শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

দক্ষিণাঞ্চলে ডায়রিয়া পরিস্থিতির ক্রমাবনতি অব্যাহত

৪৮ ঘন্টায় আক্রান্ত আরো ৩ সহস্রাধিক নারী-পুরুষ ও শিশু মৃত্যু এক

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২২ এপ্রিল, ২০২১, ৫:১২ পিএম

সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে ডায়রিয়ার ভয়াবহ বিস্তার অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরের পূর্ববর্তী ৪৮ ঘন্টায় এ অঞ্চলের ৬ জেলায় আরো ৩ সহস্রাধিক নারী-পুরুষ ও শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হবার পাশাপাশি বরিশালের বাকেরগঞ্জে একজনের মৃত্যু ঘটেছে। এনিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে সরকারী হিসেবে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫ হাজারের ওপরে উঠল। মৃতের সংখ্যা ৯ জনে উন্নীত হয়েছে। সরকারী এ পরিসংখ্যান শুধুমাত্র সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসাদের। তবে বেসরকারী সূত্রের মতে এ অঞ্চলে ডায়রিয়া আক্রান্ত অন্তত ৭০ ভাগ মানুষ নিজস্ব ব্যবস্থাপনা বা চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত তত্বাবধানে চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকেন।

স্মরনকালের ভয়াবহ দাবদহের সাথে খাবার গ্রহনে অসতর্কতা সহ নানা অজ্ঞাত কারণেও এবার ডায়রিয়ার ব্যপক বিস্তার ঘটছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধীক চিকিৎসক জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে ঢাকার আইইডিসিআর-এর একটি টিম দক্ষিনাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে ডায়রিয়া রোগীদের ‘রেক্টাম সোয়াব’ সংগ্রহ করছেন। এমনকি ডায়রিয়ার সাথে করোনা ভাইরাসের কোন সংযোগ আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারণ অনেক কেভিড-১৯ রোগীরই অন্যতম উপসর্গ পেটের পীড়া।
পাশাপাশি এবার লাগাতর অনাবৃষ্টির সাথে উজানের নদ-নদীর প্রবাহ হ্রাসের ফলে সগরের জোয়ারের পানি সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলকে অনেকটাই গ্রাস করেছে। বঙ্গোপসাগর থেকে ১১০ কিলোমিটার উজানে বরিশাল মহানগরীর পাশের কির্তনখোলা নদীতে লবনাক্ততার পরিমান এবার ১ হাজার পিপিএম-এর ওপরে। তবে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে দক্ষিনাঞ্চলের প্রায় ৯৫% মানুষ এখন বিশুদ্ধ পানি পান করলেও লবনাক্ততার এ বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

দক্ষিনাঞ্চল যুড়ে সরকারী হিসেবেইে প্রতিদিনই ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। মঙ্গলবারের তুলনায় বুধবার আক্রান্তের সংখ্যা ১২ জন বেড়ে ১,৫২৪ জনে হলেও বৃহস্পতিবার আরো ১৮ জন বৃদ্ধি পেয়ছে। গত ২৪ ঘন্টায় আক্রান্তের সংখ্যাটা ১ হাজার ৫৪২ জনে উন্নীত হয়েছে। এ নিয়ে সরকারী হিসেবে দক্ষিণাঞ্চলের ৪২টি উপজেলার মধ্যে উপ্রদ্রæত ১৮টিতে গত ৭দিনে ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা দাড়াল ৯ হাজার ৫২৪ জনে। এসময় মারা গেছেন ৭ জন। বুধবারেও বরিশাল সদর হসপাতাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা হাসপালগুলোতে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের ঠাই মিলছিল না। বৃহস্পতিবার দুপুরে ৪ বেডের বরিশাল সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগী ছিল প্রায় ৪৫ জন। ফলে এখনো হাসপাতালটির মাঠে তাবুর নিচে বেডে ও খোলা মাটিতে নারীÑপুরুষ ও শিশুদের একইসাথে চিকিৎসা চলছে।
দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহত চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখনো কোন বয়স্ক ডায়রিয়া রোগী ভর্তি করা হচ্ছে না। এমনকি সেখানে কোন বয়স্ক ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসা পরামর্শ পর্যন্ত দেয়া হয়না। মাস কয়েক আগে এ হাসপাতালটি থেকে চিকিৎসা সেবা না পেয়ে সদর হাসপাতালে যাবার পথে এক ডায়রিয়া রোগীর পথেই মৃত্যু ঘটে। ফলে মহানগরী সহ সন্নিহিত এলাকার ডায়রিয়া রোগীদের ভরসাস্থল বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের ৪টি বেড।
স্বাস্থ্য বিভাগের মতে দক্ষিণাঞ্চলে গত এক মাসে ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা দাড়িয়েছে ১৮ হাজার ৬২২ জনে। আর এসময়ে মারা গেছেন ৮ জন। গত তিন মাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৩ হাজার ৬৩৮ জন। অথচ গত ১৩ মাসে দক্ষিনাঞ্চলে করোনা সংক্রমনের শিকার হয়েছেন ১৩ হাজার ৯১০জন। তবে এ পর্যন্ত ৩১ হাজার ৬০৬ জন ডায়রিয়া রোগী সুস্থ হয়েছেন বলেও স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে বলা হয়েছে।

বুধবার দুপুরের পূর্ববর্তি ৪৮ ঘন্টায় যে ৩ হাজার ৬৬ জন নতুনকরে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন, তার মধ্যে শুধুমাত্র ভোলাতেই ৭৬৫ জন। জেলাটিতে এ পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা সরকারী হিসেবে ৮ হাজার ৮৮৫। গত ৪৮ ঘন্টায় বরগুনাতে ৬০৫ জন সহ এ পর্যন্ত ৫ হাজার ৪৫২ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যুবরন করেছেন দুজন। পটুয়াখালীতেও গত ৪৮ ঘন্টায় ৬৪১ জন সহ মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৭ হাজার ৯৭২। মারা গেছেন দুজন। ঝালকাঠীতে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৮ ঘন্টায় ৩৯৫ জন সহ এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৮৫০ জন। বরিশালে এসময়ে ৩৭৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। ফলে জেলাটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যাটা দাড়িয়েছে ৪ হাজার ৭৬০জনে। মারা গেছেন ৫ জন। আর পিরোজপুরে ৪৮ ঘন্টায় ২৮৪ জন সহ এপর্যন্ত ৪ হাজার ৪২৬ জনের ডায়রিয়া আক্রান্তের কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

করোনা মহামারীর ভয়াবহ সংকটের মধ্যেই ডায়রিয়ার স্মরনকালের ব্যপক বিস্তারে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের জনজীবনে নতুন সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ক্রমে তা বড় ধরনের স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে বলেও মনে করছেন কোন কোন চিকিৎসক। পরিস্থিতি উত্তরনে সকলকে প্রচন্ড তপদহের মধ্যে বিশুদ্ধ পানি পান করা ছাড়াও খাবার গ্রহনে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনেরও তাগিদ দিয়েছেন চিকিৎসকগন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডাঃ বাসুদেব কুমার সাহা অস্বাভাবিক দাবদহ ও বৃষ্টির অভাবের সাথে খাবার গ্রহনে অসতর্কতাকে ডায়রিয়ার জন্য দায়ী করলেও মাঠ পর্যায়ে অরো তথ্য সংগ্রহের কথা জানিয়েছেন। প্রতিবছরই মৌসুমের এসময় ডায়রিয়া সহ নানা ধরনের পেটের পীড়া দেখা দিলেও এবার সংখ্যাটা যথেষ্ঠ বেশী বলে দাবী করে তিনি সকলকে পানি সহ সবধরনের খাবারের ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বনেরও তাগিদ দিয়েছেন।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন