শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

আমাদের স্বার্থেই চীনের সঙ্গে সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৯ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০১ এএম

চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেঙ্গহি একদিনের সফরে মঙ্গলবার ঢাকায় ব্যস্ততম সময় কাটিয়ে বেইজিং ফিরে গেছেন। কয়েক ঘণ্টার সফরে ঢাকা এসে তিনি প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ এবং সেনা প্রধান আজিজ আহমদের সাথে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছেন। এমন এক সময় চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী বাংলাদেশে আসেন, যখন করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় বাংলাদেশ হিমশিম খাচ্ছে এবং ভারতের অসহযোগিতা ও চুক্তিভঙ্গের কারণে বাংলাদেশের করোনা ভ্যাকসিন কার্যক্রম থমকে দাঁড়িয়েছে। এ সময় চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বাংলাদেশে উড়ে আসা এবং করোনাভাইরাস মোকাবেলা, টিকাদান কর্মসূচি এবং মিয়ানমারের সাথে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট সমাধানে সহযোগিতার আশ্বাস নতুন করে আশাবাদের সঞ্চার করেছে। গত বছর বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুতেই চীন বাংলাদেশের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছিল। ইউরো-আমেরিকা ও ভারতের মতো দেশ যখন নিজেদের সংকট মোকাবেলায় নাস্তানাবুদ অবস্থা, চীন তখন নিজেদের সমস্যা মোকাবেলার পাশাপাশি বন্ধুরাষ্ট্রের প্রতিও সহায়তার হাত প্রসারিত করেছিল। করোনা মোকাবেলায় সহায়ক সামগ্রী পাঠানোর পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ টিম পাঠিয়ে বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্ব, সহযোগিতা ও সদিচ্ছার প্রমাণ রেখেছিল চীন সরকার। করোনা মোকাবেলায় চীনের সাফল্য অন্য সব দেশের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে। ভ্যাকসিন উদ্ভাবন, ট্রায়াল এবং বাণিজ্যিক উৎপাদনেও চীনের সাফল্য অগ্রগণ্য। চীনের সিনোভ্যাক ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের অনুমোদন এবং ভ্যাকসিন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার তালিকায় যুক্ত হয়েও ভারতের ভ্যাকসিন কূটনীতির খপ্পরে পড়ে প্রথমদিকে ভ্যাকসিন পাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করে বাংলাদেশ।

গত বছরের নভেম্বরে চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের কথা থাকলেও পরিবর্তিত বাস্তবতার কারণেই সম্ভবত সফরটি বাতিল হয়ে যায়। এখন এমন এক সময়ে তিনি বাংলাদেশে এলেন, যখন ভারতে প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে, ঘণ্টায় হাজারো মানুষের মৃত্যুতে সামগ্রিক পরিস্থিতি বেসামাল হয়ে পড়েছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ বাংলাদেশে আগের চেয়ে অনেক বেশি সংক্রমণ ও ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে হাজির হয়েছে। চীনসহ বিকল্প অন্য সব উৎসগুলোকে পরিহার করে শুধুমাত্র ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সাথে টিকার জন্য চুক্তিবদ্ধ হওয়া এবং ভারতীয়দের প্রতিশ্রুতি ও চুক্তি লঙ্ঘনের কবলে বাংলাদেশের টিকা কর্মসূচির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ আবারো চীনা সহায়তার দ্বারস্থ হয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম টিকা উৎপাদন কেন্দ্র সেরাম ইনস্টিটিউটের অ্যাস্ট্রাজেনকোর টিকার উপর ভর করে গর্বোদ্ধত দাতা নরেন্দ্র মোদি এখন করোনা মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়ে বিভিন্ন দেশের সহায়তার মুখাপেক্ষী হতে বাধ্য হচ্ছেন। সরকারের উপর ভারতের প্রভাব এবং স্বার্থান্বেষী মহলের প্ররোচনায় ভারতনির্ভর টিকা কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে নতুন সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সরকারকে এখন দ্রুততম সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে। বন্ধুত্ব, উন্নয়ন সহযোগিতা ও বাংলাদেশের সাথে কৌশলগত সম্পর্ক উন্নয়নের প্রশ্নে চীন সব সময়ই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এখানে বাংলাদেশের দোদুল্যমানতা, সিদ্ধান্তহীনতা এবং ভারতের সাথে অযাচিত সম্পর্কের ঘেরাটোপে আবদ্ধ হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ধারাবাহিকতা থেকে অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে।

বৈশ্বিক করোনা মহামারি মোকাবিলায় এই মুহূর্তে একমাত্র অবলম্বন হচ্ছে দ্রততম সময়ে করোনা টিকাদান কর্মসূচিকে সফল করে তোলা। মাত্র কয়েকটি দেশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান করোনা টিকা উৎপাদন ও বিতরণে নেতৃত্ব দিচ্ছে। টিকা উৎপাদনকারী দেশগুলো যদি স্বার্থপরতা ও একদেশদর্শী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তাহলে মহামারিতে বিশ্ববিপর্যয় অনিবার্য হয়ে উঠতে পারে। তবে ভারত ছাড়া অন্য দেশ ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে টিকা নিয়ে চুক্তিভঙ্গের এমন অনাকাক্সিক্ষত ভূমিকায় দেখা যায়নি। বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভসহ কানেক্টিভিটি ও উন্নয়ন অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে চীনের ভূমিকা কখনো আঞ্চলিক অংশিদারিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করেনি। রোহিঙ্গা সংকটের মতো আঞ্চলিক ইস্যুতে চীনের সদিচ্ছা এবং প্রভাব সমস্যা উত্তরণে বিকল্পহীন ভূমিকা রাখতে পারে। করোনা টিকাদান কর্মসূচিকে সফল করতে চীনের নেতৃত্বে ৬ জাতির আঞ্চলিক জোটে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ খুবই ইতিবাচক। গত মঙ্গলবার ৬টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ভার্চুয়াল বৈঠকের আলোচনা ও ঐকমত্য এ ক্ষেত্রে বড় অগ্রগতি বলে বিবেচনা করা যায়। চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এবারের বাংলাদেশ সফরের প্রেক্ষাপটে করোনা মোকাবেলা, প্রতিরক্ষা এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের মতো ইস্যুগুলোতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আর পিছন ফেরার কোনো সুযোগ নেই। ভারতের কথামালায় আস্থা রাখার দিন শেষ। তার পক্ষ নিয়ে সব হারানোর ঝুঁকি নেয়া যাবে না। করোনা টিকা উৎপাদন ও সরবরাহের ক্ষেত্রে চীন এবং রাশিয়ার সক্ষমতা প্রশ্নাতীত। ভারতের সাথে চুক্তি করে আগাম টাকা পরিশোধ করার পরও বাংলাদেশকে বঞ্চিত করার বাস্তবতা থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন পথে এগুতে হবে আমাদের। চুক্তি অনুসারে সময়মত সেরামের টিকা পাওয়া নিশ্চিত করার পাশাপাশি জরুরি ভিত্তিতে চীন ও রাশিয়ার টিকা পাওয়ার কূটনৈতিক তৎপরতা এবং যৌথ উদ্যোগে দেশেই টিকা উৎপাদনের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কালক্ষেপণের কোনো সুযোগ নেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Hasib ২৯ এপ্রিল, ২০২১, ৪:৪৯ এএম says : 0
ভারত নয় চিনের সাথেই বন্ধুত্ব করা উচিৎ।
Total Reply(0)
Kader sheikh ২৯ এপ্রিল, ২০২১, ৪:৫৪ এএম says : 0
চীন বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম পরাশক্তি। চীন বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগীও।
Total Reply(0)
Jaker ali ২৯ এপ্রিল, ২০২১, ৪:৫৮ এএম says : 0
চীন বাংলাদেশের উন্নয়নে বরাবরই অবদান রেখেছে। চীনের সঙ্গে আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্য সুদৃঢ় হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাই চীনের পররাষ্টমন্তীর সফর দেশের জন্য কল্যাণকর বার্তা নিয়ে এসেছে।
Total Reply(0)
Yusuf samin ২৯ এপ্রিল, ২০২১, ৪:৫৯ এএম says : 0
আমাদের ভিশন-২১ বাস্তবায়ন করতে হলে চীনের মতো প্রযুক্তিনির্ভর দেশ পাশে থাকা অনেক ভালো বিষয়। তাদের সঙ্গে আমাদের প্রযুক্তি ও অন্যান্য ব্যবসার দ্বার এখন আরো প্রশস্ত হবে বলেই মনে করি।
Total Reply(0)
Gias uddin ২৯ এপ্রিল, ২০২১, ৫:০২ এএম says : 0
রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও কৌশলগত অবস্থানের কারণে চীনকে এশিয়ার সুপার পাওয়ার বলা হয়। বাংলাদেশ তার আমদানির সবচেয়ে বড় অংশটি করে চীন থেকে। এ রকম একটি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরো ভালো হওয়া মানেই উন্নয়ন ত্বরান্বিত হওয়া
Total Reply(0)
MD Zabiullah ২৯ এপ্রিল, ২০২১, ৬:২৯ পিএম says : 0
এক দেশের উপর নির্ভরশীল না থেকে বহুমাত্রিক হতে হবে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন