পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি রোববার ইসলামাবাদ ও নয়াদিল্লির মধ্যে ব্যাকচ্যানেল আলোচনার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, ভারতীয় প্রতিপক্ষ ড. এস জয়শঙ্করের সাথে তার সাক্ষাতের কোন কথা ছিল না। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও এক দিনের জন্য উপসাগরীয় অঞ্চলে থাকবেন বলে নয়াদিল্লির ঘোষণায় জল্পনার মধ্যে দুবাইয়ে তিন দিনের সফরে ইউএই পৌঁছানোর একদিন পর সংবাদমাধ্যমকে জনাব কুরেশি বলেন, ‘আমি এখানে দ্বিপাক্ষিক সফরের জন্য এসেছি, ভারত-সংশ্লিষ্ট এজেন্ডা নয়। আমার এজেন্ডা সংযুক্ত আরব আমিরাত-পাকিস্তান, ভারত-পাকিস্তান নয়’।
তিনি আরো বলেন, ‘আমি মনে করি না যে, ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠক নির্ধারিত হয়েছে’। মন্ত্রী আরো বলেন, ইসলামাবাদ কখনোই সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান থেকে বিরত হয়নি। তিনি আরো যোগ করেন, ‘যদি ভারত অবৈধভাবে দখলকৃত জম্মু ও কাশ্মীরের (আইআইওজেকে)-র স্বায়ত্তশাসিত অবস্থান প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের পর্যালোচনা করে তবে আমরা নয়াদিল্লির সাথে আলোচনায় প্রস্তুত আছি’। ‘আমরা এ অঞ্চলে শান্তি চাই এবং ভারতসহ আমাদের সব প্রতিবেশীর সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক চাই’। মন্ত্রী পাকিস্তানের ইস্যুগুলো ভারতের সাথে সমাধানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যস্থতাকে স্বাগত জানিয়েছেন। ‘আমরা তৃতীয় পক্ষের সংযুক্তিকে স্বাগত জানাই, তবে বন্ধুরা যাই বলুক না কেন, উদ্যোগটি সহজাত হতে হবে’। ‘তারা পরামর্শদাতা এবং সুবিধাভোগী হতে পারে, তবে শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়ার লোকদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, তারা কী ধরনের ভবিষ্যত কল্পনা করে’।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বন্ধুরা সাধারণত বরাবরই বলেছিল যে, দু’দেশের উচিত আলোচনা করে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা। ‘ভারত সবসময় তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতায় দ্বিধায় ছিল। আমরা সর্বদা এটিকে স্বাগত জানিয়েছি এবং কখনো লজ্জা পাই না’।
উপসাগরীয় দেশে কুরেশি অবতরণের মুহূর্তে, ভারত সরকার ঘোষণা দিয়েছিল যে, তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ১৮ এপ্রিল এক দিনের সফরে আবুধাবিতে থাকবেন। এর ফলে দু’দেশের শীর্ষ কূটনীতিকরা বৈঠকে মিলিত হতে পারেন বলে জল্পনা ছড়িয়ে পড়ে। বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, সংযুক্ত আরব আমিরাত দুই দেশের মধ্যে মধ্যস্থতা করছে। এমনকি পাকিস্তান ও ভারতের ঊর্ধ্বতন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানুয়ারিতে দুবাইয়ে বৈঠক করেছিলেন।
ওয়াশিংটনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূতও নিশ্চিত করেছেন যে, তার দেশ দু’দেশের মধ্যে সংলাপের সুযোগ দিচ্ছে। রাষ্ট্রদূত বলেন যে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের উদ্যোগের পেছনে রয়েছে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে কার্যকরী সম্পর্ক রয়েছে তা নিশ্চিত করা।
এ মাসের শেষের দিকে অনুষ্ঠিতব্য ইস্তাম্বুল সম্মেলনের পরে কুরেশি তার আফগান প্রতিপক্ষ মুহাম্মদ হানিফ আতমারকে ইসলামাবাদে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে টেলিফোনে কথোপকথনের সময় এ আমন্ত্রণ জানানো হয়। কথোপকথনের সময় দুই নেতা আফগান শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে এযাবৎ কালের অগ্রগতি নিয়েও আলোচনা করেন। কুরেশি এবং তার প্রতিপক্ষ রমজান মাসের জন্য সম্মাননা বিনিময় করেছেন। আফগান মন্ত্রীর সাথে আলাপকালে শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল আফগানিস্তানে পাকিস্তানের স্বার্থ রয়েছে উল্লেখ করে কুরেশি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে সহিংসতা হ্রাসের সহযোগিতার ইচ্ছা পোষণ করেন।
কুরেশি আরো বলেন যে, পাকিস্তান এই অঞ্চলে শান্তির প্রয়াসের অংশীদার ছিল এবং আফগানিস্তানকে শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল করতে তার সমঝোতা সহায়তা অব্যাহত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন যে, ‘ইস্তাম্বুল প্রক্রিয়া’ আফগানিস্তানে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রয়াসে দোহা চুক্তি সফল করতে সহায়তা করবে। সূত্র : দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন