বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

পুরনো সেই যানজট

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ মে, ২০২১, ১২:০৩ এএম

করোনাভাইরাস মহামারির বিস্তার ঠেকাতে চলমান লকডাউনের সময় বাড়লেও রাজধানীসহ সারা দেশের মার্কেট খোলার পর গতকাল গণপরিবহন চালু হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্তে গণপরিবহন চালুর প্রথম দিনে রাজধানীর সড়কে বাসের সংখ্যা খুব বেশি দেখা না গেলেও ব্যক্তিগত পরিবহনসহ অন্যান্য যানবাহনের সঙ্গে গণপরিহন যোগ হওয়ায় দেখা মিলেছে নিত্যকার যানজটের। রাজধানী প্রবেশের পথ যাত্রবাড়ী, গাবতলী, আবদুল্লাহপুর, বাবুবাজার ব্রিজ প্রতিটি সড়কে যানজট লেগে যায়। এমনকি রাজধানীর ভেতরের রাস্তাগুলোতে পুরোনো সেই যানজটের চেহারা ফিরে এসেছে।
মহামারি ঠেকাতে ‘সর্বাত্মক লকডাউনে’ টানা ২২ দিন বন্ধ থাকার পর গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকাসহ ও জেলার মধ্যে গণপরিবহন চলাচল শুরু হয়েছে। এ সব গণপরিবহন নিজ নিজ জেলার মধ্যে চলতে পারলেও এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যেতে পারবে না। সকারে চিটাগাং রোড থেকে গুলিস্তানগামী বাসগুলোতে যাত্রীদের মুখে মাস্ক দেখা গেছে। অধিকাংশ বাস দুই সিটে এক যাত্রী বহন করছে। মহাসড়কে মানুষের সংখ্যাও দেখা গেছে কম। তবে ভাড়া ইচ্ছে মতো আদায় করায় যাত্রীদের সঙ্গে হেলপার-কন্ট্রাকটর ও ড্রাইভারদের ঝগড়া বিবাদ করতে দেখা গেছে।
রাজধানীর গুলিস্তান থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করা বাসগুলোতে যাত্রী সংখ্যা ছিল কম। এখান থেকে ছেড়ে যাওয়া বাসগুলোতে চালক, হেলপার এবং যাত্রীদের মুখে মাস্ক দেখা গেছে। মোহাম্মদপুর টু চিটাগাং রুটের রজনীগন্ধা পরিবহন বাসের চালক আবদুল্লাহ হিল বাকি বলেন, ‘এখন যাত্রী কম। আমাগো মাস্ক ছাড়া মানুষ উডাইতে মানা করছে। আমরা উডাইতেছি না। সেনিটাইজারও রাখছি।’ দীপন পরিবহনের চালক মোশারফ বলেন, ‘লকডাউনের কারণে আমাদের পরিবার নিয়ে চলতে অনেক সমস্যা হচ্ছিল। এখন আমরা বাস চালানোর সুযোগ পেয়েছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা যাত্রী পরিবহন করছি এবং করব।’ তবে অধিকাংশ বাসের হ্যান্ড-স্যানিটাইজার দেখা যায়নি।
স্বাস্থ্যবিধি মানা তথা সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ীÑ দুইসিটে একজন করে যাত্রী বসা দেখা গেছে, দেখা দেখা বেশ কয়েকটি বাসে। সকাল থেকে যাত্রীর চাপ কিছুটা কম থাকায় পরিবহনের চালক ও হেলপাররা অতিরিক্ত যাত্রী ওঠানোর সুযোগ পাচ্ছেন না। তবে অনেক পরিবহনে অর্ধেক দুই সিটে একজন যাত্রী, আবার অর্ধেক দুই সিটে দুজন যাত্রী বহন করতে দেখা গেছে।
গণপরিবহন চালুর প্রথম দিনে চিটাগাং রোড টু বাইপাইল মৌমিতা, ঠিকানা পরিবহন, দেওয়ান পরিবহন ও ভিআইপি পরিবহনসহ কয়েকটি বাস সকাল থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে। দেওয়ান পরিবহনের চালক আলাউদ্দিন বলেন, ‘যাত্রী অনেক কম। হয়তো বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রী পাব। তবে অর্ধেকের বেশি আসনে আমরা যাত্রী উঠাচ্ছি না এবং স্বাস্থ্যবিধি মানছি।
চিটাগাং টু গুলিস্তান রুটে সবচেয়ে বেশি বাস শ্রাবণ নামে। এসব বাসে কোনোটিতে দুই সিটে একজন কোনোটিতে দুজন করে যাত্রী বহন করা হয়। প্রতিটি বাসে বেশি ভাড়া নেয়ায় যাত্রীদের সঙ্গে কন্টাক্টরের তর্কাতর্কি হয়েছে। শনির আখড়া ও কাজলায় দেড় ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে এ চিত্র দেখা গেছে। যাত্রীদের অভিযোগ চিটাগাং থেকে গুলিস্তান যে ভাড়া নেয়া হচ্ছে শনির আখড়া থেকে সে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। সাইন বোর্ড থেকে যে ভাড়া নেয়া হচ্ছেÑ শনির আখড়া থেকে একই ভাড়া নেয়া হচ্ছে। নিরুপায় হয়ে যাত্রীরা দ্বিগুণ তিনগুণ বেশি ভাড়া দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে শ্রাবণ বাসের ড্রাইভার সুজন বলেন, ‘দীর্ঘদিন বাস বন্ধ। রাস্তায় পুলিশ বেশি টাকা আদায় করছে। তাই যাত্রীদের কাছ থেকে কিছু বেশি টাকা নেয়া হচ্ছে।
রায়েরবাগ থেকে গুলিস্তান যাচ্ছেন অলিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘ভাড়া বেশি নিলেও বাস চলাচল শুরু হওয়ায় আমাদের জন্য ভালোই হয়েছে। কিন্তু সামাজিক দূরত্ব বিধি কতক্ষণ এরা মানবে সেটা নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে।’
যাত্রী কম থাকায় আসন সংখ্যার অর্ধেক যাত্রী দেখা যাচ্ছে বলে মনে করেনÑ হিমালয় পরিবহনের মতিঝিলগামী মো. আলতাব হোসেন কাজল। তিনি বলেন, ‘এখন মানুষ কম সেজন্যই হয়তো বাসে ফাঁকা ফাঁকা বসানো হচ্ছে। যাত্রী বাড়লে বাসের লোক নিয়ম মানবে বলে মনে হয় না। তবে ভাড়া নেয়া হচ্ছে ইচ্ছামতো।
লকডাউনের মধ্যে ২২ দিন বন্ধ থাকার পর গণপরিবহন চালুর পাশাপাশি প্রাইভেট কার, ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান, সিএনজি ও রিকশার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় গতকাল ৯টার দিকে রাজধানীর কাকরাইল, মালিবাগ, মৌচাক, রামপুরা, গুলশান সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়। রামপুরা রোডেও থেমে থেমে যানজট দেখা গেছে। গুলিস্তান থেকে গুলশানে যাওয়া একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘আমি জানতাম আজকে গণপরিবহন নামবে। সেজন্য সকাল সকালে বেরিয়েছি বাসা থেকে। কিন্তু যে অবস্থা দেখলাম পথে পথে যানজট। আমার গুলশানে আসতেই পাক্কা এক ঘণ্টা ১০ মিনিট সময় লেগেছে।’
যাত্রাবাড়ীর সিএনজি চালক মো. শামসু মিয়া বলেন, ‘লকডাউনের মধ্যে গত কয়েকদিন থেকেই রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ি বেশি। এখন সিটি সার্ভিস নামায় আমরা খুব বেকাদায় পড়েছি। মহাখালী থেকে গুলিস্তানে একজন যাত্রীকে নিয়ে গেছি দেড় ঘণ্টায়।’
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ ঠেকাতে গত ৫ এপ্রিল থেকে ‘লকডাউন’ ঘোষণা করে বিধিনিষেধ জারি করা হয়। ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হয় ‘সর্বাত্মক লকডাউন’। বন্ধ করা হয় সড়ক, নৌ ও রেলপথে যাত্রী পরিবহন। ২৫ এপ্রিল দোকান-পাট, শপিংমল ও বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালু করা হয়। এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে গণপরিবহন চালুর দাবিতে সারা দেশে বিক্ষোভ করেন সড়ক পরিবহন শ্রমিকরা।
পরে পাঁচটি নির্দেশনা দিয়ে বৃহস্পতিবার থেকে মহানগর ও জেলায় গণপরিবহন চলাচলের অনুমোদন দিয়ে প্রজ্ঞাপন দেয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ- বিআরটিএ। নির্দেশনায় বলা হয়, আন্তঃজেলা গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। কোনোভাবেই মোট আসনের অর্ধেকের বেশি যাত্রী নেওয়া যাবে না। সমন্বয় করে ৬০ শতাংশ বাড়ানো ভাড়ার বেশি আদায় করা যাবে না।
যাত্রার শুরু ও শেষে জীবাণুনাশক দিয়ে গাড়ি জীবাণুমুক্ত করতে হবে। চালক, অন্যান্য শ্রমিক, কর্মচারী ও যাত্রীদের মাস্ক পরা এবং হ্যান্ড-স্যানিটাইজার ব্যবহার নিশ্চিত করার নির্দেশও দেওয়া হয় প্রজ্ঞাপনে।
কিন্তু গণপরিবহন চালুর প্রথম দিনই রাজধানী ঢাকায় ফিরে এসেছে পূর্বের চেহারা যানজট।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন