শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

পটুয়াখালীতে ডায়রিয়া ১মাসে আক্রান্ত ৪৩০৯, মৃত্যু ৫

করোনায় ১ মাসে আক্রান্ত ২৯০, মৃত্যু ৭

পটুয়াখালী জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২২ এপ্রিল, ২০২১, ৫:১৮ পিএম

বর্তমানে মহামারী করোনার চেয়েও ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে দক্ষিণের জেলা পটুয়াখালীতে ডায়রিয়া। হাসপাতাল গুলিতে তিল ধরনের ঠাই নেই। এমন অবস্থায়ও হয়েছে উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতালের ,যেখানে ৪ তলা ভবনে সম্পূর্ণটাই দু-একজন সংকটাপন্ন রুগী ব্যাতীত সম্পূর্নটাই ডায়রিয়া রুগীতে পরিপূর্ন।

জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে,গত ২২ মার্চ থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত ১ মাসেপটুয়াখালী জেলায় ৪৩০৯ জন ডায়রিয়ার অক্রান্ত হয়ে জেলা সদরের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সহ সহ উপজেলা পর্যায়ের ৮ টি হাসপাতালে ভর্তি হয় ।গত ৭ দিনে পটুয়াখালীতে সদরের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সহ সহ উপজেলা পর্যায়ের ৮ টি হাসপাতালে ভর্তি হয় ২১৭৩ জন ।সবচেয়ে বেশী রুগী ভর্তি হচ্ছে পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে , গত ১ মাসে সেখানে ভর্তিকৃত রুগীর সংখ্যা ১৫৬৮ জন এর মধ্যে গত ১ সপ্তাহে ৬৩৭ জন পাশাপশি উপজেলা পর্যায়ে সবচেয়ে বেশী আক্রান্ত মির্জাগঞ্জ উপজেলায় গত ১ মাসে হাসপাতালে ভর্তি ৭৪০ জন এবং এর মধ্যে গত ১সপ্তাহেই ভর্তি ৫১৬ জন।

মির্জাগঞ্জ উপজেলার গত শনিবার ১৭ এপ্রিল সকালে মাধবখালী এলাকায় তৈয়ব আলী সিকদার (৭৫) নামে এক বৃদ্ধ ডায়রিয়ায়া আক্রান্ত হন, বিকেলে তিনি বাড়িতেই মারা যায় । এছাড়াও ১নং মাধবখালি ইউনিয়নের সমাদ্দারকাঠি গ্রামের রাকিব খন্দকারের মেয়ে কাঁঠালতলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এস এস সি পরীক্ষার্থী মোসাঃ শাহারা সানফুল (১৫) গত ১৮ এপ্রিল রোববার সকালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে দুপুর দু’টার দিকে হাসপাতালে নেয়ার আগেই বাড়িতেই মারা যায় বলে জানান ১নং মাধবখালী ইউপি চেয়ারম্যান মনির হোসেন তালুকদার। চেয়ারম্যান মনির হোসেন তালুকদার জানান ,তার এলাকায় দুই শতাধিক এর বেশি লোক ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, বর্তমানে করোনার চেয়ে ডায়রিয়া ব্যাপক আকারে মহামারি রুপ ধারণ করেছে। ঘরে ঘরে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এবিষয়ে মির্জাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: দিলরুবা ইয়াসমিন লিজা বলেন, মির্জাগঞ্জে ডায়রিয়া ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে,ে গত ২৪ ঘন্টায় ৮৮ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তিনি দুই জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ারর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন ,তারা বাড়িতে মারা গিয়েছেন। বর্তমানে কাঠালতলীতে একটি ২০ শয্যার হাসপাতাল থাকলেও সেখানে আউটডোরে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়, সেখানে ইনডোরে চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু নেই, ওই হাসপাতালের প্রয়োজনীয় জনবলের অভাব রয়েছে ,একজন মাত্র চিকিৎসক রয়েছেন। জনবলের এ বিষয়ে আমরা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। হাসপাতালে কলেরা স্যালাইনের অপ্রতুলতার কথা উল্লেখ করে তিনি জানান,আমরা বেসরকারী ভাবে ডোনেশেন পাচ্ছি ,গতকাল জেলা প্রশাসকের সাথে এসে মেজর (অব:)ডা: ওহাব মিনার দিয়েছেন ১ হাজার পিস,আজকে একটি বেসরকারী সংস্থা থেকে পেয়েছি ১ হাজার এছাড়া গলাচিপা ও বাউফল উপজেলা হাসপাতাল থেকে ১ হাজার পিস পরবর্তীতে ফেরত দেয়ার শর্তে আনা হয়েছে।

গত শনিবার ১৭ এপ্রিল সকাল ৯-৩৫ মিনিটে দুমকী উপজেলার জলিশা গ্রামের আ: হক মুনশী(৮২) মারাতœক ডায়রিয়া নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন, পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান ।উপজেলা স্বাস্থ কর্মকর্তা ডা: মীর শাহিদুল হাসান জানান,তিনি ডায়রিয়ার সাথে অন্যান্য শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত ছিলেন।
জেলা সিভিল সার্জন অফিসের সূত্র মতে,১৮ এপ্রিল বাউফলের ভরিপাশার খাদিজা বেগম (২৭) ডায়রিয়া নিয়ে হাসপাতালে ভর্তির সাথেই সাথেই মারা যান, এছাড়া ১৯ এপ্রিল বাউফলে পিয়ারা বেগম (৬০) ডায়রিয়া নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ হাসাপতালের সহকারী পরিচালক ডা: লোকমান হাকিম জানান,হাসপাতালে এখনো ১৫০ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি আছেন।স্যালাইনের সংকট ছিল ,গত ২ দিন আগে ৬ হাজার পিস স্যলাইন সরকারী অর্থায়নে ঢাকা থেকে কেন্ হয়েছে ,আরো ৭ হাজারের অর্ডার করা হয়েছে।
এদিকে বৈশ্বিক মহামারী করোনায় পটুয়াখালী জেলায় গত ২২ মার্চ থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত জেলা সিভিল সার্জন অফিসের সূত্র মতে মোট অক্রান্তের সংখ্যা ২৯০ জন এবং মৃতের সংখ্যা ৭জন।

এ দিকে পটুয়াখালী জেলার সকল নদ-নদী খাল ও পুকুরের পানিতে অতিমাত্রার ললবনাক্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে,যা আগে কখন ও দেখা যায়নি। এবারে অনাবৃষ্টি,খরার কারনে নদ-নদীর পানি হয়ে গিয়েছে দুষিত । এমনিতে গ্রাম গঞ্জে টিউবওয়েলের সংখ্যা অনেক কম। যে পরিমান টিউবওয়েল রয়েছে পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়ায় তার অধিকাংশই এখন অকেজো হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে সাধারন মানুষ নদী,নালা,খাল,পুকুরের দুষিত পানি ব্যবহার করছে যার ফলে ডায়রিয়া সহ পানি বাহিত রোগের সংখ্যা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এ বিষয়ে পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন ডা: মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জানান,তিনি আজকে ৫ হাজার ব্যাগ স্যালাইন ৪ টি উপজেলায় দিয়েছেন এর মধ্যে ৫ শ ব্যাগ এসএসসি ১৯৯০ এর সংগঠন ”মানবিক -৯০”ব্যাচের পক্ষ থেকে প্রাপ্ত।তিনি আরোও জানান, ইতোমধ্যে ডায়রিয়া আক্রান্ত উপজেলাগুলিতে ভিজিটি করেছেন,পানির অতিমাত্রার লবনাক্ততা সর্ম্পকে তিনি আই,সি,ডি,ডিআরবিকে জানিয়েছেন।জেলা ওষুধ প্রশাসনের সঠিক নজরদারীর অভাবে বাজারে ডায়রিয়া স্যালাইনের কৃত্তিম সংকটের চেষ্টা চালাচ্ছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন