শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কষ্টে নিম্নআয়ের মানুষ

চট্টগ্রামে টানা লকডাউনে খেটে খাওয়া মানুষের সংসারের চাকা বন্ধ হওয়ার জোগাড়

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ২১ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০১ এএম

আগে রাস্তায় নেমে বিকেলের মধ্যেই এক হাজার থেকে ১২শ’ টাকা আয় হত। এখন রাত পর্যন্ত রাস্তায় থেকেও ৫০০ থেকে ৭০০ টাকার বেশি মিলছে না। এমন কঠিন সময় আগে কখনো দেখেনি রিকসাচালক কবির হোসেন (৪৫)। তার আশা ছিল গণপরিবহন বন্ধ হওয়ায় ভাল ভাড়া মিলবে। আয়-রোজগার ভালই হবে। কিন্তু রাস্তায় নেমে দেখেন রিকসার জোয়ার। অচেনা সব মুখ রিকসা নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েছেন।
তার তথ্য, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় পরিবহন শ্রমিকরা রিকসা চালাতে শুরু করেছেন। প্রতিটি মোড়ে রিকসার ছড়াছড়ি। নেই শুধু যাত্রী। গাইবান্ধার সাদুল্লাহপুর থেকে চট্টগ্রামে আসা রিকসা চালক কবির হোসেনের মত কষ্টে আছেন স্বল্প ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা। বিশেষ করে যারা দিনে এনে খায় তাদের কষ্ট-দুর্ভোগের শেষ নেই। কঠোর লকডাউনে খেটে খাওয়া মানুষের জীবনের চাকা থমকে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। দায়-দেনা করে সংসার চলছে। তাদের শঙ্কা লকডাউন আরও দীর্ঘ হলে না খেয়ে থাকতে হবে।

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহানগরী চট্টগ্রামের জনসংখ্যা প্রায় ৭০ লাখ। এর বিরাট একটি অংশ স্বল্প ও নিম্ন আয়ের দিনমজুর। তাদের মধ্যে আছেন রিকসা, ঠেলা, ভ্যানচালক, নির্মাণ শ্রমিক, পরিবহন শ্রমিক, কুলি-দিনমজুর, ঘাট শ্রমিক, মুচি, ফুটপাতের হকার। টানা লকডাউনে সবকিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খেটে খাওয়া এসব মানুষ কষ্টে পড়েছে। লকডাউনে বন্ধ গণপরিবহন। কল-কারখানা খোলা থাকায় শ্রমিক পরিবহনে সকাল-বিকেল রিজার্ভ ভাড়ায় কিছু বাস-মিনিবাস চলছে। শত শত বাস দাঁড়িয়ে আছে নগরীর বিভিন্ন মোড়ে। বন্ধ বেশিরভাগ টেম্পো, হিউম্যান হলার ও অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত টমটম।

এসব গণপরিবহনের সাথে জড়িত লাখো শ্রমিক এখন বেকার। গাড়ির চাকা বন্ধ হওয়ায় তাদের সংসারের চাকাও বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বাসের হেলপার, টেম্পো চালকদের অনেকে রিকসা নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন। কিন্তু যাত্রীর তুলনায় রিকসার সংখ্যা বেড়ে গেছে। মহানগরীর মোড়ে মোড়ে রিকসা নিয়ে প্রখর রোদে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় চালকদের। যাত্রী দেখলেই তারা এগিয়ে আসছে। তবে মিলছে না কাক্সিক্ষত ভাড়া। একই অবস্থা ঠেলাগাড়ি ও ভ্যানচালকদেরও। বেশি কষ্টে আছেন নির্মাণ শ্রমিকেরা। লকডাউনের মধ্যে কিছু মেগাপ্রকল্পের কাজ চলমান থাকলেও ব্যক্তি পর্যায়ে নির্মাণ কাজ প্রায় বন্ধ। বন্ধ রয়েছে নির্মাণসামগ্রীর দোকানপাটও। এতে বাধ্য হয়ে অনেকে নির্মাণকাজ বন্ধ রেখেছে।

দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কাজের খোঁজে এসব শ্রমজীবী মানুষ চট্টগ্রাম নগরীতে আসেন। তদের বসবাস নগরীর শ্রমিক এলাকাগুলোতে। শ্রমিকদের বসতিতে এখন হাহাকার চলছে। শ্রমিকরা জানান, সকাল থেকে অনেক বেলা পর্যন্ত শ্রমিকের হাটে বসে থেকেও কাজ পাওয়া যাচ্ছেনা। নগরীর চকবাজার, দেওয়ানহাট মোড়, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, রাহাত্তারপুল, অক্সিজেন, এ কে খান গেইট, অলঙ্কার মোড়, স্টিল মিল বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিকের হাট বসে। সেখান থেকে ঠিকাদারের লোকজন শ্রমিকদের কাজে নিয়ে যায়। ব্যক্তিগতভাবেও অনেকে সেখান থেকে নির্মাণ শ্রমিক নেন। কিন্তু লকডাউনের কারণে শ্রমবাজার এখন মন্দা। আগে যা আয় করেছেন তা বসে বসে খাচ্ছেন এসব নিম্ন আয়ের মানুষেরা। সামনে ঈদ- বাড়িতে কী নিয়ে যাবেন সে দুশ্চিন্তা তাদের মধ্যে।

কর্ণফুলীর ১৬টি ঘাটে মালামাল খালাসে জড়িত বিপুল সংখ্যক শ্রমিক। দেশের অন্যতম বাণিজ্যিক এলাকা চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ ও আছদগঞ্জেও কুলি-মজুর এবং ঘাট শ্রমিকের কাজ করে জীবন নির্বাহ করেন অনেকে। তাদেরও এখন দুর্দিন যাচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ের মত কাজ মিলছে না। ছোটখাটো কারখানায় যারা কাজ করতেন তারাও এখন কর্মহীন। করোনার কারণে এসব কারখানা বন্ধ। ফুটপাতে হকার হিসেবে যারা জীবিকা নির্বাহ করতেন তারাও বেকার। নিম্ন আয়ের এসব মানুষের বাসাবাড়িতে অভাব-অনটন লেগেই আছে।

নগরীতে মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন করে সংসার চালান কয়েক হাজার মানুষ। লকডাউনে মোটরসাইকেল চলাচলও বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে বেকার হয়ে পড়েছেন এসব মানুষ। বাজারে সবকিছুর দাম ঊর্ধ্বমুখী। স্বল্প আয়ের লোকজন ছুটছেন টিসিবির ট্রাক এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ন্যায্যমূল্যের পণ্য কিনতে। সেখানেও দীর্ঘ লাইন। লাইন থাকতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে ট্রাকের পণ্য। গত বছরের লকডাউনে এসব হতদরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন অনেকে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ধনাঢ্য ব্যক্তিরা অকাতরে দান, খয়রাত করেছিলেন।

এবার তেমন কোন দৃশ্য চোখে পড়ছে না। সাহায্যের আশায় অনেকে ঘুরছেন। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান সাহায্য-সহযোগিতা করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। খেটে খাওয়া মানুষরা বলছেন, গত বছরের দীর্ঘ লকডাউনের তিক্ত অভিজ্ঞতা তাদের আছে। তারা কোন সাহায্য পাননি। তারা সাহায্য চান না। চান কাজের সুযোগ। সবকিছু স্বাভাবিক হলে তারা নিজেরাই খেটে খাবেন। কারও কাছে হাত পাতবেন না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
মোঃ+দুলাল+মিয়া ২১ এপ্রিল, ২০২১, ২:৪৬ এএম says : 0
এই কি কষ্ট সামনে আরো কষ্ট হবে,তোমরা জনগণের কাছে কিছুই থাকবে না ।সব যাবে পাঁচশতাধিক লোকের পোটের মধ্যে,যত দিন সংসদীয় পদ্ধতি থাকবে ততদিন তোমরা জনগণ কষ্টের মাঝে থাকবে। ..........
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন