কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ১নং সিরাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরনবী চৌধুরী (৬৬), গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় পুলিশ ৪জনকে আটক করেছে। সোমবার বিকেলের দিকে উপজেলার বসুরহাট পৌরসভা এলাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে পুলিশ তাদের আটক করে।
আটককৃতরা হলো, উপজেলার চরপার্বতী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মো. আসলামের ছেলে ইসমাইল হোসেন পলাশ (২৫), বসুরহাট পৌরসভা ৫নম্বর ওয়ার্ডের মৃত মনোরঞ্জন মজুমদারের ছেলে প্রবণ চন্দ্র মজুমদার (৩৩), বসুরহাট পৌরসভা ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত আবুল বাসারের ছেলে ইমাম হোসেন ছোটন (২৪) ও বসুরহাট পৌরসভা ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত মনির আহমেদের ছেলে নুর আলম প্রকাশ রাসেল (২৮)।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি মীর জাহেদুল হক রনি জানান, বসুরহাট পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে কাদের মির্জার অনুসারী কেচ্ছা রাশেল, জিসান, বোরহান, মিকনের নেতৃত্বে তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা এ ঘটনা ঘটায়। এ ঘটনায় ৪জনকে আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে আ.লীগ নেতা নুরুজ্জামান স্বপনের (৪৪) ওপর ও মির্জা কাদেরের অনুসারীরা হামলা চালান বলে জানান তিনি। দুটি ঘটনার পর বসুরহাটের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, এর আগে সোমবার (১৯ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বসুরহাট পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডে উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরনবী চৌধুরীকে মির্জা কাদেরের অনুসারীরা তাকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে পা ভেঙ্গে দেয় এবং দুই পায়ে গুলি করে দেয়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) পাঠানো হয়।
অপরদিকে, সোমবার (১৯ এপ্রিল) দুপুর পৌনে ২টার দিকে ঘটনার দেড় ঘন্টা পর উপজেলা আ.লীগের নেতৃবৃন্দ ফেইসবুক লাইভে এসে এ অভিযোগ করেন। পৌর মেয়র কাদের মির্জার নির্দেশে তার ভাই সাহাদাত হোসেন ও ছেলে তাশিক মির্জার নেতৃত্বে গুলি করা হয় বলে অভিযোগ করেছে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আ.লীগ। ফেইসবুক লাইভে উপজেলা আ.লীগের পক্ষে বক্তব্য রাখেন, উপজেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যামন মো.মিজানুর রহমান বাদল।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা আ.লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খান, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও ভাইস চেয়ারম্যান আজম পালা চৌধুরী রুমেল, উপজেলা আ.লীগ নেতা ফখরুল ইসলাম রাহাত, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জায়দল হক কচি প্রমূখ।
ফেসবুক লাইভে মিজানুর রহমান বাদল অভিযোগ করে বলেন, আজ সকালে উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিরাজপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরনবী চৌধুরী ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় থেকে কাজ শেষ করে বসুরহাট বাজারে যাওয়ার পথে কাদের মির্জার ভাই সাহাদাত হোসেন ও তার ছেলে তাশিক মির্জার নেতৃত্বে কাদের মির্জার নির্দেশে এই বয়োবৃদ্ধ আ.লীগ নেতাকে নৃশংস ভাবে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে তার পায়ের নিচে গুলি করা হয়। তার হাঁটু ভেঙ্গে চুরমাচুর হয়ে নিচের দিকে ঢেবে গেছে। কাদের মির্জা কয়েক দিন আগে ঘোষণা দিয়েছে উপজেলা আ.লীগের নেতৃত্বে যারা আছে তাদেরকে যেখানে পাবে সেখানে হাঁটুর নিচে ভেঙ্গে ফেলবে, চুরমাচুর করে ফেলবে। তার সেই দিক নির্দেশেনা অনুয়ায়ী গতকাল রাত থেকে আমাদের নেতাদেরকে হত্যা করার মিশনে নেমেছে। মানুষের কারণে নুরনবী চৌধুরী প্রাণে রক্ষা পেয়েছে, নয়তো সে প্রাণে রক্ষা পেত না। নুরনবী চৌধুরীরর হামলার খবর শুনে বসুরহাট বাজারে আসার পথে আ.লীগ নেতা স্বপনের ওপর কাদের মির্জার ভাই সাহাদাত হোসেন ও ছেলে তাশিক মির্জার নেতৃত্বে নৃশংস ভাবে হামলা করা হয়েছে। উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরনবী চৌধুরী ও আ.লীগ নেতা স্বপনের ওপর হামলার বিচার যদি আজকে দিনের মধ্যে, আসামিদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির ব্যবস্থা না করা হয়, তা হলে কোম্পানীগঞ্জের আপামর জনতাদের নিয়ে রাজ পথে নেমে আমরা এটার বিচার করব। প্রধানমন্ত্রী ও ওবায়দুল কাদের ও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন করছি। যেন অনতিবিলম্বে এটার সমাধান হয়। যেন সন্ত্রাসীদের সঠিক বিচার হয়। না হলে আমরা প্রতিরোধ করতে আসলে অনেকে আমাদেরকে খারাপ বলবে।
অপরদিকে এ ঘটনার পর দুপুর ২টার দিকে কাদের মির্জা তার অনুসারী স্বপন মাহমুদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লাইভে এসে দাবি করেন, আজকে সকাল বেলা সিরাজপুরের এক কুলাঙ্গার চেয়ারম্যান তথাকতিথ চেয়ারম্যান। যে মানুষের শালিসের নামে বাড়ির ভিটি পর্যন্ত বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করেছে। যে গরীব অটোরিকশার ড্রাইভারদের আমি আড়াই হাজার টাকা করে অটো রিকশার ল্যাইন্সেস দিয়েছি। সে ৬০টা লাইসেন্স আমার থেকে নিয়েছে। সে প্রত্যেকটা লাইসেন্স এ ৫ হাজার টাকা করে নিয়েছে। তারপরে ভিজিডি, ভিজিএফ, বয়স্ক ভাতা, বিধাব ভাতা থেকে টাকা নিয়েছে। স্বামী পরিত্যক্ত মহিলাদের কাছ থেকে সে টাকা নিয়েছে। তারপরে প্রাইমারি স্কুরের ২টা পিয়নের চাকরি দিতে সে টাকা নিয়েছে। এমনি ভাবে এলাকায় লুটপাট করছে। গত কয়েক দিন আমি শুনতেছি, তারা টাকার জন্য তাকে ধরবে। তারা এ অবস্থায় রইছে টাকার জন্য। এখন টাকার জন্য তাদের সাথে মারামারি হইছে। এখন এটা আমার ওপর আমার কর্মিদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন