শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কাটা শেষ ৪০ ভাগ ধান

হাওরের বোরোর হালচাল শ্রমিক সঙ্কট নেই : কৃষিমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ এপ্রিল, ২০২১, ১২:১০ এএম

হাওরাঞ্চলে প্রধান ফসল বোরো ধান কাটা পুরোদমে চলছে। কৃষকরা পাকা ধান গোলায় তুলতে এখন ব্যস্ত। নাওয়া-খাওয়া ভুলে নারী-পুরুষ, ছেলে বুড়ো সবাই ধান কাটছে না হয় মাড়াইয়ের কাজ করছে। এই একটি মাত্র ফসলই যে তাদের সারা বছরের খোরাক। স্বপ্নের এই ফসল যে দ্রুত ঘরে তুলতে হবে। তা হলে যে কোনো সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগে সব তছনছ হয়ে যেতে পারে। হিটশকে অনেক জমির ধান পুড়ে গেছে। অবশিষ্ট যা আছে তাও ঠিক মতো ঘরে তুলতে পারবে কি না তা নিয়ে চিন্তার শেষ নেই। যে কোনো সময় কালবৈশাখী ঝড়ের সাথে শিলাবৃষ্টি বা ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে ক্ষেতের ফসল তছনছ করে দিতে পারে। এ ছাড়া লকডাউনের কারণে শ্রমিক সঙ্কটও কৃষকদের চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছিল। তবে প্রধানমন্ত্রী কৃষকদের ধান কাটায় দলের নেতাকর্মীদের সহযোগিতা করার নির্দেশ প্রদানের পর সে সঙ্কট কেটে গেছে। হাওরের ধান দ্রুত কাটার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে কৃষিশ্রমিকের ব্যবস্থা করা হয়েছে। গত বছরের মতো এবারও হাওরাঞ্চলের একমাত্র ফসল বোরো ধান কাটতে কৃষিশ্রমিকের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরাসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ সহায়তা করছেন। ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও কৃষকলীগের নেতাকর্মীরাও কৃষকদের ধান কেটে বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন। এ ছাড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফরের দেয়া কম্বাইন হারভেস্টার ও রিপার মেশিনেও ধান কাটা হচ্ছে।

গত বছরের মতো এবারও কৃষকের ধান কেটে গোলায় তুলে দেয়ার কর্মসূচি শুরু করেছে ছাত্রলীগ- কৃষক লীগসহ অন্যান্য শ্রেণিপেশার মানুষ। কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে এক কৃষকের ধান কেটে দেয়ার মাধ্যমে গত ২১ এপ্রিল এ কর্মসূচির উদ্বোধন করে কৃষক লীগ। সংগঠনের সভাপতি সমীর চন্দ ও সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতির নেতৃত্বে উপজেলার সুতারপাড়া ইউনিয়নের গেরাজুরের হাওরে কৃষক জালাল মিয়ার ক্ষেতের ধান কেটে দেন কৃষক নেতারা।

এ সময় কৃষক লীগ সভাপতি সমীর চন্দ বলেন, বৈশ্বিক মহামারি করোনার শুরুতে কৃষক যখন পাকা ধান নিয়ে বিপদে পড়েছিল, কৃষক লীগের নেতাকর্মীরা তখন ধান কেটে ঝাড়াই মাড়াই করে গোলায় তুলে দেয়। গতবারের মতো এবারও বাংলাদেশ কৃষক লীগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে সারা দেশে কৃষকের ধান কেটে ঝাড়াই মাড়াই করে গোলায় তুলে দিবে।

কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গতবছর হাওরের ধান কাটার জন্য যেভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল, এ বছরও সেভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন জেলা থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রমিকদেরকে নিয়ে আসা হয়েছে। এ মুহ‚র্তে হাওরে ধান কাটার জন্য শ্রমিকের কোনো সঙ্কট নেই। পর্যাপ্ত শ্রমিক রয়েছে। একইসঙ্গে কম্বাইন হারভেস্টার, রিপারসহ পর্যাপ্ত ধান কাটার যন্ত্র হাওরে এবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গতকাল অনলাইনে বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের (এডিপি) বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, এ বছর হাওরভুক্ত ৭টি জেলা- কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ ও ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় বোরো আবাদ হয়েছে ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৫৩৪ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে শুধু হাওরে আবাদ হয়েছে ৪ লাখ ৫১ হাজার ৭৭০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত হাওরভুক্ত ৭টি জেলায় ২ লাখ ৩১ হাজার ৩৬৫ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে, যা শতকরা হিসাবে প্রায় ২৫ ভাগ। অন্যদিকে শুধু হাওরের ১ লাখ ৮০ হাজার ৭২৯ হেক্টর জমির ধান কর্তন হয়েছে, যা শতকরা হিসাবে প্রায় ৪০ ভাগ।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এ বছর ধান-চালের উৎপাদন বাড়াতে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। আমাদের চেষ্টার কোনো কমতি ছিল না। বেশি জমি চাষের আওতায় আনা, উন্নত জাতের ও হাইব্রিড জাতের ধান চাষে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বীজ, সারসহ নানা প্রণোদনা কৃষকদেরকে প্রদান করা হয়েছে। হাইব্রিড ধানের বীজ সহায়তা বাবদ ৭৬ কোটি টাকার প্রণোদনা কৃষকদেরকে দেয়া হয়েছে। এসব উদ্যোগের ফলে গত বছরের তুলনায় এবছর ১ লাখ ২০ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। একইসঙ্গে গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩ লাখ হেক্টরেরও বেশি জমিতে হাইব্রিডের আবাদ বেড়েছে। আশা করছি- গত বছরের তুলনায় এ বছর বোরোতে ৯ থেকে ১০ লাখ টন বেশি উৎপাদন হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন