শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাছ কেটে রেস্টুরেন্ট!

গাছ কাটা নিয়ে বিভ্রান্তি : মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি সবুজ ধ্বংস করছে গণপূর্ত অধিদফতরের কর্মকর্তারা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ মে, ২০২১, ১২:০৪ এএম

সবুজ ধ্বংস করে রাজধানীতে গড়ে উঠছে কংক্রিটের জঞ্জাল। সবুজে ঘেরা পাখ-পাখালির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত এ উদ্যানে নগরবাসীর কাটে স্বস্তির সময়। অথচ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রকৃতির রূপ ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে খোদ সরকারি প্রতিষ্ঠান! রেস্টুরেন্ট বানানোর নামে উদ্যানের অর্ধ-শতাব্দীর শতাধিক পুরনো গাছ কেটে উজাড় করছে গণপূর্ত অধিদফতর। এদিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শতাধিক গাছ কেটে রেস্টুরেন্ট নির্মাণ করা হচ্ছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সম্প্রতি সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পরে টনক নড়ে পড়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের।

নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ কাটায় মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে রাজধানীর পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। উদ্যানের বুকে যেখানে ছিল সবুজের গালিচা সেখানে এখন রুক্ষ ক্ষত। রাজধানীর ফুসফুস সোহরাওয়ার্দী উদ্যান আক্রান্ত ক্যান্সারে। এবার তার শিকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানও। উদ্যানে নির্মাণ করা হচ্ছে সাতটি রেস্টুরেন্ট তাই কাটা পড়ছে পুরনো গগণ শিরিষ, সেগুন গাছের মতো শত শত প্রাচীন গাছ। প্রতিদিনই বাড়ছে কাটা গাছের সংখ্যা। আবার কোথাও ওয়াকওয়ে নির্মাণের জন্য মাটিকেটে রাখা হয়েছে।
এদিকে নতুন করে আনো অনেক গাছের গায়ে ‘লাল চিহ্ন’ দেয়া হয়েছে। যেগুলোও কাটা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে রাতের আঁধারেও গাছ কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। যার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হয়নি। এতকিছুর পরও গাছ কাটা বন্ধ করেনি গণপূর্ত অধিদফতর।

গাছের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সেজন্য স্বাধীনতা জাদুঘরও নির্মাণ করা হয়েছে উদ্যানের মাটির নিচে। তাই এ সামান্য রেস্টুরেন্ট বানাতে নির্দয়ভাবে গাছ কাটা মেনে নিতে পারেননি নগরবাসী। এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব হাবিবুল ইসলামের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

জানা গেছে, ঢাকাস্থ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (৩য় পর্যায়) শীর্ষক মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে বর্তমানে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্মাণকাজ যেমন পাকিস্তানি শাসনবিরোধী ২৩ বছরের মুক্তিসংগ্রাম ও ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্বলিত ভাস্কর্য স্থাপন, ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের স্থানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থানে ভাস্কর্য স্থাপন, ইন্দিরা মঞ্চ নির্মাণ, ওয়াটার বডি ও ফাউন্টেইন নির্মাণ, ভ‚গর্ভস্থ ৫০০ গাড়ির কার পার্কিং ও শিশুপার্ক নির্মাণসহ বিভিন্ন নির্মাণকাজ চলমান। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সবগুলো প্রবেশপথসহ বিভিন্ন স্থানে অন্তত ৭টি রেস্টুরেন্ট স্থাপন করার কাজ শুরু করেছে গণপূর্ত বিভাগ। তাদের দাবি, এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদনও রয়েছে। এ বিষয়ে গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী শামিম আখতার জানান, নিয়ম মেনেই গাছ কাটছেন তারা। নিয়মানুযায়ী নগরে ২৫ ভাগ বনভ‚মি থাকতে হবে।

রাজধানীতে ২৫ ভাগ বনভূমি নেই উল্লেখ করে নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব ইনকিলাবকে বলেন, সবুজ ধ্বংস করে রেস্টুরেন্ট বানানো ভয়াবহ অপরাধ। এর বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিয়মিত আড্ডা দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গাছ কাটার প্রতিবাদে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আয়োজন করে শিল্প প্রদর্শনীর। এসময় ক্ষোভ প্রকাশ করে এক শিক্ষার্থী জানান, ইতিহাসের সাক্ষী সবুজের সমারোহ গাছ-গাছালির ছায়াঢাকা পাখিডাকা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। দেশের নতুন প্রজন্ম, পরবর্তী প্রজন্ম বংশপরম্পরায় শত শত বছর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান দেখবে এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বকে স্মরণ করবে। রুমন নামে এক পথ কিশোর বলেন, গাছগুলো থাকলে আমাদের মাথার উপর ছাদ থাকে। মঙ্গলবার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অযথা রেস্টুরেন্ট নির্মাণ ও নির্বিচারে গাছ নিধন বন্ধ করাসহ ৬ দফা সুপারিশ জানিয়েছে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)। সুপারিশে বলা হয় হয়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পরিবেশ, তত্ত্বাবধান, সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা, দৈনন্দিন পরিচালনা বিশ্বমানের করতে হবে। রমনা গ্রিন ধরে রাখতে হবে। উদ্যানের স্থান ও পরিবেশ সংরক্ষণ করতে একটি উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দিতে হবে।

উদ্যানে রেস্তোরাঁ, ওয়াকওয়ে কিংবা এ জাতীয় উন্নয়ন কর্মকান্ডের পরিকল্পনা বিস্ততভাবে অবিলম্বে জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে এবং উদ্যানসহ সব ঐতিহাসিক স্থাপনা বা এলাকার উন্নয়নের জন্য নগর পরিকল্পক, স্থপতি, শিল্পী, ইতিহাসবিদ, উদ্যানবিদ, প্রকৌশলী, শিক্ষক, পরিবেশবিদ ও কবি-সাহিত্যিক সব স্টোকহোল্ডারদের সমন্বয়ে একটি কমিটি করতে হবে। যারা পরিকল্পনা থেকে শুরু করে উন্নয়ন কাজগুলো পর্যবেক্ষণ করবেন ও প্রয়োজনীয় মতামত দেবেন।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাছ কাটা নিয়ে গণমাধ্যমে খন্ডিত তথ্য প্রচারিত হওয়ায় অনেকের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। একই সঙ্গে মন্ত্রণালয়টি জানিয়েছে, মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কিছু গাছ কাটা হলেও প্রায় এক হাজার গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিবৃতি মন্ত্রণালয় বলেছে, বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনে বিভিন্ন সময়ের আন্দোলন ও ঘটনাসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরার উদ্দেশ্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইতোমধ্যে শিখা চিরন্তন, স্বাধীনতা স্তম্ভ ও ভ‚গর্ভস্থ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মাণ করা হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণ, আধুনিক নগর উপযোগী সবুজের আবহে আন্তর্জাতিক মানে গড়ে তোলা ও দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে ঢাকাস্থ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (৩য় পর্যায়)’ শীর্ষক মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন