মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

আত্ম-অহঙ্কারে নিমজ্জিত এক ব্যর্থ ভারত

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২১ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০২ এএম

গেল মার্চের গোড়ার দিকে ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন ঘোষণা করেছিলেন যে, দেশটি করোনা মহামারীর বিরুদ্ধে জয়ের দোড়গোড়ায়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ‘ভ্যাকসিন গুরু’ আখ্যা দেয়া হয়। অথচ, রোববার শুধু এক দিনেই ভারতে ২ লাখ ৭৩ হাজার ৮১০ জনের সংক্রমণ রেকর্ড করা হয়েছে এবং ১ হাজার ৬শ’ ১৯ জন করোনায় মারা গেছেন। দ্য ল্যানসেট কোভিড-১৯ কমিশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ছড়িয়ে পড়া সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে জুনের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ভারতে করোনা জনিত মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিন ২ হাজার ৩শ’ ছাড়িয়ে যেতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, ভারতের মানুষের আত্ম-অহঙ্কার করোনার এই সেকেন্ড ওয়েভ ডেকে এনেছে। ফেব্রুয়ারির শেষভাগে ভারতের নির্বাচন কর্তৃপক্ষ ৫টি রাজ্যে বিধান সভা নির্বাচনের ঘোষণা দেয়, যেখানে প্রায় ১৯ কোটি মানুষ ৮৪৪টি আসনের ভোটার। ২৭ মার্চ থেকে এ নির্বাচন একক মাসেরও বেশি সময়ের জন্য দীর্ঘায়িত করা হয়েছে এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের ক্ষেত্রে এটি ৮ দফায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কোনো সুরক্ষা প্রোটোকল এবং সামাজিক দূরত্ব ছাড়াই নির্বাচনী প্রচারণা পুরোদমে শুরু হয়। মার্চের মাঝামাঝিতে দেশটির ক্রিকেট বোর্ড গুজরাটের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে ভারত এবং ইংল্যান্ডের মধ্যে ২টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা দেখার জন্য ১৩ লাখেরও বেশি ভক্তকে অনুমতি দেয়, যাদের বেশিরভাগই মাস্ক ব্যবহার করেনি।

গত ১৪ তারিখে হরিদ্বারে হিন্দুদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব কুম্ভ মেলায় লাখ লাভ মানুষের ঢল নামে। করোনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে হাজার হাজার মানুষ তার নেতাদের অনুসরণ করে নির্বাচনী সমাবেশে যোগ দিয়েছে এবং হিন্দুদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব কুম্ভ মেলাসহ বিবাহ ও বিভিন্ন সামাজিক সমাবেশে যোগ দিয়েছে। সরকার মিশ্র বার্তা প্রেরণের মাধ্যমে রাজনৈতিক সমাবেশ ও ধর্মীয় সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে। পাশিপাশি, সংক্রমণ হ্রাস পাওয়ার সাথে সাথে মানুষ ভ্যাকসিন নেয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে, যা জুলাইয়ের শেষ নাগাদ ২৫ কোটি মানুষকে করোনামুক্ত করার টিকাদান অভিযানকে মন্থর করে দিয়েছে। সমাজ বিজ্ঞানের প্রফেসর শিব বিশ্বনাথন বলেন, ‘যা ঘটছে, তা সম্পূর্ণভাবে বাস্তবতা বিবর্জিত।’

পদার্থ বিজ্ঞান এবং জীব বিজ্ঞানের প্রফেসর গৌতম মেনন বলেছেন, ‘সেকেন্ড ওয়েভ অবশ্যম্ভাবী হতে পারে, তবে ভারত এটি পিছিয়ে দিতে বা বিলম্বিত করতে পারত এবং এর প্রভাবকে কমিয়ে দিতে পারত। অন্যান্য অনেক দেশের মতোই ধরনগুলো সনাক্ত করতে ভারতেরও জানুয়ারিতে সতর্ক জিনোম নজরদারি শুরু করা উচিত ছিল।’ মেনন বলেন, ‘মহারাষ্ট্রের রিপোর্ট থেকে আমরা ফেব্রুয়ারিতে নতুন ধরনটির বিষয়ে জানতে পারি। কর্তৃপক্ষ প্রাথমিকভাবে এটি অস্বীকার করেছিল।’ তিনি বলেন, ‘এটিই একটি গুরুত্বপূর্ণ টার্নিং পয়েন্ট ছিল।’

বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো জনাকীর্ণ কবরস্থান, কোভিডের শেষকৃত্যের ভিডিও, মুমূর্ষ রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সের দীর্ঘ সারি, মৃতদের আহাজারিরত স্বজনদের ভিডিওতে পূর্ণ। চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোর করিডোর, লবিতে এবং কোথাও কোথাও একই বিছানায় দুটি করোনা রোগীর পড়ে থাকার দৃশ্য সামনে আসছে। চিকিৎসা শয্যা, ওষুধ, অক্সিজেন, প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং পরীক্ষায় সাহায্যের জন্য আকুল আবেদন আসছে। কালো বাজারে ওষুধ বিক্রি হচ্ছে এবং পরীক্ষার ফলাফল আসতে কয়েক দিন সময় নিচ্ছে। এমনকি দেশটির টিকা দেওয়ার বিশাল প্রচেষ্টাও এখন মুখ থুবড়ে পড়েছে।

ভারতের ও বিশ্বের বৃহত্তম ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া জানিয়েছে যে, তারা জুনের আগে আর ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে পারবে না, কারণ তাদের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত অর্থ নেই। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনের সব রফতানিকে ভারত অস্থায়ীভাবে স্থগিত করে রেখেছে। কারণ দেশের মধ্যে জরুরিভাবে ডোজের প্রয়োজন। দেশটি বিদেশী ভ্যাকসিন আমদানির অনুমতি দিয়েছে। এমনকি চাহিদা বাড়ার জন্য অক্সিজেনও এখন সম্ভবত আমদানি করা হবে। বøুমবার্গের কলাম লেখক মিহির শর্মা বলেছেন, ‘ভারতে চিরাচরিত সরকারী ঔদ্ধত্য, অস্বাভাবিক-জাতীয়তাবাদ, শ্রেণি বৈষম্য এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ আমলাতান্ত্রিক অদক্ষতা একত্রিত হয়ে একটি সঙ্কট তৈরি করেছে।’

যেহেতু ভারত স্পষ্টতই হার্ড ইমিউনিটি থেকে দূরে রয়েছে এবং এর টিকা দেওয়ার হার মন্থর, বেশিরভাগ মহামারী বিজ্ঞানী আরো করোনা ওয়েভের পূর্বাভাস দিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, সময়ের আগেই ভাইরাসের বিরুদ্ধে বিজয় ঘোষণা না করতে শেখা উচিত ভারতের এবং তার বিজয়ের বিষয়ে অতি বাড়াবাড়ি বা অহঙ্কারে লাগাম দেয়া উচিত। সূত্র : বিবিসি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
S.M. Anas Hussain ২০ এপ্রিল, ২০২১, ১:০৪ এএম says : 0
করোনা কালে বাংলাদেশ সরকারের উচিত ভারতের সাথে সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করা। করন ভারতে করোনাভাইরাসের নতুন প্রজাতি পাওয়া গেছে যা অতি মারাত্বক প্রজাতির করোনাভাইরাস।
Total Reply(0)
Muhammad Ali Babu ২০ এপ্রিল, ২০২১, ১:০৪ এএম says : 0
আমাদের বাংলাদেশের পরিস্থিতি মোটামুটি একই। আল্লাহ আমাদের সহায় হন।
Total Reply(0)
Nurul Amin ২০ এপ্রিল, ২০২১, ১:০৫ এএম says : 0
অক্সিজেনের অভাবে হতে পারে! তবে রেমডেসিভির এতটা উপকারী নয় যে এর অভাবে এমন ভয়াবহতা হতে পারে!রেমডেসিভির ব্যবহার করা হয় একদম ক্রিটিকেলি ইল রোগীর উপর যা হয়তো মৃর্তুহার সামান্য কমায়! এটার ব্যবসায়িক দিকটাই আসল! এবিউজই বেশী হচ্ছে!
Total Reply(0)
Mohammad Suman ২০ এপ্রিল, ২০২১, ১:০৫ এএম says : 0
অক্সিজেন ছাড়া মৃত্যুগুলো অনেক ভয়ঙ্কর, অনেক কষ্টের। চোখের সামনে অক্সিজেনের অভাবে ৪টা মৃত্যু হতে দেখেছি
Total Reply(0)
Fokhor Uddin ২০ এপ্রিল, ২০২১, ১:০৬ এএম says : 0
খুবই দুঃখজনক। ভারতের এই মহামারির কারন তাদের জাহিল ধর্মগুরু আর নেতারা। তারা মানুষকে সচেতন না করে জনসভার মধ্য বলতেছে গুবর আর পস্রাব খেলে করোনা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এইসব জাহিলদের কারনে পুরো ভারত জুড়ে করোনার চুবলে। আমাদের বাংলাদেশের বিনা ভোটের গাঁধা এমপি মন্ত্রীরা টিক এই ভাবে বলেছিল করোনার চাইতে তাদের শক্তি বেশি তাই বাংলাদেশে করোনা আসবেনা ভয়ে পালাবে। আজ করোনার মহামারির কারনে শত শত লোক মরছে। আল্লাহ আমাদের সকলকে রক্ষা করো। আর জাহিল নেতাদের মাথায় একটু বুদ্ধি দাও
Total Reply(0)
Md Hamid ২০ এপ্রিল, ২০২১, ১:০৬ এএম says : 0
আল্লাহ সবাইর উপর রহমত নাজিল করুক।
Total Reply(0)
Md Abu Tahar ২০ এপ্রিল, ২০২১, ১:০৭ এএম says : 0
হে সর্বশক্তিমান সারা পৃথিবীর মানুষকে এ মহামারী থেকে রক্ষা করুন।
Total Reply(0)
Jack+Ali ২০ এপ্রিল, ২০২১, ১:১১ পিএম says : 0
আমাদের দেশের এক মন্ত্রী বলেছিলেন যে আমরা করোনার থেকেও মহাশক্তিশালী তারা এখন কেন করোনাভাইরাস থেকে আমাদেরকে রক্ষা করতে পারছে না প্রতিদিনই মানুষ মারা যাচ্ছে প্রতিদিনই মানুষের সংক্রমণ হচ্ছে
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন