বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

আগামী বাজেট দরিদ্র মানুষের : অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২১ এপ্রিল, ২০২১, ৭:৩৮ পিএম | আপডেট : ৭:৪৩ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২১

ফাইল ছবি


অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, আগামী অর্থবছরের বাজেট দেশের দরিদ্র মানুষের জন্য নিবেদিত থাকবে। দরিদ্রদের নিয়ে চালানো দুটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জরিপের বিষয়ে তুলে ধরে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘গরিব মানুষের জন্য আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে তাদেরকে গরিব থেকে বের করে নিয়ে আসা। যারা অতিরিক্ত গরিব আছে তারা গরিব হবে এবং যারা গরিব আছে তাদেরকে আমরা মূলস্রোতধারায় নিয়ে আসব। সেভাবেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আর গবেষণা করে যদি তারা কোনো তথ্য দিয়ে থাকে সেটা পরিসংখ্যান ব্যুরো দেখবেন। তাদের অ্যাসেসমেন্টে আমরা গ্রহণ করব। সেটা এখনো তৈরি হয়নি, হলে আমরা অবশ্যই আপনাদের জানাবো।

বুধবার (২১ এপ্রিল) অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

দরিদ্রদের মূলস্রোতে আনতে বাজেটে বড় একটি বরাদ্দ দরকার, সেক্ষেত্রে নতুন করে সামাজিক সুরক্ষাখাতে বাড়তি কোনো বরাদ্দ রাখবেন কি-না জানতে চাইলে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আমাদের আগামী বাজেট নিবেদিত থাকবে এ দেশের দরিদ্র মানুষের জন্য। এরাই অগ্রাধিকার পাবে। সুতরাং আমরা ’মানুষের জীবন-জীবিকার জন্য বাজেটে জায়গা করে দেবো।

গতবছর দরিদ্রদের অর্থ বিতরণে গোলমাল হয়েছে, এবছর ৩৫ লাখ মানুষকে আড়াই হাজার টাকা করে দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত কী জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের মিসম্যাচটা হওয়ার কারণ হলো- আমাদের যেসব প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বা পিছিয়েপড়া জনগণের কথা বলছেন, তাদের যে আইডিটাকার্ড বা মাধ্যম রয়েছে সেখানে সরাসরি ট্রান্সফার করে দেই। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে সেটি ট্রান্সফারের উপযুক্ত থাকে না। সেজন্য একটু বিলম্ব হয়। কিন্তু আমরা কাজগুলো করছি। যাদেরকে আমরা আড়াই হাজার টাকা করে দেবো, সরকারের সিদ্ধান্ত হচ্ছে এই টাকা সরাসরি ট্রান্সফার করা। সরাসরি ট্রান্সফার করতে গেলে সিস্টেম ডেভেলপ করতে হবে। আর একবার যদি সিস্টেমে চলে আসে তাহলে ভবিষ্যতে এর চেয়ে সহজ কাজ আর হবে না। তখন আমরা কম সময়ে অনেক বেশি কাজ করতে পারব। প্রধানমন্ত্রী ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন সুতরাং এই আড়াই হাজার টাকা বিতরণের কাজ শিগগির শুরু হবে বলেও জানান তিনি।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপনের বিষয়টি অনুমোদন হয়েছে, সর্বশেষ দুইটি মিটিংয়ে একই বিষয় উঠে বাতিল হয়েছিল, সে বিষয়ে জানতে চাইলে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আগে আমরা বাতিল করিনি। যে শর্তগুলো ছিল সেগুলো আমরা পূরণ করে নিয়ে এসেছি। এগুলো একই প্রকল্প। আগেরগুলোর সঙ্গে দেখলে বোঝা যাবে বিভিন্ন জিনিস এনে যুক্ত করতে হয়েছে। যেসব মহাসড়কে আমাদের পরিবহনের জন্য এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব এসেছিল সেগুলো একটার পর একটা অনুমোদন হচ্ছে। একই জিনিসগুলো আসছে।

করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের সঙ্কট রয়েছে বলে গণমাধ্যমে এসেছে, বৈঠকে ভ্যাকসিনের বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী কিছু বলেছেন কি-না জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের যে প্রস্তাব এসেছিল ১৩ হাজার ৮৮১টি কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য আমরা এসেনসিয়াল ড্রাগস থেকে ওষুধ কিনব। এর বাইরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অন্য কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করি নাই এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো প্রকল্পও আমাদের সামনে আসেনি।

১৪০ কোটি টাকায় ২৭ প্রকারের ওষুধ কেনা হবে

সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে সরকার ১৪০ কোটি টাকার ২৭ প্রকার ওষুধ সম্বলিত ৮০ হাজার কার্টুন ওষুধ কেনার একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এছাড়া বৈঠকে মোট ২ হাজার ২০৫ কোটি ১৭ লাখ ২ হাজার ৪১৫ টাকা ব্যয়ে ৮টি ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

বৈঠকে কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও উর্ধ্বতন র্কর্মতারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. শাহিদা আক্তার।

অতিরিক্ত সচিব ড. শাহিদা আক্তার জানান, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অধীন কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার কর্তৃপক্ষ (সিবিএইচসি) কর্তৃক ২৭ প্রকার ওষুধ সম্বলিত ৮০ হাজার ৭৩৪ কার্টন ওষুধ কেনার একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। মোট ১৩৯ কোটি ৯৯ লাখ ৯৫ হাজার ৮২০ টাকায় সরকারি প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানী লিমিটেড এর কাছ থেকে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (ডিপিএম) এই ওষুধ কেনার অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

এছাড়া মধুখালী থেকে কামারখালী হয়ে মাগুরা শহর পর্যন্ত ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ কাজের দুইটি পৃথক প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ৮৮২ কোটি ৭৩ লাখ ২৫ হাজার ৮৮৩ টাকা। অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর বিস্তারিত তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. শাহিদা আক্তার জানান, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃক ‘মধুখালী থেকে কামারখালী হয়ে মাগুরা শহর পর্যন্ত ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং ডব্লিউডি-১ এর নির্মাণ কাজ যৌথ ভাবে চায়নার সিআরইসি এবং বাংলাদেশের সিসিসিএল বাস্তাবয়ন করবে।

এ জন্য ব্যয় হবে ৪৩৩ কোটি ৭৮ লাখ ৩২ হাজার ৯০৮ টাকা। বৈঠকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃক ‘মধুখালী থেকে কামারখালী হয়ে মাগুরা শহর পর্যন্ত ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং ডব্লিউডি-২ এর নির্মাণ কাজ যৌথভাবে চায়নার সিসিআরসি এবং বাংলাদেশের এমএএইচএল দরপ্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এ জন্য ব্যয় হবে ৪৪৮ কোটি ৯৪ লাখ ৯২ হাজার ৯৭৫ টাকা।

স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন খুলনা ওয়াসা কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন 'খুলনা পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প’ এর আওতায় ১২৪ কি.মি. স্যুয়ারেজ পাইপ লাইন, ৩টি স্যুয়ারেজ পাম্পিং স্টেশন ও ১৩ হাজার ৮০০টি সার্ভিস কানেকশন নির্মাণ কাজের ঠিকাদার হিসেবে চায়না জিইও ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশ কে নিয়োগ দেওয়ার একটি ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এ জন্য ব্যয় হবে ৬৯৬ কোটি ৭৬ লাখ ২৪ হাজার ৭২৭ টাকা।

বৈঠকে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অধীন পেট্রোবাংলা কর্তৃক সিঙ্গাপুর ভিত্তিক ভাইটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড এর কাছ থেকে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি কেনার একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এ জন্য ব্যয় হবে ২৬৭ কোটি ৫৭ লাখ ৫১ হাজার ১৭১ টাকা। প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম পড়বে ৮ দশমিক ০১২ মার্কিন ডলার। এরআগে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র সভা অনুষ্ঠিত হয়।

স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে সিটি কর্পোরেশন গুলোর জন্য জার্মান থেকে উইড হারভেস্টার সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে কেনার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
রুবি আক্তার ২১ এপ্রিল, ২০২১, ৮:২৪ পিএম says : 0
ইনশায়াল্লাহ, এমনটাই যেন হয়। বাংলাদেশে একটা শ্রেণি অনেক ধনী আর আরেকটা শ্রেণি খুবই দরিদ্র। এই দরিদ্রদের জন্য বিশেষ বাজেট প্রয়োজন।
Total Reply(0)
মনিরুল ইসলাম ২১ এপ্রিল, ২০২১, ৮:২৫ পিএম says : 0
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, প্রতি বাজেটে ধনীরাই কেবল সুবিধা বেশি পায়। আপনার এদিকে সুদৃষ্টি কামনা করছি।
Total Reply(0)
সাইফুল ইসলাম ২১ এপ্রিল, ২০২১, ৮:২৬ পিএম says : 0
দরিদ্রদের গরিব থেকে বের করে নিতে হলে আগে দুরনীতি মুক্ত করতে হবে। তবেই বাজেটের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন হয়ে লক্ষ্য হাসিল হবে।
Total Reply(0)
Shamal Nath Sam ২১ এপ্রিল, ২০২১, ৯:৩৭ পিএম says : 0
গরীর এবং কৃষক কোন দিন এদেশে বড় হতে পারবে না। দুর্নীতি এবং লুটপাট করা এই দেশের মূলমন্ত্র। কৃষি ব্যাংক সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিবাজ।কৃষকে লোন না দিয়ে দেয় ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিবিদের।
Total Reply(0)
Md Sayde Hasan ২১ এপ্রিল, ২০২১, ৯:৩৮ পিএম says : 0
এটাতো বরাবরই হয়ে আসতেছে কিন্তু বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে উল্টো হয়ে যায়
Total Reply(0)
Rakib Hasan ২১ এপ্রিল, ২০২১, ৯:৩৯ পিএম says : 0
বাংলাদেশের কারা দরিদ্র কত পার্সেন্ট দরিদ্র তার তালিকা কি আপনাদের কাছে আছে?কি পদ্ধতিতে বন্টন করবেন গরীবের মাঝে?
Total Reply(0)
akram ২১ এপ্রিল, ২০২১, ১০:৩৬ পিএম says : 0
বাংলাদেশে অধিকাংশ বাজেটেই দুর্নীতি হচ্ছে। আমরা চাই এই দুর্দিনে মানুষ সঠিকটা যাতে পাই।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন