মেরদন্ডের হাড় বা শরীরের যে কোন হাড়ের যদি ক্যালসিয়ামের ঘনত্ব বা বিএমডি (বোন মিনারেল ডেনসিটি) কমে যায়, তাকে হাড়ক্ষয় বা অস্টিওপোরোসিস বলে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে হাড়ের ক্ষয়ও বৃদ্ধি পায়। হাড়ের ক্ষয়রোগ মানুষের মধ্যে শতকরা ১২ জন পুরুষকে এবং শতকরা ৩০ জন মহিলাকে আক্রান্ত করে। ফলশ্রুতিতে মেরুদন্ডের হাড় ভেঙ্গে বসে যায় এবং মেরুদন্ড নড়বড়ে বা আনস্টেবল হয়ে পড়ে। এটাকে বলে কম্প্রেসিভ বা ওয়েজ ফ্রাকচার। হাড়ের ক্ষয়রোগ বা অস্টিওপোরোসিস হলে সাড়া শরীরের বিএমডি কমে যায়। ফলশ্রুতিতে উরুর হাড়ের নেক বা গলা ভেঙ্গে যায়। এর ফলে মানুষের এক পা খাট হয়ে যায়। দুই পা একসাথে করে শুয়ে থাকলে খাট পা সহজেই বুঝা যায়।
সাধারণত মেয়েদের মাসিক বন্ধ হওয়ার পর অস্টিওপোরোসিস হয়ে থাকে। কারণ এই সময় হাড়ে ক্যালসিয়ামের ঘনত্ব কমে যায়। তাছাড়া এসময় হাড়ের ক্ষয় দ্রুততম ভাবে বৃদ্ধি পায়। শরীরের হাড়ের ক্যালসিয়ামের পরিমাণ ২০-৪০ বৎসর বয়স পর্যন্ত বাড়তে থাকে। কিন্তু এর পরে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কমতে থাকে। মেয়েদের ক্ষেত্রে মাসিক বন্ধ হওয়ার পর ইস্ট্রোজেন নামক হরমোনের অভাব হয়। যার ফলে হাড়ে ক্যালসিয়াম ক্ষয় বেশী হয়। কারো ক্ষেত্রে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কমে যাওয়ার জন্য কিছু জিন দায়ী থাকে। হাড়ের বৃদ্ধির সময় নিয়মিত ব্যায়াম ও প্রচুর ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার খেলে শরীরের হাঁড় শক্ত থাকে। ধুমপান ও অতিরিক্ত মদ্যপান হাড়ের ক্যালসিয়াম ক্ষয়ের অন্যতম কারণ। বয়স্ক পুরুষের ক্ষেত্রে কর্টিসল ঔষধ খেলে ও টেস্টোস্টেরন নামক হরমোন শরীরে তৈরী কম হলে, হাড় ক্ষয় বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া খিঁচুনীর ঔষধ, হেপারিন, ঘুমের ঔষধ, অতিরিক্ত থাইরক্সিন, ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কমিয়ে ফেলে।
রোগের লক্ষণঃ
রোগীর মেরুদন্ডের হাড়ের ভিতর ছোট বা মাইক্রো ফ্রাকচার হয়। ফলে কোমড় ব্যাথ্যা, পা খাট হয়ে যাওয়া, সামনের দিকে মেরুদন্ড নুয়ে যাওয়া ইত্যাদি রোগ হতে পারে। মেরুদন্ড ভেঙ্গে গেলে রোগীর পা প্যারালাইসিস, পায়খানা, প্রস্রাব আটকে যাওয়া, সেক্স পাওয়ার কমে যাওয়া সহ নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
চিকিৎসা ঃ
কথায় বলে রোগ প্রতিরোধ রোগ চিকিৎসার চেয়ে উত্তম। এই রোগ প্রতিরোধ করতে হলে নিয়মিত ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। বিশেষ করে ছোট বেলায় প্রচুর খেলাধুলা ও দুধ, মাংস, ছোট মাছ প্রচুর পরিমাণ খেতে হবে। আর রোগ হয়ে গেলে ট্যাবলেট ক্যালসিয়াম ১৫০০ মিলিগ্রাম করে প্রতিদিন খেতে হবে, নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। হাড় ক্ষয় ডায়াগনসিস্ করার জন্য বিএমডি পরীক্ষা করতে হবে। যদি বিএমডি তে টি স্কোর <-২.৫ হয় তাহলে ঔষধ দিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। যেমন-এলেনড্রোনেট, রিজারডোনেট প্রতি সপ্তাহে ৩৫ মিলিগ্রাম করে দিতে হবে। তাছাড়া হরমোন থেরাপী দিতে হবে। মেরুদন্ডের হাড় ভেঙ্গে গেলে তা নিউরোসার্জনের সাহায্যে অপারেশন করতে হবে। তাছাড়া কোন কোন ক্ষেত্রে কাইফোপ্লাস্টি অপারেশন করতে হয়।
অধ্যাপক ডা: হারাধন দেবনাথ
অধ্যাপক, নিউরোসার্জারী বিভাগ,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ, ঢাকা।
ধানমন্ডি ল্যাবএইড হসপিটাল
মোবা: ০১৭১১৩৫৪১২০
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন