শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

করোনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় কারা কর্তৃপক্ষ

ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি বন্দি সারা দেশের কারাগারগুলোতে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও মনিটরিংয়ের নির্দেশ উচ্চ পর্যায় থেকে

সাখাওয়াত হোসেন | প্রকাশের সময় : ২১ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০১ এএম

চটগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে এক বন্দির করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে (কেরানীগঞ্জ) জি কে শামীম করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় দেশের ৬৪ কারাগারে বন্দিদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কারা কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে বন্দিদের সাথে স্বজনদের দেখা-সাক্ষাত বন্ধের পাশাপাশি কারারক্ষী ও কর্মকর্তাদের নিদিষ্ট বাউন্ডারির বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন কারাকর্তৃপক্ষ। প্রচন্ড গরমের মধ্যে ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি ৮৫ হাজার বন্দি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কারা কর্তৃপক্ষ। করোনায় আক্রান্ত কয়েদি ও বন্দিদের আলাদা ইউনিটে রাখা এবং সাধারণ বন্দিদের নিরাপদে রাখা নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষের মধ্যে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। সারাদেশের কারাগারগুলোতে সব মিলে মোট সাতজন বন্দি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া কারা কর্মকর্তা, কারারক্ষীসহ মোট ২৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এই ৩০ জনের মধ্যে যশোর কারাগারের একজন ডেপুটি জেলার একটু বেশি অসুস্থ ছিলেন। তাকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে। তিনিও এখন ভালো আছেন। কারাগার সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে।

কেন্দ্রীয় কারাগারের একটি সূত্র জানায়, ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের ৮০ শয্যাসহ কাশিমপুর, ফেনী কিশোরগঞ্জ এবং আরও বেশ কয়েকটি জেলা কারাগারে আইসোলেশন সেন্টারের কাজ চলছে। এসব আইসোলেশন সেন্টারে বন্দি, কারা কর্মকর্তা, কারারক্ষীসহ স্টাফরা করোনায় আক্রান্ত হলে চিকিৎসা পাবেন। মহিলা কারাগারের চারতলা দু’টি ভবনে আইসোলেশন সেন্টার প্রস্তুত করা হচ্ছে। সেখানে বন্দি, কারারক্ষী ও কারা কর্মকর্তারা করোনায় আক্রান্ত হলে চিকিৎসা করা হবে।

সূত্রটি আরও জানায়, সেখানে ডিজিটাল অক্সিজেনসহ সবরকম প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে। এছাড়া কারা অধিদপ্তর থেকে চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয় চেয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়েছে। তারা যোগ দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে উদ্বোধন করা হবে সেন্টারটি। সব ধরনের কার্যক্রম শেষে চলতি মাসের শেষের দিকেই আইসোলেশন সেন্টারটি উদ্বোধন করা হতে পারে বলেও নিশ্চিত করেছে সূত্রটি।

ডিআইজি (প্রিজন) তৌহিদুর রহমান বলেন, কারা অভ্যন্তরে যাতে আসামিরা নিরাপদে থাকে, সে লক্ষ্যে কাজ করছি আমরা। করোনাকালে বন্দিদের স্বজনদের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎকার না দিয়ে আমরা ফোনে তাদের কথা বলিয়ে দিচ্ছি। করোনাভাইরাস নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ সর্তক রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

সাবেক ডিআইজি প্রিজন মেজর (অব.) শামসুল হায়দার সিদ্দিকী গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, বাইরের জগতের থেকে ভিন্ন কারাগার। আর আমাদের দেশের কারাগারগুলোতে ধারণ ক্ষতার থেকে কয়েকগুণ বেশি বন্দি রয়েছে। কারাগারে এরই মধ্যে কয়েদী ও সাধারণ বন্দি করোনায় আক্রান্ত এবং মৃত্যুর হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। কারা কর্তৃপক্ষকে সর্বোচ্চ সর্তক না হলে কারাগারে করোনাভাইরাস ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
তিনি বলেন, কারাগার বাইরের জগতের সাথে মেলানো যাবে না। এখানে নিদিষ্ট জায়গার মধ্যে অনেক লোক থাকতে হচ্ছে। ফলে দ্রæত ভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকে যায়। কারা কর্তৃপক্ষ বন্দিদের সাথে তাদের পরিবারের বা বাইরের লোকজনের সাক্ষাত বন্ধ রেখেছেন। কিন্তু কয়েদিদের বাইরে যাওয়া-আশা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ না করা হলে যে কোন সময় ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটনা পারে দেশের কারাগারগুলোতে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগে দেশের কারাগারগুলোতে ধারণ ক্ষমতা ছিল ৩০ হাজার। এখন নতুন কিছু কারাগার তৈরি করার পর ধারণ ক্ষমতা ৩৫ হাজার হলেও বন্দি রয়েছে ৮৫ হাজারের বেশি। সে ক্ষেত্রে সরকার ছোট অপরাধে বা অল্প সাজা নিয়ে যারা কারাগারে বন্দি রয়েছেন তাদের দ্রæত মুক্তি দেয়ার মাধ্যমে বন্দির সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব হলে মেজর (অব.) শামসুল হায়দার সিদ্দিকী মন্তব্য করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেন্দ্রীয় কারাগারের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, করোনাভাইরাসের মধ্যে অধিক বন্দি নিয়ে কারা কর্র্তৃপক্ষ হিমশিম খাচ্ছে। এরই মধ্যে প্রচন্ড গরম। সব মিলিয়ে কারাগারের বন্দিদের নিয়ে আমরা চিন্তিত। ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বেশ কয়েকটি কারাগারে করোনা আক্রান্ত রোগী রয়েছে। তাদের আদালা ইউনিটে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। করোনা সংক্রমণ নিয়ে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।

কারাগার সূত্রে জানা গেছে, করোনায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কাগারাগারের এক হাজতির মৃত্যু হয়েছে। গত রোববার সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মো. কামরুজ্জামান ওরফে শুক্কুর (৩৭) মৃত্যুবরন করেন। করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন কারাবন্দি ঠিকাদার জিকে শামীম। এই ঠিকাদারকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি করা হয়েছে। আক্রান্ত হওয়ায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের একটি ওয়ার্ড ও হাসপাতালের অপর একটি ওয়ার্ড লকডাউন করেছে কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার (কেরানীগঞ্জ)-এর জেলার মাহবুবুল ইসলাম জানান, জিকে শামীম শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় তিনদিন আগে বিএসএমএমইউতে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তার করোনা পরীক্ষা করলে পজেটিভ আসে। জিকে শামীমের করোনা পজেটিভ হওয়ায় কারাগারের যে ওয়ার্ডে তিনি ছিলেন, সেই ওয়ার্ডটি লকডাউন করা হয়েছে। এ ছাড়া কারা হাসপাতালের ওয়ার্ডও লকডাউন করা হয়।
কারাগার সূত্রে জানা যায়, কারা হাসপাতালের চারতলায় বেশ কয়েকজন বন্দি জ্বর ও ঠান্ডায় আক্রান্ত হয়েছেন। কারাগারের চিকিৎসকরা তাদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। নতুন বন্দিদের কারাগারের আলাদা ওয়ার্ডে আইসোলেশন করে রাখা হচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন