারে আসা কেউই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। এই বাজারের বিক্রেতা সাহীন হোসেন বলেন, আমাদের বিকাল ৩টা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখার অনুমতি আছে। এর আগে পুলিশ কিছুই বলবে না। বিকাল ৩টার পর পুলিশ খুব সমস্যা করে। দোকান খোলা রাখলেই মিটার নিয়ে যায়।
হামিদ বেপারী নামের এক ক্রেতা বলেন, লকডাউনে সব বন্ধ থাকলেও খাওয়া বন্ধ করা যায় না। তাই ঝুঁকি নিয়ে বাজারে এসেছি। একসঙ্গে আগামী ১৫ দিনের বাজার করে নিয়ে যাবো। বাজারে এলে মনে হয় কিসের করোনা, কিসের লকডাউন। বাজারে কোনো স্বাস্থ্যবিধির বালাই নাই। বাজারে স্বাস্থ্যবিধি না থাকা আমাদের জন্য হুমকি।
পুলিশের এসআই শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। মানুষকে কোনোভাবেই ঘরে রাখা যাচ্ছে না। টহলের সময় কোনো মানুষ পাই না। কিন্তু টহল ছাড়া গেলে দেখা যায়, মানুষ আর মানুষ। লকডাউন সফল করতে হলে সবাইকে দায়িত্ব নিয়ে সরকারি নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন