শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

একদিনে বিশ্বের রেকর্ড করোনা শনাক্ত ভারতে

তিনটি আলাদা রূপ মিলে করোনার নতুন স্ট্রেন তৈরি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০৮ এএম

করোনা আক্রান্তের নিরিখে গতকাল বিশ্বের সব কোভিড রেকর্ড ভাঙল ভারত। দেশটিতে দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা এবার ৩ লাখ ছাড়াল। এদিকে, তিনটি আলাদা রূপ মিলে তৈরি করোনার নতুন স্ট্রেনের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে ভারতে। এটি করোনার যে কোন স্ট্রেনের চেয়ে তিনগুণ শক্তিশালী বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ভারতে করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ বিধ্বংসী রূপ নিয়েছে। তবে সংক্রমণ এখনও শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছয়নি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। মহামারির নতুন এক গাণিতিক মডেলে দেখা গেছে, ভারতে ১১ থেকে ১৫ মে’র মধ্যে নতুন করে আরও ৩০ থেকে ৩৫ লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। এর মানে হচ্ছে, আগামী আরও প্রায় তিন সপ্তাহ সংক্রমণ বাড়তে থাকবে এবং তারপরে ধীরে ধীরে কমে আসতে পারে।

ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ১৪ হাজার ৮৩৫ জন। মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ১০৪ জনের। এক দিনে এত করোনা রোগী আগে কখনো কোন দেশেই শনাক্ত হয়নি। বিশ্বের কোনো দেশে এক দিনে সর্বোচ্চসংখ্যক করোনা রোগী শনাক্তের রেকর্ডটি এত দিন ছিল যুক্তরাষ্ট্রের দখলে। দেশটিতে গত জানুয়ারিতে এক দিনে সর্বোচ্চ ২ লাখ ৯৭ হাজার ৪৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে করোনায় মৃত্যুর ক্ষেত্রেও রেকর্ড হয়েছে। দেশটিতে এক দিনে রেকর্ডসংখ্যক ২ হাজার ১০৪ জন করোনায় মারা গেছেন। আগের দিন রেকর্ডসংখ্যক ২ হাজার ২৩ জন করোনায় মারা যান। এর আগে ভারতে গত বছরের ১৬ জুন এক দিনে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ভারত সরকারের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৫৯ লাখ ৩০ হাজার ৯৬৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত ভারতে করোনায় মারা গেছেন ১ লাখ ৮৪ হাজার ৬৫৭ জন।

বিশ্বে করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পরেই রয়েছে ভারত। ভারতের পর রয়েছে ব্রাজিল। সংক্রমণের দিক দিয়ে সম্প্রতি ব্রাজিলকে টপকে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে আসে ভারত। ১৫ এপ্রিল থেকে ভারতে প্রতিদিন দুই লাখের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হয়ে আসছিল। কিন্তু গত ২৪ ঘণ্টায় প্রথমবারের মতো এক দিনে নতুন করোনা রোগী শনাক্তের ক্ষেত্রে তিন লাখের ‘মাইলফলক’ অতিক্রম করল ভারত। গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে সবচেয়ে বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে মহারাষ্ট্র, উত্তর প্রদেশ, দিল্লি, কর্ণাটক ও কেরালায়। মহারাষ্ট্রে শনাক্ত হয়েছে ৬৭ হাজার ৪৬৮ জন। উত্তর প্রদেশে শনাক্ত হয়েছে ৩৩ হাজার ১০৬ জন। দিল্লিতে ২৪ হাজার ৬৩৮ জন। কর্ণাটকে ২৩ হাজার ৫৫৮ জন। আর কেরালায় ২২ হাজার ৪১৪ জন।

এদিকে, করোনাভাইরাসের ‘ডাবল মিউট্যান্ট’ আতঙ্ক কাটতে না কাটতেই এ বার ভারতে থাবা বসাল ‘ট্রিপল মিউট্যান্ট ভ্যারিয়্যান্ট’। মনে করা হচ্ছে ইতিমধ্যেই দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্যে তা ছড়িয়ে পড়েছে। যার মধ্যে অন্যতম পশ্চিমবঙ্গ। মহারাষ্ট্র এবং দিল্লিতেও এই ট্রিপল মিউট্যান্টের সংক্রমণ ছড়িয়েছে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। তারা জানাচ্ছেন, কোভিড-১৯ ভাইরাসের তিনটি আলাদা স্ট্রেন মিলে তৈরি ভাইরাসের এই নয়া ভ্যারিয়্যান্টের সংক্রামক ক্ষমতাও প্রায় তিন গুণ। এই নতুন স্ট্রেনের দাপটেই বিশ্ব জুড়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ, মত বিশেষজ্ঞদের। সংক্রামক শক্তি অনেক বেশি তো বটেই, শারীরিক অবস্থার অবনতিও খুব দ্রæত হচ্ছে এই নয়া স্ট্রেনে আক্রান্তদের। বিশেষজ্ঞদের সতর্কবাণী, ঠিক সময় লাগাম পরানো না গেলে ‘এ বার সংক্রমণ সুনামির আকার ধারণ করতে পারে।’

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, আপাতত এর বিরুদ্ধে একের পর এক ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা পরীক্ষা করে যাওয়া ছাড়া কোনও পথ নেই। তবে সবার আগে প্রয়োজন এর চরিত্র বিশ্লেষণ। যা যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে করার পরামর্শই দিচ্ছেন তারা। প্রয়োজন নিয়মিত জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের। তবে ভারতে যেখানে মোট আক্রান্তের মাত্র ১ শতাংশের উপর এই জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হচ্ছে সেখানে এক ধাক্কায় সেই হার বাড়িয়ে তোলাই বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু এ বিষয়ে গড়িমসির কোনও জায়গা দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, ‘ডাবল মিউট্যান্ট’ স্ট্রেন ঠিক সময়ে ধরা না-যাওয়ার কারণেই হয়তো অগোচরে এতটা ছড়িয়ে পড়েছে এই ‘ট্রিপল মিউট্যান্ট’। ভাইরাস যত ছড়ায় সেটির মিউটেশনের হারও তত বৃদ্ধি পায়। এই নয়া স্ট্রেনটি শিশুদেরও সংক্রমিত করছে। তবে এখনও পর্যন্ত এই নয়া ভ্যারিয়্যান্ট নিয়ে বিশেষ কোনও তথ্য নেই বিজ্ঞানীদের কাছে। যে কারণে আপাতত ‘ভ্যারিয়্যান্ট অব কনসার্ন’-এর বদলে ‘ভ্যারিয়্যান্ট অব ইন্টারেস্ট’-এর তালিকাতেই রাখা হয়েছে এটিকে।

প্রশ্ন উঠছে, এখনও পর্যন্ত যে ভ্যাকসিনগুলি আমাদের হাতে রয়েছে তা দিয়ে কি এই নতুন মিউট্যান্টকে রোখা সম্ভব? যে তিনটি পৃথক স্ট্রেনের সমন্বয়ে এই নয়া ভ্যারিয়্যান্টের জন্ম তার মধ্যে দু’টি শরীরে স্বাভাবিক ভাবে তৈরি হওয়া কোভিড প্রতিরোধ ক্ষমতাকে হার মানাতে সক্ষম। ফলে অ্যান্টিবডির মাধ্যমে তা রোধ করা যাবে না। কাজেই উপলব্ধ ভ্যাকসিনে তা রোধ সম্ভব কি না, তা নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন, মত বিশেষজ্ঞদের। সূত্র : টিওআই, এনডিটিভি।

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন