বিশেষ সংবাদদাতা : শনিবার রাত ১১টায় বাস ছাড়ার কথা ছিল গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে। যাত্রী বেসরকারি কোম্পানীর কর্মকর্তা ফারুক যাবেন ঠাকুরগাঁও। বিকালে তিনি ঠাকুরগাঁওয়ে খবর নিয়ে জানতে পারেন তার বাসটি তখনও ঠাকুরগাঁও পৌঁছেনি।
এরপর তিনি বাস কাউন্টারে ফোন করে জানতে চান রাত ১১টার বাস কখন ছাড়বে। কাউন্টার থেকে তাকে জানানো হয় কাল রোববার সকাল ১১টার পর যে কোনো সময় বাসটি ঢাকা থেকে ছাড়তে পারে। রাজধানীর গাবতলী টার্মিনালে এরকম বহু যাত্রী বাসের অপেক্ষায় ১২ ঘণ্টা থেকে ২৪ ঘণ্টাও অপেক্ষমাণ আছেন। বেশিরভাগ বাসই ১৪ ঘণ্টার পর ছাড়ছে। দূরের যাত্রার বাসগুলো ফিরছে ১৮/২০ ঘণ্টা দেরি করে। এতে করে ঈদ যাত্রায় সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। অনেকের মতে, এবার ঈদ যাত্রার ভোগান্তি অতীতের সকল রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। প্রধান প্রধান মহাসড়কগুলোতে গত ৪/৫ দিন ধরেই যানজট লেগে আছে।
এতে করে সায়েদাবাদ, গাবতলী, মহাখালী টার্মিনালে অপেক্ষা করতে করতে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অনেক যাত্রী পরিবার-পরিজন নিয়ে ফিরে এসেছেন। এবারের ঈদের আশা ছেড়ে দিয়েছেন তারা। মহাখালী টার্মিনাল থেকে ফিরে সামিউল নামে একজন যাত্রী আফসোস করে বলেন, আগেই বাড়িতে কোরবানির টাকা পাঠিয়েছিলাম। বাবা-মার সাথে ঈদ করবো বলে বাচ্চাদের নিয়ে রওনা করেছিলাম। কিন্তু টার্মিনালে ১১ ঘণ্টা অপেক্ষার পরও বাস আসেনি। কখন আসবে তাও কেউ বলতে পারেনি। সপরিবারে এভাবে তো আর যাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে ফিরে এসেছি। বাচ্চাদের মন খারাপ। হাতে বাড়তি টাকাও নেই যে আরেকটি কোরবানি দিবো। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানজটে আটকে ছিল শত শত যানবাহন। তবে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যানজট কম ছিল। সায়েদাবাদ বাসটার্মিনালের মালিক সমিতির এক নেতা জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কাঁচপুর থেকে যানজট শুরু হয়েছে। সেখান থেকে একেবারে গোমতী সেতুর ওপাড় পর্যন্ত থেমে থেমে যাচ্ছে যানবাহন। ঢাকায় আসার পথেও একই অবস্থা। তবে গত দু’দিনের তুলনায় গতকাল শনিবার যানবাহনের চাপ কম থাকায় যানজটে বেশিক্ষণ আটকে থাকেনি যানবাহনগুলো। অন্যদিকে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের যানজটের খুব একটা উন্নতি হয়নি। বিশেষ করে গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে একেবারে মির্জাপুর পর্যন্ত যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এতে করে যানবাহন ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া যানবাহনগুলো যেমন আটকা পড়ছে, তেমনি ঢাকার বাইরে থেকে আসা যানবাহনগুলোও আসতে পারছে না। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের অবস্থা আরও শোচনীয়। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটের অচলাবস্থার কারণে কয়েক হাজার যানবাহন আটকে ছিল নদীর উভয়পাড়ে। হাজার হাজার মানুষের ভোগান্তির সীমা ছিল না। তারপরেও নিরুপায় মানুষ রওনা করেছে। কেউবা অপেক্ষা করছে। এদিকে, সদরঘাটে লঞ্চের যাত্রীদের ভিড় অনেকটাই কমে এসেছে বলে বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে। গতকাল বিকালে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চগুলোতে ভিড় থাকলেও তা আগের দিনের তুলনায় কম ছিল। অন্যদিকে, ট্রেনে ভিড় কমেনি। গতকাল কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া সবগুলো ট্রেনেই উপচে পড়া ভিড় ছিল। দাঁড়ানো টিকিট নিয়ে মানুষ দূরের পথে যাত্রা করেছে। সবগুলো ট্রেনের ছাদে শত শত যাত্রী উঠেছে। পুলিশ চেষ্টা করেও ট্রেনের ছাদের যাত্রীদেরকে ঠেকাতে পারেনি। অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে ট্রেনগুলো নির্ধারিত গতিতে চলতে পারছে না বলে জানান রেলওয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ধীর গতিতে চলতে গিয়ে ট্রেনগুলো দুই থেকে দেড় ঘণ্টা করে বিলম্বে গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছে। তারপরেও গতকাল পর্যন্ত ট্রেনের সিডিউলের উল্লেখযোগ্য কোনো বিপর্যয় ঘটেনি।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে তীব্র যানজট অব্যাহত যাত্রী দুর্ভোগ চরমে
মির্জাপুর ও সখিপুর উপজেলা সংবাদদাতা : ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের চন্দ্রা মোড় থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব পাড় পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন অংশে তীব্র যানজট অব্যাহত রয়েছে। তীব্র এই যানজটে ঈদে ঘরমুখো হাজারো যাত্রীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে গরু বোঝাই ট্রাক ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকা পড়ায় অনেক গরু অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়ার খবরও পাওয়া যাচ্ছে।
বুধবার ভোর থেকে শুরু হওয়া এই যানজট শনিবার সকাল ১১টায় এ রিপোর্ট পাঠানোর সময় পর্যন্ত তা থেমে থেমে চলছে। আধা ঘণ্টা সময়ের রাস্তা পাড়ি দিতে ৩-৫ ঘণ্টা সময় লাগছে বলে জানা গেছে।
অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ, পুরাতন ও দুর্বল যানবাহনগুলো রাস্তার ওপর বিকল হয়ে পড়া, ওভারটেকিং ও দুর্ঘটনার কারণে এই যানজট সৃষ্টি হচ্ছে বলে মির্জাপুর থানা ও হাইওয়ে পুলিশ সূত্র জানিয়েছেন।
শনিবার সকালে মহাসড়কের গোড়াই, মির্জাপুর বাইপাস, কুর্নী, শুভুল্যা, পাকুল্যা ও জামুর্কীসহ বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখা গেছে, গরুবোঝাই ট্রাক, বাসের ভেতরে ও ছাদে যাত্রী নিয়ে শত শত যানবাহন মহাসড়কের দুই দিকেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে।
মহাসড়কের মির্জাপুর বাইপাস এলাকায় যানজটে আটকা পড়া বাসযাত্রী শাহ আলম জানান, শুক্রবার মধ্যরাতে ঢাকা থেকে রওনা হয়ে শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় তিনি মির্জাপুর পৌঁছেন।
দিনাজপুর থেকে ট্রাকে গরু নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন গরু বেপারি রহম আলী। দীর্ঘ যানজটে পড়ে ইতোমধ্যে তার দুইটি গরু মারা গেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মির্জাপুরের গোড়াই ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও দেওহাটা গরুর হাটের ইজারাদার কামারুজ্জামান বলেন, শুক্রবার দেওহাটা থেকে মোটরসাইকেলে পেট্রল ভরার জন্য ধেরুয়া যাওয়ার পথে তিনি মহাসড়কের সাইটের বিভিন্ন অংশে তিনটি মরা গরু পড়ে থাকতে দেখেছেন।
গরুবোঝাই ট্রাক যানজটে আটকা পড়ায় অসুস্থ হয়ে ওই গরুগুলোর মৃত্যু হয়েছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর থানার ওসি মো: মাইন উদ্দিন ও হাইওয়ে থানার ওসি খলিলুর রহমান বলেন, মহাসড়কে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ, পুরাতন ও দুর্বল যানবাহনগুলো রাস্তার ওপর নষ্ট হয়ে পড়া, ওভারটেকিং ও দুর্ঘটনার কারণে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে এই যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। তবে যানবাহন সচল রাখতে প্রশাসন সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে তারা জানান।
ঢাকা-টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কে তীব্র যানজট
ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে তীব্র যানজটের কারণে ঈদে ঘরমুখো মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। উপায়ন্তর না দেখে যানবাহনের চালকরা বাধ্য হয়ে বিকল্প সড়ক ব্যবহার করছেন। ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর, জামালপুর ও উত্তরবঙ্গের যানবাহন চালকরা যানজটের কারণে ভালুকা উপজেলার সিডস্টোর থেকে সখিপুর হয়ে হামিদপুর দিয়ে এলেঙ্গা গিয়ে উঠছে। আর ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর, জামালপুরগামী যানবাহনের চালকরা ভালুকা উপজেলার সিডস্টোর দিয়ে সখিপুর হয়ে সাগরদীঘি, ফুলবাড়িয়া, গাড়োবাজার, মধুপুর হয়ে বিকল্প সড়কে চলে যাচ্ছে। এছাড়া উত্তরবঙ্গের যানবাহনের চালকরা ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কের মির্জাপুর, গোড়াই, হাঁটুভাঙ্গা দিয়ে সখিপুর হয়ে কালিহাতি দিয়ে এলেঙ্গা চলে যাচ্ছে। টাঙ্গাইলের গোপালপুর, ভূয়াপুর, মধুপুর, ধনবাড়িগামী যানবাহনের চালকরা যানজট এড়াতে গোড়াই, হাঁটুভাঙ্গা দিয়ে সখিপুর হয়ে ধলাপাড়া-ঘাটাইল দিয়ে চলে যাচ্ছে। তবে যানবাহনের তুলনায় সড়ক সরু ও খানাখন্দে ভরপুর থাকায় যানবাহন নির্বিঘেœ চলাচল করতে পারছে না। চালকরা বিকল্প সড়ক ব্যবহার করলেও ঈদে ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ কমছে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন