বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

করোনা চিকিৎসায় নতুন আস্থা

ডিএনসিসি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২২ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০০ এএম

দেশে করোনাভাইরাস মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকা সংক্রমণে হাসপাতালে শয্যা সংকটের মধ্যে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ২১২টি আইসিইউ নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছে ডিএনসিসি হাসপাতাল। মাত্র চারদিন দিন আগে চালু হওয়া এ হাসপাতালই এখন সাধারণ মানুষের আস্থা। গতকাল পর্যন্ত তিন দিনে এ হাসপাতালে ১২৪জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৭৫ জন। করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় চিকিৎসা সেবার হাহাকারে অনেকটাই আস্থা জুগিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের এ মহৎ উদ্যোগ। চেষ্টা ও ইচ্ছা থাকলে অসম্ভবকে যে সম্ভব করা যায় তার উৎকৃষ্ঠ উদাহরণ ডিএনসিসির ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতাল।

গতকাল বুধবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন জানান, রাজধানীসহ সারাদেশের করোনা রোগী এই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসছেন। তিনি বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত কাউকে ফেরত পাঠাইনি। তবে এভাবে সব রোগী এখানে আসতে শুরু করলে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হবে।

হাসপাতালটি উদ্বোধন হলেও এখনো জনবল সংকট রয়েছে জানিয়ে নাসির উদ্দিন বলেন, ১ হাজার শয্যার হাসপাতালে ২৫০টি শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছি। পর্যাপ্ত জনবল না পাওয়ায় চিকিৎসা সেবা দিতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। চলতি মাসের মধ্যেই এক হাজার শয্যা চালু করতে চাই। কিন্তু জনবল না পেলে সেটা সম্ভব হবে না। তবে আজ আরও কিছু চিকিৎসক এবং নার্স কাজে যোগ দেবেন বলেও তিনি জানান।

তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) সকাল ৮টা থেকে গতকাল বুধবার (২১ এপ্রিল) সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় চারজন রোগী মারা গেছেন। হাসপাতালটি উদ্বোধনের পর এখন পর্যন্ত মোট ১৩ জন মারা গেছেন। যারা মারা যাচ্ছেন তাদের বেশিরভাগের বয়স ৬০ বছরের বেশি। এছাড়া এই হাসপাতালে এখন পর্যন্ত ৩০০ জন করোনা রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। গত সোমবার সকাল ৮টা থেকে দেশের বৃহত্তর করোনা হাসপাতাল ‘ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতালে’ রোগী ভর্তি শুরু হয়।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে বেসামাল পরিস্থিতিতে চালু হওয়া মহাখালীর ডিএনসিসি কোভিড-১৯ হাসপাতালে রোগী বাড়ছে। রোগীর সংখ্যা দ্রæত বাড়তে থাকায় ১ হাজার শয্যার এই হাসপাতাল চালু করে গত সোমবার থেকে কোভিড-১৯ রোগীর সেবা দেওয়া শুরু হয়। এর আগে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, অনেক রোগী আসছে। সোমবার রাতে হাসপাতালটির আইসিইউতে ২৮ জন রোগী ছিলেন, মঙ্গলবার দুপুরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫ জনে।

ব্রিগেডিয়ার ডা. নাসির বলেন, প্রথম দিন আমাদের এখানে ১৯৯ জন রোগীর রিপোর্ট পড়েছিল। আমরা কিছু ভর্তি করে বাকিদের পরামর্শ ও সেবা দিয়েছি। এর মধ্যে আইসিইউতে ট্রিটমেন্ট নিয়ে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের অবস্থা খুব খারাপ ছিল। হাসপাতালটিতে ২১২টি আইসিইউ শয্যা প্রস্তুত থাকলেও জনবল সঙ্কটের কারণে সেগুলো পুরোপুরি চালানো যাচ্ছে না বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, লোকবল পেলে আমরা সবগুলো আইসিইউ চালু করতে পারব। সবার তো ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন হবে না। কিন্তু বিষয় হচ্ছে আমাদের এক্সপার্ট ম্যানপাওয়ার লাগবে। আমরা আস্তে আস্তে করে বাড়াচ্ছি। লোকবল সঙ্কট কাটিয়ে ২৯ এপ্রিলের মধ্যে হাসপাতালটি ১০০০ রোগীর জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেন তিনি। পরিচালক বলেন, হাসপাতাল টিকে আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত করে ফেলেছি। লোকবল পেলেই আমরা ধীরে ধীরে আরও বাড়াতে থাকব। প্রতিদিনই সেবা বাড়াতে থাকব।

এখন কাউকে ফেরত পাঠানো না হলেও অন্যান্য হাসপাতালে যারা ভর্তি আছেন, তাদের এই হাসপাতালে না আসার পরামর্শ দেন ব্রিগেডিয়ার নাসির। তিনি বলেন, তাদেরকে আমরা নিচ্ছি না। তারা যেখানে আছেন, তাদের আমরা সেখানে থাকতেই বলছি। যারা কোথাও পাচ্ছেন না, তাদের আগে নিই, তারপর আমরা তাদের নেওয়ার চেষ্টা করব। জানা গেছে, রাজধানীর কারওয়ান বাজারের আড়ত সরিয়ে আনতে মহাখালীতে সাত দশমিক ১৭ একর জমির ওপর ডিএনসিসির মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছিল। সেই মার্কেটকেই কোভিড-১৯ হাসপাতালে রূপান্তরিত করেছে ডিএনসিসি। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ২০২০ সালে এখানে প্রথম গড়ে তোলা হয়েছিল এক হাজার শয্যার আইসোলেশন সেন্টার। সেই আইসোলেশন সেন্টারকেই ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলামের ইচ্ছায় করোনা হাসপাতাল করা হয়েছে।

হাসপাতালের সেবা নিয়ে রোগীর স্বজনরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। রাসেল নামে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী জানান, দুদিন যাবত তার মামা এই হাসপাতালে ভর্তি আছেন। শুরুতেই রোগীর অবস্থা অনেকটাই খারাপ ছিল। একদিন সেবা পাওয়ার পর থেকে অবস্থা ভালোর দিকে। রাসেল জানান, করোনা রোগীর কারণে হাসপাতালে প্রবেশে বেশ কড়াকড়ি। রোগীর এটেনডেন্ড ছাড়া কাউকে ভিতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। সেক্ষেত্রেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হয়। হাসপাতালের সেবার মান খুবই ভালো উল্লেখ করে রাসেল বলেন, করোনার উর্ধ্বমুখি সংক্রমণে এরকম উন্নত একটি হাসপাতালের সেবা অনেক রোগীর জীবন বাঁচাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। হাসপাতালের আইসিইউ এক রোগীর স্বজন মুজিবুর রহমান বলেন, নতুন এ হাসপাতালই এখন আমাদের মতো সাধারণ মানুষের আস্থা-ভরসা। চেষ্টা ও ইচ্ছা থাকলে এরকম আরও হাসপাতাল গড়ে তোলা সম্ভব। এ মহৎ উদ্যোগের জন্য ডিএনসিসির মেয়রকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এই মহামারিতে মানুষকে বাঁচাতে দেশের বড় বড় শিল্প কারখানার মালিক ও ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আসার আহবান জানাই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
শওকত আকবর ২২ এপ্রিল, ২০২১, ৯:৩৪ এএম says : 0
আপনাদের সফলতা কামনা করি।আপনারা এগিয়ে যান।আল্লাহ স্বরন করুন।আমরা প্রত্যন্ত গ্রামান্চলের লোক সুদুর ঢাকা গিয়ে সিকিৎসা সেবা সেবা আকাশ কুসুম কল্পনা।আমাদের ভরসা একমাত্র আল্লাহ।আল্লাহ ই আমাদের হেফাজত করবেন।আমিন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন