শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

চারদিকে ঘিওরের লেবুর খ্যাতি

শাহীন তারেক, মানিকগঞ্জ থেকে | প্রকাশের সময় : ২০ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০২ এএম

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায় জুড়ে আবাদ হচ্ছে বিভিন্ন জাতের লেবু। এ এলাকার উৎপাদিত লেবু যাচ্ছে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার হাটবাজারে। লেবুচাষ পাল্টে দিয়েছে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক দৃশ্যপট। ঘিওর উপজেলার সব চেয়ে বেশি লেবু চাষ হয় বালিয়াখোড়া গ্রামে। এ গ্রামে প্রায় ৩শ’ পরিবারের বসবাস রয়েছে। প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে লেবুর বাগান। বাড়ির উঠান, আঙিনা যেখানেই ফাঁকা জায়গা, সেখানেই লেবু গাছ লাগানো হয়েছে। আছে দেড় শতাধিক ছোট-বড় লেবুর বাগান। লেবু চাষ লাভজনক হওয়ায় সাত উপজেলায় কৃষকরা ঝুঁকে পড়েছে লেবু আবাদে। দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে লেবু চাষ।

সরেজমিনে জানা যায়, রমজান মাসে লেবুর চাহিদা থাকায় প্রতি হালি লেবু খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত। পাইকারী দরও বেশ ভালো। লেবু ব্যাবসায়ীরা বাগান থেকেই লেবু সংগ্রহ করে নিয়ে যায় রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায়। তাই কৃষকদের বাড়তি কষ্ট করতে হয় না। উপজেলার বালিয়াখোড়া ও পার্শ্বর্বুী সোদঘাটা গ্রামের প্রায় দুই সহস্রাধিক লোক লেবু চাষের ওপর নির্ভরশীল। এখানকার চাষিরা কলম্বো, এলাচি ও কাগজি জাতের লেবু চাষ করেন। এলাচি জাতের লেবু স্বাদে ভালো হলেও ফলন কম হওয়ায় চাষিরা কলম্বো জাতের লেবু বেশি চাষ করছেন। এখানকার চাষিদের উৎপাদিত বিভিন্ন জাতের লেবু ঢাকার পাইকারদের মাধ্যমে দেশ ছাড়িয়ে স্থান করে নিয়েছে বিশ্ব বাজারে।

বালিয়াখোড়ার সাঈদ হাসান মুকুল জানান, সুগন্ধি, সুস্বাদু ও প্রচুর রসযুক্ত হওয়ায় এই গ্রামের লেবুর কদর সবচাইতে বেশি। এখানকার উৎপাদিত লেবু বিক্রি হয় রাজধানী ঢাকার কাওরান বাজার, শ্যামবাজার ও গাজীপুরের টঙ্গী বাজারে। এলাকার অনেক শিক্ষিত বেকার যুবকরা লেবু চাষের আয় দিয়ে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন। বালিয়াখোড়ার চাষিদের উৎপাদিত বিভিন্ন জাতের লেবু পাইকারদের মাধ্যমে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় স্থান করে নিয়েছে। লেবু চাষি নারায়ণ চন্দ্র জানান, তার বাবা রুহিণীকান্ত হোড় পার্শ্বর্বুী গ্রামের আলী হোসেন ঘড়ি মিয়ার নিকট থেকে ১০টি লেবু গাছের চারা নিয়ে এই গ্রামে প্রথম লেবু চাষ শুরু করেন। ১৯৯৬ সালে তার পিতার মৃত্যুর পর থেকে তিনি এই লেবু বাগানের সার্বিক দায়িত্ব পালন করছেন। র্বুমানে তার ৪টি লেবুর বাগান আছে। ১৫০ শতাংশ জমির এই বাগানগুলোতে তিনি এলাচি, কাগজি ও কলম্বো এই তিন জাতের লেবুর চাষ করেছেন। এরমধ্যে ১০০ শতাংশ জমিতে কলম্বো, ৪০ শতাংশ জমিতে এলাচি ও ১০ শতাংশ জমিতে কাগজি লেবুর চাষ করেন। তিনি আরো জানান, অনেক সময় গাছে পোকা লেগে গাছ মরে যায়। কিন্তু কৃষি বিভাগের কেউ তাদের খোঁজ নেন না। আরেক লেবুচাষি মো. বিলু মিয়া জানান, ২৪০ শতাংশ জমিতে লেবুর চাষ করেছি, ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। আর রমজান হওয়ায় চাহিদাও দাম ভালো পাচ্ছি। ১শ’ লেবু ৮শ’-১২শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল আওয়াল খান জানান, বালিয়াখোড়া গ্রামে ৩শ’ পরিবার বাস করে। এই গ্রামে ছোট-বড় মিলে কমপক্ষে ১৫০টি লেবুর বাগান রয়েছে। তবে সব বাড়িতেই লেবু গাছ আছে। এই গ্রামের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ লেবু চাষের আয় দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। তিনি আরো জানান, লেবু চাষে ইউরিয়া, টিএসপি ও পটাশ সার, ভিটামিন এবং কীটনাশক লাগে। কৃষি বিভাগ থেকে লেবু চাষিদের কোনো সহায়তা দেয়া হয় না। কৃষি বিভাগ একটু নজর দিলে লেবুচাষিরা আরো ভালো করবে।

ঘিওর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ বিপুল হোসেন জানান, ঘিওর উপজেলার বালিয়াখোড়া ও সোদঘাটা গ্রামের চাষিরা লেবু চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হচ্ছেন। এ অঞ্চলের লেবুর কদর রয়েছে সারা দেশে। তিনি আরো জানান, প্রতিটি ইউনিয়নে সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আছেন। কৃষি বিভাগ থেকে ওই এলাকার লেবুচাষিদের সব ধরনের সহায়তা দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন