করোনাভাইরাসের শুরু থেকেই বাংলাদেশের চিকিৎসকেরা সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে কাজ করলেও তাদের প্রতি অসম্মানজনক, বৈষম্যমূলক, বিমাতাসূলভ আচরণ এবং বিভিন্নভাবে নাজেহাল করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)। মঙ্গলবার সংগঠনটির সভাপতি প্রফেসর ডা. হারুন আল রশিদ ও মহাসচিব ডা. মো. আব্দুস সালাম এক যৌথ বিবৃতিতে একথা বলেন।
করোনা মোকাবিলায় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে সমন্বয়হীনতার চরম সমালোচনা করে তারা বলেন, করোনাভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করার পর থেকেই সকল চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীগণ তাদের পেশার মান সমুন্নত রাখতে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন। সারা বিশ্ব তাদের এই আত্মত্যাগকে ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে সম্মানিত করছেন। বাংলাদেশের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীগণ যথাযথ ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী ব্যতীত সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে করোনার বিরুদ্ধে নিরলসভাবে লড়াই করে যাচ্ছে। করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবাপ্রদান করতে গিয়ে ইতোমধ্যে ১৮৩ জন চিকিৎসক শহীদ হয়েছেন, সহস্রাধিক চিকিৎসকসহ অসংখ্য স্বাস্থ্য কর্মী ভাইরাসটির সংক্রমণের শিকার হয়েছেন। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক চিকিৎসক আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিনে আছেন। অথচ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শুরু থেকেই চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন নিবর্তনমূলক, অসম্মানজনক, বৈষম্যমূলক, বিমাতাসূলভ আচরণ করছেন এবং বিভিন্নভাবে নাজেহাল করছেন।
নেতৃদ্বয় বলেন, সর্বশেষ গত ১৪ এপ্রিল ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া দেশব্যাপী সর্বাত্মক লকডাউনের প্রজ্ঞাপনে চিকিৎসকসহ সকল স্বাস্থ্যকর্মীদের তাদের নিজ নিজ কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন করার নিমিত্তে চলাচলের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। কিন্তু আমরা অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করছি সারাদেশেই আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কিছু ব্যক্তির অতি উৎসাহী ব্যাপ্তিবর্গের মাধ্যমে চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় বেশ কয়েকজন চিকিৎসককে হয়রানি করা হয়েছে, এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেআইনিভাবে জরিমানা করা হয়েছে। এটা স্পষ্টতই সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সমন্বয়হীনতার এবং চিকিৎসক সমাজের প্রতি কোন বিশেষ মহলের আক্রোশ ও প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ।
ড্যাব নেতৃবৃন্দ বলেন, ২০২০ সালের ৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রথম রোগী সনাক্ত হয়। এরপর সরকারের উচিত ছিল জরুরী ভিত্তিতে জাতীয় করোনা প্রতিরোধ কমিটি গঠনপূর্বক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ নীতিমালা প্রণয়ন করে সেই মোতাবেক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা। কিন্তু সরকার বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের কল্যাণের বিষয় বিবেচনায় না নিয়ে একনায়ক মানসিকতায় এককভাবে দলীয় বিবেচনায় মহামারী মোকাবিলার চেষ্টা করেছে। ফলশ্রুতিতে শুরু থেকেই সমন্বয়হীন বিশৃঙ্খল পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। করোনা প্রতিরোধের যথেষ্ট হোমওয়ার্ক না থাকায় সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাসময়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমর্থ না হওয়ায় রাজধানীতে করোনার প্রকোপ ভয়াবহ রুপ ধারণ করেছে। খোদ জনপ্রশাসন মন্ত্রী ঢাকার করোনা পরিস্থিতিকে বারুদের সাথে তুলনা করেছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন সারা ঢাকা শহরকে হাসপাতাল ঘোষণা করলেও করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়। এমতাবস্থায়ও চিকিৎসকগণ সকল স্বাস্থ্য কর্মীদের সহযোগিতায় সাহসের সাথে করোনা রোগীদের নিরলসভাবে সেবা প্রদান করছেন। বিগত বছর ঘোষিত প্রণোদনা বিভিন্ন বিভাগের সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীরা পেলেও স্বাস্থ্য বিভাগ এখনো অবহেলিত।
ডা. হারুন ও ডা. সালাম বলেন, সরকারের ন্যূনতম কৃতজ্ঞতাবোধের বহিঃপ্রকাশ চিকিৎসকগণ পাচ্ছেন না। উপরন্তু লকডাউনকালীন সময়ে নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থায় সরকারী দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে রাস্তায় চিকিৎসকগণ নাজেহাল হচ্ছেন। যা একান্তই অনভিপ্রেত, অগ্রহণযোগ্য, নিবর্তনমূলক ড্যাব চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের বিরুদ্ধে ভবিষ্যতে অসম্মানজনক, অসৌজন্যমূলক, বিমাতাসুলভ। এধরনের বিমাতাসুলভ ও প্রতিহিংসাপরায়ন আচরণ থেকে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সমূহকে বিরত থাকার আহ্বান জানান ড্যাব নেতারা। নতুবা পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য সরকারই দায়ী থাকবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন