বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গুম, খুনের শিকার নেতাকর্মীদের পরিবারের কাছে আওয়ামী লীগকে জবাবদিহি করতে হবে। এ সরকারের নিপিড়ন নির্যাতন হিটলার বাহিনীকেও ছাড়িয়ে গেছে। বিএনপির পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী এ সরকারের আমলে গুম হয়েছেন।
গতকাল গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে গুম, খুনের শিকার দলীয় নেতাকর্মীদের পরিবারকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে অনুদান ও ঈদ উপহার দেওয়া হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে মোট ৬০১ জন গুম হয়েছে। বিচারবহির্ভ‚ত হত্যা হয়েছে ২ হাজার ৮০১ জনের। এর জবাব অবশ্যই আওয়ামী লীগকে দিতে হবে। তাদের এসব কর্মকান্ডের জবাব গুম হওয়া মানুষগুলোর পরিবার ও জাতির কাছে দিতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই ধরনের অনুষ্ঠান প্রতিবছর আমাদের আবেগ-আপ্লুত করে। আমরা যখন আমাদের সামনে এই পরিবারের সদস্যদের দেখতে পাই, যারা তাদের সন্তান, ভাই বা স্বামীর ছবি নিয়ে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিাত হন, এটা আমাদের ভারাক্রান্ত করে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব বিগত ছয়-সাত বছর ধরেই এই পরিবারগুলোকে চিহ্নিত করেছেন, তাদের তালিকা তৈরি করেছেন এবং আমাদের বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের সহযোগিতায় বিএনপি তাদের কাছে ঈদের আগে যৎসামান্য কিছু উপহার-সামগ্রী প্রদান করেছে। এর আগে প্রতিবছর খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপনাদের (গুম শিকার পরিবার) সঙ্গে ইফতার করেছি। আমরা জানি, আপনাদের যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ হওয়ার নয়।
তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণ করা। আমাদের যে অধিকার আছে, আওয়ামী লীগ সরকার সম্পূর্ণভাবে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে তা কেড়ে নিয়েছে। সেই শক্তিকে সরিয়ে আমরা সত্যিকার অর্থে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই।
মির্জা ফখরুল বলেন, জোর করে ক্ষমতায় থাকতেই এই সমস্ত কৌশল নিতে হয়। জনগণের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। যে কারণে জনবিচ্ছিন্ন এসব সরকারকে হত্যা, নির্যাতন, খুন ও গুম করে টিকে থাকতে হয়। এটা এখন নয়, বহু আগে থেকেই হয়ে আসছে।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য আজকের মতো কিশোর-তরুণদের হত্যা করে। জাসদের প্রায় ১৮ হাজার কিশোরকে হত্যা করা হয়েছে। সিরাজ শিকদারের মতো লোকদের পেছন থেকে হত্যা করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ মিডিয়া, সংসদ, নির্বাচন কমিশন তাদের মতো করে দখল করে নিয়েছে দাবি করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, এই দেশের ইতিহাস বলে একনায়কতন্ত্র, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করে মানুষ জয়লাভ করেছে। আমি, বিশ্বাস করি অবশ্যই আমরা এদের পরাজিত করতে সক্ষম হবো। আমাদের যারা হারিয়ে গেছে, মৃত্যুবরণ করেছে, গুম হয়েছে তাদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না।
খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি এখানে বসে আপনাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমার মনে আছে, আগে প্রতিবছর ইফতার সময়ও বিভিন্ন রেস্তোরায় গিয়েও আপনাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। আসুন আজকে আমরা তার সুস্থতার জন্য দোয়া করি। তিনি যেনো আবার আমাদের মাঝে ফিরে আসতে পারেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা প্রায় প্রত্যেক বছর আপনাদের সামনে যখন এভাবে উপস্থিত হই, নিজেদেরকে মাঝে মাঝে খুব অপরাধী মনে হয়। অপরাধী মনে হয় এজন্য যে- আমরা এখন পর্যন্ত অবস্থার পরিবর্তন করতে পারিনি। একটি ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট শক্তি আমাদের সব অর্জনগুলোকে ধ্বংস করে দিয়ে, মানুষের প্রতি মানুষের যে ভালবাসা ছিল সেটা নষ্ট করে দিয়ে, আমাদের স্বপ্নগুলোকে ভেঙে চুরমার করে দিয়ে একটা দানবীয় শক্তি হয়ে আমাদের ওপর তান্ডব নৃত্য করছে। এটাই বাস্তবতা।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি বিএনপির জন্য সংগ্রাম করছে না। আমরা সংগ্রাম করছি এদেশের মানুষের জন্য। আমাদের যে গণতন্ত্র হারিয়ে গেছে, সেটা ফিরিয়ে আনার জন্য। আমরা সংগ্রাম করছি আমাদের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য।
তিনি বলেন, আজ দেখুন দেশের কী অবস্থা। আজ আরেকটা দানবীয় শক্তি করোনাভাইরাস গোটা বিশ্বকে গ্রাস করেছে। এটা ছোটখাটো বিষয় নয়। মানুষ পথ খুঁজে পাচ্ছে না। বড় বড় বিজ্ঞানীরা চ‚ড়ান্তভাবে বলতে পারছে না, কোনটা সঠিক ভ্যাকসিন কোনটা না। আজকে এই সরকার কি করেছে? যেহেতু তাদের জনগণের কাছে জবাবদিহিতা নেই, যেহেতু তাদের কখনোই কোনো জবাব দিতে হয় না কারো কাছে, তারা গোটা কোভিডকে নিয়ে ব্যবসা করেছে। জনগণ হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ছুটে বেড়াচ্ছে একটা আইসিউ পায় না। দেড় বছর ধরে এই অবস্থা চলছে, তারা এদিকে লক্ষ্য রাখেনি। শুধু কী করে টাকা বানানো যাবে, কী করে লুটপাট আর দুর্নীতি করা যাবে তারা সেই কাজ করেছে।
তিনি বলেন, আজ চতুর্দিকে তাকিয়ে দেখবেন যে, সরকার বলতে কিছু নেই। প্রশাসন বলতে কিছু নেই। কোথাও কোনো জবাবদিহিতা নেই। আজকের পত্রিকায় দেখলাম- ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি তিন মাসের ছুটি নিয়ে আমেরিকা গেছেন। যখন দেশে এ ধরনের একটা ক্রাইসিস, যখন গরম ও কোভিডের মধ্যে মানুষের জীবন কাহিল অবস্থা, সেই সময়ে তিনি আমেরিকায় গিয়ে সেখান থেকে অফিস চালাবেন!
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন