আজ থেকে ফের সাত দিনের কঠোর লকডাউন শুরু হচ্ছে। গত মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে ২২ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ২৮ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত লকডাউনে কঠোর বিধিনিষেধ মেনে চলার জন্য বলা হয়। তবে গতকাল দ্বিতীয় দফার লকডাউন ঢিলেঢালাভাবে শেষ হয়েছে। সর্বাত্মক কঠোর বিধিনিষেধের অষ্টম দিনে গণপরিবহন ছাড়া সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। এছাড়া পাড়া-মহল্লায় দোকানপাট খোলা ছিল। শুধু তাই নয়, বাসা-বাড়ি থেকে নারী-পুরুষ বিনা বাধায় বের হয়ে অযথা ঘোরাফেরাও করতে দেখা গেছে। রাজধানীর পুরান ঢাকার সিক্কাটুলী লেন, নাজিরাবাজার, চাকবাজার, কারওরান বাজার, ফার্মগেট, ধানমন্ডি, শ্যামলী, মোহাম্মদপুর, আজিমপুর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ওইসব এলাকায় দোকানপাটগুলো খোলা রয়েছে। সকাল থেকে বিনা বাধায় নারী-পুরুষ বাসা থেকে বের হচ্ছেন। শুধু তাই নয়, রিকশা, প্রাইভেটকার, সিএনজি অটোরিকশা যুগে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাতায়াত করছেন। এছাড়া পাড়া মহল্লায় তরুণ-তরুণীদের আড্ডা দিতেও দেখা গেছে। বিশেষ করে পুরান ঢাকায় উঠতি বয়সীদের আড্ডা বেশি বলে জানা গেছে।
পুরান ঢাকার সিক্কাটুলী লেনের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম। গতকাল তিনি বলেন, তাদের এলাকায় লকডাউনের কোনো আলামতই নেই। প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত তাদের এলাকায় দোকানপাট খোলা থাকে। এছাড়া সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তাদের এলাকায় বসবাসকারী নারী পুরুষ ইচ্ছে মত রাস্তায় ঘোরাফেরা করছেন। ওই এলাকায় পুলিশের কোনো তৎপরতা নেই বলেও জানান তিনি।
গতকাল সরেজমিনে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় দেখা গেছে, কঠোর বিধিনিষেধ জারির শুরুতে সড়কে নির্দিষ্ট দূরত্ব পরপর পুলিশি চেকপোস্ট থাকলেও আস্তে আস্তে তা কমতে শুরু করেছে। সেইসঙ্গে সড়কে গণপরিবহন ছাড়া, অটোরিকশা, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, রিকশা ও মাঝেমধ্যে বিআরটিসির বাস চলতে দেখা গেছে।
জলিল নামে মিরপুরের এক বাসিন্দা বলেন, কঠোর লকডাউন হলেও রাস্তায় সবকিছুই চলছে। শুধু বাস ছাড়া। আর বাস না চলায় প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল চালকরা একপ্রকার ডাকাতি শুরু করেছে। আমাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তারা কয়েক গুণ বেশি ভাড়া চাচ্ছে। আমি গুলিস্তান যাব। সিএনজি বলছে ৫০০ টাকার নিচে যাবে না। আর বাইকাররা বলছে ৪০০ টাকা লাগবে। সবই যেহেতু চলছে, তাহলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাস চললে অন্তত আমাদের মতো যাত্রীদের পকেট কাটা যেতো না।
এদিকে, কঠোর বিধিনিষেধের অষ্টম দিনেও ঢাকা ছাড়ছে কর্মজীবী মানুষ। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় শুরু থেকেই প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস বা মোটরসাইকেলে করে যাত্রীরা ঢাকা ছেড়ে গ্রামে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে এসব পরিবহনের ভাড়া বেশি হওয়ায় এখন অনেকেই ট্রাক বা পিকআপে ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরছেন।
যাত্রীরা বলছেন, ট্রাক বা পিকআপের ভাড়া অন্যান্য পরিবহনের তুলনায় অনেক কম। তাই কম টাকায় বাড়ি যাওয়ার মাধ্যম হিসেবে ট্রাকে যেতে হচ্ছে। গাবতলী গরুর হাট সংলগ্ন এলাকায় পুলিশের কড়া নজরদারি থাকায় বেশিরভাগ যাত্রী আমিন বাজার ব্রিজের উপরে গিয়ে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল কিংবা পিকআপে করে বাড়ি ফিরছেন।
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে সরকার ঘোষিত ১৮ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নে গত ৫ এপ্রিল থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে বিধিনিষেধ জারি করা হয়। নির্দেশনা অনুসারে জরুরি পণ্যবাহী পরিবহন ছাড়া রাস্তাঘাটে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়ারও নির্দেশনা ছিল। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিষেধাজ্ঞার দ্বিতীয় দিন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঘোষণা দেন, দেশের বিভিন্ন সিটি করপোরেশন এলাকায় ৬ এপ্রিল থেকে সকাল সন্ধ্যা গণপরিবহন চলবে।
তবে আন্তঃজেলা বাস চলাচল বন্ধ থাকবে। পরবর্তীতে করোনার সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত এক সপ্তাহের কঠোর নিষেধাজ্ঞা ১১ এপ্রিল শেষ হলেও এর মেয়াদ বাড়িয়ে ১২ ও ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। নিষেধাজ্ঞা শেষে ১৪ এপ্রিল থেকে সর্বাত্মক বিধিনিষেধ জারি করে সরকার। পরে আরো এক সপ্তাহ কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দেয় সরকার। আজ থেকে সেই লকডাউন শুরু হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন