মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ব্যাংকগুলোর বিশেষ তহবিলের বিষয়ে জানতে চেয়েছে বিএসইসি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০০ এএম

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিলের বিষয়ে জানতে ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। চিঠিতে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে ব্যাংকগুলোকে ওই বিশেষ ফান্ড গঠন ও বিনিয়োগ সম্পর্কে জানাতে বলা হয়েছে। স¤প্রতি ব্যাংকগুলোকে পাঠানো এ সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়েছে, শেয়ারবাজারে তারল্য সমাধানের লক্ষ্যে প্রত্যেক তফসিলি ব্যাংককে ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের জন্য ২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সার্কুলার অনুযায়ী, তফসিলি ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য ২০০ কোটি টাকা করে বিশেষ তহবিল গঠন করেছে। ইতোমধ্যে ব্যাংকগুলো ওই বিশেষ তহবিল থেকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ শুরু করেছে। তবে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগের তথ্য প্রতিনিয়ত সংরক্ষণ করা হয়নি। ফলে শেয়ারবাজারে ব্যাংকগুলোর কী পরিমাণ বিনিয়োগ রয়েছে, সেই তথ্য বিএসইসির কাছে নেই।

এ তথ্য তুলে ধরে চিঠিতে সাত কার্যদিবসের মধ্যে নির্ধারিত ছকে ব্যাংকগুলোকে গঠিত বিশেষ তহবিল ও তার বিনিয়োগের তথ্য জানাতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে বিশেষ মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের তথ্যও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে চিঠিতে। দেশে মোট ৬১টি তফসিলি ব্যাংক রয়েছে। এর মধ্যে ৩১টি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত। আর বাকি ৩০টি ব্যাংক এখনও তালিকাভুক্ত হয়নি। বিএসইসি তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত সব ব্যাংকের কাছে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের তথ্য চেয়েছে।
ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে (সিইও) পাঠানো এ সংক্রান্ত চিঠির বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের অবহিত করা হয়েছে।

এর আগে গত বছরের জুনেও শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিলের তথ্য জানতে চেয়েছিল বিএসইসি। তবে সে সময় শুধুমাত্র তালিকাভুক্ত ৩০ ব্যাংকের কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছিল।
সে সময়ের চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক শেয়ারবাজারে তারল্য সমাধানে তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। এ লক্ষ্যে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক প্রত্যেকটি ব্যাংকের জন্য ২০০ কোটি টাকার বিশেষ ফান্ড গঠনের জন্য সার্কুলার জারি করেছে।

এ বিষয়ে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ এর ধারা ১১ (২) অনুযায়ী, আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে ফান্ড গঠন ও বিনিয়োগের তথ্য জানানোর জন্য বিএসইসি চিঠিতে অনুরোধ করে। তারল্য সংকট ও আস্থাহীনতার কারণে শেয়ারবাজারে ধারাবাহিক দরপতন দেখা দিলে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলোর কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে ১০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল চায়।
এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতামত জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতিবাচক সাড়া দেয়। অর্থ মন্ত্রণালয় শেয়ারবাজারে তারল্য সরবরাহের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেয়। এরপর গত বছরের ফেব্রæয়ারি মাসে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে বিশেষ তহবিল গঠন এবং বিনিয়োগের নীতিমালার বিষয়ে সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী ২০২৫ সালের ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত যেকোনো তফসিলি ব্যাংক রেপোর মাধ্যমে এই সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে।

তহবিল গঠনের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়, আর্থিক খাতের প্রধান মধ্যস্থতাকারী হিসেবে পুঁজিবাজারে তফসিলি ব্যাংকসমূহের নির্দিষ্ট পরিমাণ বিনিয়োগের আইন রয়েছে। দেশের পুঁজিবাজার ও মুদ্রা বাজারের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনকারী হিসেবে তফসিলি ব্যাংকগুলোর ভ‚মিকা অনস্বীকার্য। পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে ক্রমাগত তারল্য প্রবাহ বজায় রাখার জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের পুঁজিবাজার সংক্রান্ত সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান (মার্চেন্ট ব্যাংক ও ডিলার লাইসেন্সধারী ব্রোকারেজ হাউজ) এবং অন্যান্য মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজকে শুধুমাত্র পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে বিশেষ ব্যবস্থায় এ তহবিল সরবরাহ করা হবে।

তফসিলি ব্যাংকগুলো চাইলে নিজস্ব উৎস থেকে তহবিল যোগান দিতে পারে। এছাড়া ধারণকৃত ট্রেজারি বিল বা বন্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহ করতে পারবে।
এছাড়াও প্রথমে নিজ উৎস থেকে তহবিল গঠন করে পরবর্তীতে ট্রেজারি বিল বা বন্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সমপরিমাণ অর্থ নেয়া যাবে। এই তহবিল হতে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ, ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এর ২৬ (ক) ধারায় বর্ণিত বিনিয়োগ সীমা অতিরিক্ত হিসেবে বিবেচিত হবে।

ব্যাংকসমূহের অতিরিক্ত তারল্য থেকে ট্রেজারি বন্ড বা বিলের মাধ্যমে এই সুবিধা গ্রহণ করতে হবে। ট্রেজারি বন্ড বা বিলের রেপো মূল্যের ৫ শতাংশ মার্জিন হিসেবে রেখে তারল্য সুবিধা দেয়া হবে। নগদ রেপোর অর্থ পরিশোধে ব্যর্থতার ক্ষেত্রে মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখে সংশ্লিষ্ট সিকিউরিটিজের বাজার মূল্য আদায়যোগ্য অর্থ অপেক্ষা কম হলে তা ইতোপূর্বে গৃহীত মার্জিন থেকে সমন্বয় করা হবে। সমন্বয়ের জন্য অতিরিক্ত অর্থ প্রয়োজন হলে ব্যাংক তা দিতে বাধ্য থাকবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের চাহিদা অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৯০ দিন মেয়াদী রেপো প্রদান করা হবে। রেপোতে বর্ণিত সময়সীমা ২০২৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে পুনঃনবায়নের সুবিধা থাকবে। তবে, এক্ষেত্রে তহবিল ব্যবহারের সক্ষমতার বিষয়টি বিবেচ্য হবে। তারল্য সুবিধা পেতে ব্যাংকসমূহকে যেসব শর্ত পরিপালন করতে হবে সেগুলো হলো- এই তারল্য সুবিধা পেতে অর্থের কাঙ্খিত পরিমাণ উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব সাইট সুপারভিশনের মহাব্যবস্থাপক বরাবর আবেদন করতে হবে। মেয়াদ উত্তীর্ণ রেপো নবায়নের প্রয়োজন হলে মেয়াদ শেষ হওয়ার পাঁচ দিন আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের একই বিভাগে আবেদন করতে হবে। একই সঙ্গে আবেদনের সময় সম্পাদিত বিনিয়োগের প্রমাণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাব ও বিও হিসাবের বিবরণ দাখিল করতে হবে। এছাড়া এসব বিষয়ে বাংলাদেশে প্রচলিত সংশ্লিষ্ট আইন এবং সময়ে সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জারিকৃত অন্যান্য নির্দেশনা পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন