শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

তরুণ উদ্ভাবক ও মেধাবীদের কাজে লাগাতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২২ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০২ এএম

মানব সম্পদই কোনো দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। সৃজনশীল মেধাবি তারুণ্যের হাত ধরে যে কোনো জাতি বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। আধুনিক বিশ্বে যে সব দেশ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধি লাভ করতে সক্ষম হয়েছে, দেশের মেধাবি সন্তানরাই সেখানে মূল ভ’মিকা পালন করেছে। আজকের তথ্যপ্রযুক্তির বিশ্বে মেধাস্বত্ব এবং সফ্ট পাওয়ারের উপর জাতির সমৃদ্ধি অনেকাংশে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মেধাবি তরুণরা নতুন আশার সঞ্চার করছে। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা ম্যাগাজিন ফোর্বসের মর্যাদাপূর্ণ উদ্ভাবনী ও সৃজনশীল প্রতিভার বিশ্ব তালিকায় বাংলাদেশের ৯ তরুণের নাম উঠে এসেছে। গত মঙ্গলবার ফোর্বসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ‘ফোর্বস ৩০ আন্ডার ৩০ এশিয়া ২০২১’ শিরোনামের তালিকায় এশিয়ার ৩০০ জন নির্বাচিত সংগঠক, তরুণ উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবকের মধ্যে বাংলাদেশের ৯ তরুণ সংগঠক-উদ্যোক্তা হলেন: স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন অভিযাত্রিকের প্রতিষ্ঠাতা আহমেদ ইমতিয়াজ জামি, বেসরকারি সংস্থা অ্যাওয়ারনেস ৩৬০ সহপ্রতিষ্ঠাতা রিজভি আরেফিন ও শমী চৌধুরী, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গেজের সহপ্রতিষ্ঠাতা শেহজাদ নূর তাউস এবং মোহাসিম বীর রহমান, ক্রামস্ট্যাকের প্রধান মীর সাকিব, হাইড্রোকোপ্লাসের রিজভানা হৃদিতা ও জাহিন রোহান রাজিন, রিটেইল এন্ড ই-কর্মাস প্লাটফর্ম পিকাবোর সহপ্রতিষ্ঠাতা মোরিন তালুকদার। এদের সবার বয়েস তিরিশের নিচে। যার যার অবস্থান ও কর্মক্ষেত্রে এদের অবদান বৃহৎ জনগোষ্ঠির জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা রাখছে বলেই ফোর্বসের তালিকায় তারা স্থান লাভ করতে সক্ষম হয়েছে।

চলমান বৈশ্বিক করোনা পেন্ডেমিকে সারাবিশ্বের সামাজিক-অর্থনৈতিক কর্মকান্ড যখন স্থবির হয়ে পড়েছে, তখনো কিছু তরুণ উদ্যোক্তার বাস্তবোচিত পদক্ষেপ এবং উদ্ভাবনী মেধা ও উদ্যোগ এই করোনাকালীন সময়েও বিপুল সংখ্যক মানুষের জীবনমান উন্নয়নে প্রভুত ভূমিকা রেখে চলেছে। করোনাকালীন সংকটে অভিযাত্রিকের মত সামাজিক সংগঠন কর্মহীন-দুর্গত মানুষের পাশে দাড়িয়েছে। তারা ৬৫ হাজার পরিবারকে রান্না করা খাবার এবং ৮০ হাজার পরিবারকে চাল-ডালসহ নিত্যপণ্য এবং বিনামূল্যে শাক-সব্জি সরবরাহ করে দেশে-বিদেশে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। ডায়রিয়ায় নিজের মায়ের মৃত্যুর পর বিশুদ্ধ পানি ও সেনিটেশন নিয়ে কাজ করার প্রতিজ্ঞা করে রিজভি আরেফিনকে সাথে নিয়ে ‘অ্যাওয়ারনেস থ্রিসিক্সটি’ নামের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন শমী চৌধুরী। মালয়েশিয়ায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে সেখান থেকেই থ্রিসিক্সটির কর্মকান্ড শুরু করে বাংলাদেশসহ ২৩টি দেশে তাদের তৎপরতা বিস্তৃত করেছেন। প্রায় একইভাবে সামাজিক প্রভাব ক্যাটাগরিতে পানি বিশুদ্ধকরণ ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ ও উন্নয়নে অবদান রাখছে হাইড্রোকো প্লাস নামের প্রতিষ্ঠানের দুই সহপ্রতিষ্ঠাতাও। এন্টারপ্রাইজ টেকনোলজিতে ক্র্যামস্ট্যাক ও গেজ এর কর্মপরিধি চলমান করোনার সময় সিঙ্গাপুর ও বাংলাদেশে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলেছে। দেশে-বিদেশে বাংলাদেশী তরুনদের এমন হাজারো উদ্যোগের কথা অনেকেরই অজানা। আবার এমন আরো হাজার হাজার প্রতিভাবান তরুণ রয়েছেন যারা অনেক স্বপ্ন ও সম্ভাবনা পুষে রেখেও কোনো উদ্যোগ নিতে পারছে না। ফোর্বসের তালিকায় স্থান পাওয়া বাংলাদেশি ৯ তরুন প্রতিভা দেশের আরো হাজারো তরুনের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠতে পারেন বলে আমরা বিশ্বাস করি।

ফোর্বসের তালিকার বাইরে আরো হাজার হাজার তরুণ উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবনী প্রতিভা দেশে বিদেশে অসামান্য অবদান রাখছেন। নাসার মত আন্তর্জাতিক সংস্থায় বাংলাদেশী বিজ্ঞানী ও উদ্ভাবকরা বিশ্বের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে। কিছু সংখ্যক তরুণ-তরুণী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপে শিক্ষা ও গবেষণা কর্মে নিয়োজিত হয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হলেও দেশের সরকারি বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এ ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক পিছিয়ে আছে। অথচ কাছের দেশ ভারত, চীন, মালয়েশিয়াসহ এশিয়া ও ইউরোপ-আমেরিকার যে সব দেশ শিক্ষা ও প্রযুক্তি উন্নয়নের পথ ধরে যে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করেছে তার পেছনে দেশীয় উদ্যোক্তা এবং উদ্ভাবকদের অবদানই সবচেয়ে বেশী। মার্কিনযুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিভিন্ন দেশ থেকে যাওয়া মেধাবী তরুণদের মধ্যে বাংলাদেশিদের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। চীনা নেতারা বিদেশে কর্মরত মেধাবী চীনা তরুণদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিশাল সাফল্য অর্জনে সক্ষম হয়েছে। মালয়েশিয়া এবং ভারতের ক্ষেত্রে একই রকম সাফল্য ধরা দিয়েছে। বাংলাদেশকেও এই ধারা অনুসরণ করতে হবে। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশী উদ্ভাবক ও উদ্যোক্তাদের জন্য উপযুক্ত কর্মক্ষেত্র সৃষ্টির মাধ্যমে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। সেই সাথে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কারিগরী শিক্ষার সাথে জড়িত লাখ লাখ তরুনকে যুগোপযোগী ও কর্মমুখী শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। শিল্প, প্রযুক্তি, সমাজকর্ম এবং সাহিত্য-সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সম্ভাবনাময় সৃজনশীল প্রতিভা, উদ্ভাবক ও উদ্যোক্তাদের চিহ্নিত, মূল্যায়ণ ও পৃষ্ঠপোষকতা দানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, মূলধনের যোগান এবং পেশাগতভাবে অধিকতর সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবকদের ফিরিয়ে এনে দেশের সমৃদ্ধির নতুন সম্ভাবনা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Jack Ali ২২ এপ্রিল, ২০২১, ৫:০৩ পিএম says : 0
If our country rule by Qur'an then we don't need to write this article like"তরুণ উদ্ভাবক ও মেধাবীদের কাজে লাগাতে হবে".. We have noticed that so many youth they hae invented so many things but our ignorant government never supported them. The ruler is only interested to stay in power by Hook and Crook and loot our hard earned tax payers billion billion dollars and sending to foreign countries. They don't love our mother land and people.
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন