শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

সরকারের সময়োচিত সিদ্ধান্ত

| প্রকাশের সময় : ৫ মে, ২০২১, ১২:০১ এএম

করোনা ভাইরাসের প্রথম ঢেউয়ে সন্ত্রস্ত-বিপর্যস্ত জাতি দেশব্যাপী লকডাউনের মধ্যেই গতবার ঈদুল ফিতর উদযাপন করেছিল। এমনকি ঈদগায়ে ঈদের জামাতও হয়নি। বছর ঘুরে আবারো আমরা ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে যাচ্ছি। এবারের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আগের চেয়ে অনেক বেশি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সেই সাথে যুক্ত হয়েছে প্রতিবেশি দেশ ভারতের মারাত্মক প্রাণঘাতী করোনাভারাইসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা। এহেন বাস্তবতাকে সামনে রেখে ইতিমধ্যে তিন দফায় বিধিনিষেধ বা নিয়ন্ত্রিত লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। গত সোমবার মন্ত্রীপরিষদের ভার্চুয়াল বৈঠকে বিধিনিষেধ ১৬ মে পর্যন্ত বর্ধিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে সীমিত আকারে শহরের বিপণী বিতান ও শপিংমলগুলো চালু রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। রফতানির স্বার্থে এমনিতে গার্মেন্ট কারখানাগুলো বিধি নিষেধের আওতার বাইরে রাখা হয়েছিল। দূরপাল্লা বা আন্ত:জেলা বাস ও ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকলেও ৬ মে থেকে জেলার আভ্যন্তরীণ বাস সার্ভিস চালুর অনুমতি দেয়া হয়েছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত যৌক্তিক এবং সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। আমরা এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই।

দেশের অর্থনীতি বাঁচাতে সরকার লকডাউন-বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল করতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু মানুষের জীবনের চেয়ে অর্থনীতি গুরুত্বপূর্ণ নয়। মানুষের জীবন আগে। তবে ঈদের সময়ও বিধিনিষেধ বলবৎ রাখা এবং দূরপাল্লার বাস-ট্রেন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত সময়ের নিরিখে সাধুবাদ যোগ্য। বেঁচে থাকলে ভবিষ্যতে ঈদের আনন্দ ভোগ করা যাবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে ব্যাপক সংখ্যক মানুষের দূরপাল্লার যাত্রা করোনার সংক্রমণ বাড়িয়ে বড় ধরনের বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে। গত কয়েক দিনে ভারত ফেরত বেশ কয়েক জন করোনা পজিটিভ রোগী শনাক্তের খবর পাওয়া গেছে। ভারত সীমান্ত বন্ধ থাকলেও ভারতীয় মালবাহী লরি ট্রাক কভার্ড ভ্যান প্রতিদিনই দেশে প্রবেশ করছে। এসব পরিবহনের চালক-হেল্পারদের মাধ্যমে যাতে কোনোভাবেই করোনার নতুন ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট দেশে আসতে না পারে সেদিকে সর্বোচ্চ কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করতে হবে। ভারত ফেরত যেসব রোগী ও মানুষ দেশে প্রবেশ করেছে তাদের প্রত্যেকের আইসোলেশন নিশ্চিত করতে হবে। পশ্চিমা অনেক দেশে এখনো বছরব্যাপী লকডাউন চলছে। তাদের মত অর্থনৈতিক সামর্থ্য আমাদের না থাকলেও প্রাণঘাতী মহামারীর ঝুঁকি নিয়ে অর্থনীতি চাঙ্গা রাখার ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে ত্বরিৎ যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সব প্রস্তুতি থাকতে হবে। জেলায় সীমিত আকারে গণপরিবহণ পরিচালনা করার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলার বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করা অপরিহার্য।

ভারতের ভয়াবহ করোনা সংক্রমণের ধাক্কা বাংলাদেশেও আসতে পারে বলে বিশেষজ্ঞ আগাম সতর্ক বার্তা দিয়েছেন। ইতিমধ্যে এই ভ্যারিয়েন্ট অন্তত ১৭টি দেশে ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেলেও বাংলাদেশ এখনো নিরাপদ রয়েছে। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্রের বরাতে গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, ভারতীয় স্ট্রেইন বাংলাদেশে এসেছে কিনা ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের পর তা বলা যাবে। অর্থাৎ আশঙ্কা এবং অনিশ্চয়তা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। এ প্রেক্ষিতে, আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিকল্প নেই। আমরা মনে করি, সরকার এ ব্যাপারে সতর্ক ও সচেতন অবস্থানে রয়েছে। ঈদে ঘরমুখো লাখ লাখ মানুষের যাত্রা যে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি করবে, তাতে সন্দেহ নেই। এ অবস্থায় দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত যৌক্তিক। এমনিতেই সীমিত লাকডাউনে মানুষের ব্যাপক জনসমাগম হচ্ছে। লকডাউন না থাকলে বা দূরপাল্লার পরিবহন চালু করলে অবস্থা ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। সীমিত লকডাউনের সুফল ইতোমধ্যে পাওয়া গেছে। সংক্রমণ ও মৃত্যু হার কমেছে। এ মুহূর্তে ঈদকে কেন্দ্র করে লকডাউন শিথিল করা হলে করোনা নিয়ন্ত্রণের সব প্রচেষ্টা ভেস্তে যাবে। সচেতন মহল মনে করছে, সরকার সব শঙ্কা মাথায় নিয়েই লকডাউনের সময়সীমা বৃদ্ধি এবং দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ রাখার সময়োচিত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমনিতেই দূরপাল্লার বাসযাত্রা বন্ধ থাকায় মহাসড়কে মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকারসহ সিএনজি অটোরিক্সায় যাত্রি পরিবহণের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। অহরহ দুর্ঘটনাও ঘটছে। যাই হোক, করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকারের নেয়া পদক্ষেপ নিশ্চয়ই সুফল বয়ে আনবে। তবে এক্ষেত্রে গণপরিবহণ শ্রমিকসহ কর্মহীন মানুষের খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। গণপরিবহন সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে। সরকার ইতিমধ্যে ৩৫লাখ পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা সহায়তা দিয়েছে। এর পরিধি আরো বাড়াতে হবে। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ও কর্মহীন মানুষের অস্তিত্বের সংকট লাঘবে সংশ্লিষ্ট নিয়োগদাতা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে মানবিক দায়িত্ব পালন করতে হবে। সীমিত আকারে গণপরিবহণ চালুর উদ্যোগ যেন স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন এবং করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণ হয়ে না দাঁড়ায় সে দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Md. Abdul Khaleque ৫ মে, ২০২১, ৫:২৯ পিএম says : 0
ভাল লেখা। কিন্তু করোনা কি শুধু মসজিদ আর ঈদ মাঠে। করোনা ভাইরাস বাজার, মন্ধির, গির্জা, শুটিং, লী মিছিল-মিটিং, অনুষ্ঠান ভয়ে যায় না, তাই না। যত চালাকি -ই করেন না কেন ইসলামি সংস্কৃতি মুছে ফেলা যাবে না
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন